বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে কক্সবাজারে ২০ হাজারেরও বেশি কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিপুল পরিমাণ গাছপালা ভেঙে পড়েছে। অন্তত তিনজনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, রামু, উখিয়া ও টেকনাফে বাড়িঘর বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও সেন্টমার্টিনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলক বেশি। কক্সবাজারের ডিসি মোহাম্মদ আলী হোসেন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ঘূর্ণিঝড়ের সময় সাগরে থাকা সাতটি ট্রলারের ২১ জন জেলে নিখোঁজ রয়েছেন বলেও জানা গেছে।
কক্সবাজার জেলায় নিহত তিনজনের মধ্যে চকরিয়ায় গাছ চাপায় দুই জন এবং কক্সবাজার পৌর শহরের ২নং ওয়ার্ডে স্ট্রোক করে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। চকরিয়া থানার ওসি বখতিয়ার আহমদ জানান, চকরিয়ায় গাছচাপা পড়ে রহমত উল্লাহ (৫০) ও সায়রা খাতুন (৫৫) নামের দু’জনের মৃত্যু হয়। রহমত উল্লাহ ডুলাহাজারা পূর্বজুমখালী এলাকার আব্দুল জব্বারের ছেলে এবং সায়রা খাতুন বড় ভেওলা ইউনিয়নের সিকদার পাড়া এলাকার মৃত নুরুল আলমের স্ত্রী। রাতে বাতাসে গাছ ভেঙে বাড়িতে চাপা পড়লে এই দু’জনের মৃত্য হয়। এছাড়া পৃথক ঘটনায় ১০ জন আহতাবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তাদের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
অন্যদিকে কক্সবাজার পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে এসে ঘূর্ণিঝড়ের ভয়ে স্ট্রোক করে মরিয়ম বেগম (৪৫) নামের এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি নুনিয়ারছড়া এলাকার বদিউল আলমের স্ত্রী। কক্সবাজার পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী জানিয়েছেন, আগে থেকেই শারীরিকভাবে দুর্বল ছিলেন ওই নারী। রাতে বাতাস শুরু হলে ভয়ে হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে ওই নারীর মৃত্যু হয়।
ঘূর্ণিঝড় মোরা’র প্রভাবে সাগর এখনও উত্তাল রয়েছে। তবে জেলার আবহাওয়া স্বাভাবিক হয়ে উঠছে। এ কারণে কক্সবাজারের ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেওয়া দেড় লক্ষাধিক মানুষ ঘরে ফিরতে শুরু করেছে।
সেন্টমার্টিনের ইউপি চেয়ারম্যান নুর আহমদ জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। দ্বীপের অধিকাংশ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করলেও তাদের ঘরবাড়ি উপড়ে গেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ শতাংশ ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান নুর হোসেন জানিয়েছেন, সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীর দ্বীপ গ্রামে কাঁচা ঘরবাড়ি ও গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত এসব মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছে।
এদিকে, কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিরর আকতার কামাল জানিয়েছেন, সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনার ডেইল ও নাজিরারটেক এলাকা ক্ষয়ক্ষতির মরিমাণ একটু বেশি হয়েছে।.
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র আঘাতে জেলায় কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সেই বিবরণ এখনও হাতে আসেনি। তবে টেকনাফ উপজেলার সেন্টমার্টিন, সাবরাং ও শাহপরীরদ্বীপ, মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতারবাড়ি ও পেকুয়ার উজানটিয়া ও কুতুবদিয়া উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকায় কাঁচাঘর বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এসব এলাকায় গাছপালা উপড়ে পড়ে বিভিন্ন এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ একেএম নাজমুল হক জানান, ভোর ৫টার থেকে সকাল সোয়া ৮টার দিকে ঘূর্ণিঝড় মোরা কক্সবাজার অতিক্রম করে। এসময় টেকনাফে সর্বোচ্চ বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘন্টায় ১১০ কিলোমিটার, সেন্টমার্টিনে ১১৪ কিলোমিটার ও কক্সবাজার শহরে ৭৫ কিলোমিটার।
পাঠকের মতামত: