ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে বার্মিজ লেখা প্যাকেটে ভেজাল ও নিম্নমানের আচারে প্রতারিত পর্যটক

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

খাওয়ার অযোগ্য পচা বরই, মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর ক্যামিকেল, গুড়, চিনি, রং ও বিভিন্ন ক্ষতিকর উপকরণ দিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী করা হয় ভেজাল আচার। এরপর ওই আচার বার্মিজ ভাষায় লেখা ভুয়া প্যাকেট ও স্টিকার দিয়ে প্যাকেট করে বাজারজাত করা হয়। এমনকি সেখানে ক্ষেত্রবিশেষে ব্যবহার করা হয় ভুয়া বিএসটিআই নম্বারও। এভাবে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর উপকরণ মিশিয়ে এবং সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ভেজাল আচার বাজারজাত করা হচ্ছে পর্যটন শহর কক্সবাজারজুড়ে। এসব ভেজাল আচার খেয়ে অসুস্থ ও প্রতারিত হচ্ছে পর্যটকরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নাজিম ও রহিম নামের দুই ভেজাল আচার ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে কক্সবাজার শহর ও আশ–পাশে গড়ে উঠেছে ২০ টি ভেজাল আচার তৈরীর কারখানা। এসব কারখানা থেকে প্রতিদিন পর্যটন শহর কক্সবাজারজুড়ে ছোট–বড় দুই শতাধিক আচারের দোকানে ভেজাল আচার সরবরাহ করা হয়। আর অবৈধ কারখানা নির্বিঘœ রাখতে নাজিম ও রহিম প্রতি মাসে তিন লাখ টাকা বিতরণ করেন আইনশৃংখলা বাহিনী, সাংবাদিক ও স্থানীয় সন্ত্রাসী দলের কতিপয় সদস্যদের মাঝে। যার কারণে গত ২/১ বছর ধরে ভেজাল আচার কারখানার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কোন অভিযান নেই বলে মনে করেন সচেতন মহল। এ প্রসঙ্গে কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কক্সবাজার জেলা সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, ‘ভেজালের বিরুদ্ধে সবাইকে সোচ্চার হতে হবে। সচেতনতাও বাড়াতে হবে। আর

ভেজাল আচার তৈরী ও বাজারজাতকারীদের আইনের আওতায় আনতে প্রশাসনকেও উদ্যোগ নিতে হবে। তিনি আরও বলেন, কক্সবাজার শহরে অতীতে ভেজাল আচার কারখানায় একাধিকবার অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত সাজা ও জরিমানা আদায় করেছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাও হয়েছে বেশ কয়েকজন ভেজাল আচার ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। কিন্তু দু’ এক বছর ধরে অভিযান বন্ধ থাকায় যেমন জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি করেছে, তেমনি ভেজাল আচার ব্যবসায়ীরা উৎসাহিত হচ্ছে।
ভেজাল আচার প্রসঙ্গে কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. মো. আব্দুস সালাম বলেন, ভেজাল আচার স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। আচার তৈরি হওয়ার পরে সেখানে পোকা হয়ে যায়। যা খালি চোখে দেখা যায় না। এ কারণে অনেকের এলার্জি, পাতলা পায়খানাও হয়। এছাড়া আরো নানা উপসর্গ দেখা দেয়।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, কক্সবাজার শহর ও শহরতলিতে রয়েছে অন্তত ২০টি ভেজাল আচার তৈরির কারখানা। এসব কারখানা এখন পুরোদমে চলছে। এরমধ্যে শহরের বাহারছড়ায় আমিন, জাহাঙ্গীর, বিজিবি ক্যাম্পের রেজাউল করিম, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পশ্চিমে নোঙ্গর মাদকাসক্ত কেন্দ্রের পাশে ইসলামাবাদ এলাকায় রহিম ও ইউনুচ, লারপাড়ায় নুরুল আজিম, মো. ফরহাদ, বাসটার্মিনালের দক্ষিণ পাশে নেজাম উদ্দিন, ঝিলংজার দক্ষিণ ডিককুলে মো. পুতু, শহরের বন্দরপাড়ায় (সমিতিপাড়া) ‘বাটপার’ জসিম উদ্দিন, কলাতলী ( গৈয়ামতলি) এলাকায় নুরুল আলম, খুরুস্কুলে হাফেজ, ছুরত আলম, বার্মিজ মার্কেট এলাকায় শরীফ, লাইট হাউজ এলাকায় বশর অন্যতম।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, শহরে ভেজাল আচারের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে আজিম, রহিম, নেজাম ও নাজিমের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট। এই চারজনের মালিকানাধীন রয়েছে অন্তত এক ডজন ভেজাল আচারের কারখানা। এর বাইরে বিভিন্ন জনের মালিকানাধীন আরো ১০টি কারখানাও নিয়ন্ত্রণ করে এই চার জনের সিন্ডিকেট। এরমধ্যে আজিম, রহিম, নাজিম ও নেজামের ৬টি কারখানা রয়েছে বাসটার্মিনালের আশ–পাশ এলাকায়। এছাড়া তাদের বাকি কারখানাগুলো রয়েছে মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া এবং বান্দরবানে।
ভেজাল আচারের এসব কারখানা কিভাবে চলছে জানতে চাইলে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নোমান হোসেন বলেন, ‘পর্যটকদের পুঁজি করে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ভেজাল আচারের কারখানার মাধ্যমে ভেজাল আচার বিক্রি করছে বলে তথ্য পেয়েছি। এ বিষয়ে কাজ চলছে। শীগ্রই ভাল খবর পাওয়া যাবে। সব ভেজাল আচার কারখানা বন্ধ করে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা হবে।

পাঠকের মতামত: