ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে বেপরোয়া ছিনতাইকারী চক্র

রাসেল চৌধুরী, কক্সবাজার :: কক্সবাজারে বেপরোয়া হয়ে উঠছে ছিনতাইকারী চক্র। প্রতিদিনই শহরজুড়ে ঘটছে একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা। বেপরোয়া ছিনতাইকারীরা কখনো মোটরসাইকেল, কখনো টমটম আবার কখনো সিএনজি নিয়ে পথচারী ও যাত্রীসহ পর্যটকদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকারসহ আনুষঙ্গিক জিনিস। আর বাধা পেলেই হিংস্র হয়ে উঠছে তারা। তবে পুলিশ বলছে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সাধ্যমতো চেষ্টা করা হচ্ছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে কক্সবাজারের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যে ভয়াবহ অবনতি ঘটেছে, নিকট অতীতে তা কখনও হয়নি। ইতিপূর্বে পর্যটন শহরের ঝাউবিথী ও নির্জন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে মাঝে-মধ্যে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতো। কিন্তু সম্প্রতি তা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে শ’ শ’ মানুষের সামনেই পর্যটকদের সর্বস্ব ছিনিয়ে নিচ্ছে। এমনকি সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ব্যস্ততম ঝিনুক মার্কেটে হাজার হাজার পর্যটকের মধ্যেই প্রকাশ্যে পর্যটকের স্বর্ণের চেইন, মোবাইল, ব্যাগসহ মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে। হোটেল-মোটেল জোন ও পর্যটন স্পটগুলোতে অপরাধ কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় পর্যটন ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলেও জানান তারা।
জানা গেছে, কক্সবাজার শহর ও পর্যটন এলাকার প্রায় ১৫টি স্পটে প্রতিনিয়ত ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে পর্যটকসহ স্থানীয়রা। ওই স্পটগুলো হচ্ছে- হিমছড়ি, ইনানী, সৈকতের সী-ইন পয়েন্ট, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, সার্কিট হাউস সংলগ্ন বাহারছড়ার গোলচত্বর, বার্মিজ মার্কেট, বৌদ্ধমন্দির এলাকা, বিজিবি ক্যাম্পের নারিকেল বাগান, প্রধান সড়কস্থ সাবমেরিন ক্যাবল এলাকা, সিটি কলেজের সামনে প্রমুখ। গত এক মাসে ৩০টিরও বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে এসব স্থানে। লোকজন প্রায়শ ছিনতাইয়ের শিকার হলেও এতোদিন তা প্রকাশ্যে আসেনি। তবে গত শুক্রবার ও শনিবার বাহারছড়ার গোলচত্বরে ঘটে যাওয়া দুই ছিনতাইয়ের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। গত ৪ঠা জানুয়ারি বিকালে ২ পর্যটককে রগ কেটে সর্বস্ব লুট করে নিয়েছে ছিনতাইকারীরা। শহরের ভিআইপি রোড হিসাবে পরিচিত সার্কিট হাউজের শহীদ স্মরণী রোডে এ ঘটনা ঘটে। এঘটনায় ইমরুল হাসান (২২) ও মুরাদ (২২) নামে ২ জন পর্যটক আহত হয়েছে। ছিনতাইয়ের শিকার আহত ইমরুল বলেন, টমটমযোগে সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাদের টমটম (ইজিবাইক) কক্সবাজার শহরের সার্কিট হাউজ এলাকায় পৌঁছলে ৪-৫ জনের একটি ছিনতাইকারি দল তাদের গতিরোধ করে। একপর্যায়ে তাদেরকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে এবং হাত ও পায়ের রগ কেটে দিয়ে সর্বস্ব ছিনিয়ে নেয়। পরে তাদের চিৎকারে পাশের লোকজন এগিয়ে এসে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। এদিকে গত শুক্রবার রাতে বাহারছড়া গোল চত্বর মাঠের পাশে দুর্ধর্ষ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার রাত ৯টার দিকে বাণিজ্য মেলার উল্টোদিকে আরআরআরসি অফিস সংলগ্ন গলিতে কয়েকজন পর্যটক ছিনতাইয়ের শিকার হন। কক্সবাজার হ-১১-৪৮৫০ নম্বরের একটি মোটরসাইকেলে তিন ছিনতাইকারী পর্যটকের উপর হামলা করে। ভুক্তোভোগী পর্যটক ছিনতাইকারীদের মোটরসাইকেলের পিছু ধাওয়া করে। এসময় স্থানীয়রা মোটরসাইকেলসহ একজন ছিনতাইকারীকে আটক করে পুলিশে দেয়।
ওইরাতে ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক কলাতলীর আবদুল্লাহ মিঠুনকে আটক করে পুলিশ। আবদুল্লাহ মিঠুন স্থানীয় যুবলীগ নেতা বলে জানা গেছে। রাতেই তাকে ছাড়িয়ে নিতে যুবলীগে শীর্ষ নেতারা জোর তদবির করেন। এদিকে গত ৩১শে ডিসেম্বর মধ্যরাতে রেজিস্ট্রি অফিস সংলগ্ন রাস্তায় ছিনতাইকারীদের আক্রমণের শিকার হন সাবেক ছাত্র ইউনিয়ন নেতা গিয়াস উদ্দিন। ১৪ই ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে সমুদ্র সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে হেঁটে বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্ট দিয়ে ওঠার সময়, মাঝামাঝি স্থানে ছিনতাইকারী দলের কবলে পড়েন নতুন বাহারছড়ার আবুল কালাম আজাদ। পরে বিষয়টি নিয়ে থানায় মামলা করতে চাইলে, দায়িত্বরত কর্মকর্তা টাকা ও মোবাইল উদ্ধার করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে হারানো ডায়েরি করার পরামর্শ দেয় তাকে।
এদিকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ তৎপর রয়েছে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছৈয়দ আবু মো. শাহাজান কবির। তিনি বলেন, ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। কক্সবাজার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, পুলিশের সদস্যরা ছিনতাইয়ের ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই মাঠে কাজ করছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা সম্ভব হবে। সুত্র’ মানবজমিন

পাঠকের মতামত: