শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার :::
‘যারা দুর্নীতি করে তারা কোনো না কোনোভাবে শক্তিশালী’। হয় অর্থ, না হয় মামাদের টেলিফোন। এ বাক্যটি আবারও সত্য প্রমাণ করলেন চরম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়া আনসার সদস্যরা। দুর্নীতি করে নিজেদের ভাগ্য গড়েছে সাত দুর্নীতিবাজ প্লাটুন কমান্ডার!। দুর্নীতি করে তারা শাস্তি পায়নি, বরং আরো দুর্নীতির আখড়ায় পদায়ন করা হয়েছে। গত ৮ জানুয়ারী কক্সবাজারের গুরুত্বপূর্ণ স্থান থেকে ৯ জন আনসার প্লাটুন কমান্ডারকে বদলি করা হয়েছে। দুর্নীতিবাজদের বদলি করতে আরো বড় ধরনের দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। তবে এটাকে বদলি নয়, অদল বদল হিসেবে মনে করছেন আনসার সদস্যরা ছাড়াও জেলার সচেতন মহল।
জানা গেছে, গত ৮ জানুয়ারী অফিস আদেশের মাধ্যমে আনসার প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) মোঃ সামশু উদ্দিনকে বিমান বন্দর থেকে সিপিজিসিবিএল মাতারবাড়ি মহেশখালীতে বদলি করা হয়। টাকা দিয়েই মাতারবাড়িতে বদলি হয়েছে বলে হুংকারও ছাড়ছেন তিনি। এ সামশু উদ্দিন বিমান বন্দরে থাকা কালে যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে টমটম বিমান বন্দরে প্রবেশের অনুমতি দিতেন। এছাড়া বিভিন্ন ভাবে মাদক পাচারে সহযোগীতা, আনসার সদস্যদের বেতনভাতা, রেশন আত্মসাৎ সহ বিমান বন্দরে দুর্নীতি করে লাখ লাখ টাকা অবৈধ আয় করেছে। দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে বিমান বন্দর থেকে প্রত্যাহার করে সামশু উদ্দিনকে সরকারী একটি বৃহৎ প্রকল্প মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বদলি করায় এই প্রকল্পের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। একই আদেশে পিসি কমান্ডার মোঃ মাহামুদুল ইসলামকে কক্সবাজার শেখ কামাল আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম থেকে বিমান বন্দরে, মোঃ ইলিয়াছ খানকে সিপিজিসিবিএল মাতারবাড়ি মহেশখালীতে থেকে সী ফুড মহেশখালীতে, ফরিদ আহম্মদ সী ফুডস মহেশখালী থেকে ঝিংলজা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে, হোসাইন আহম্মদকে ঝিলংজা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে পিএমখালী মেসার্স বজল এন্ড ব্রার্দাসে, মোঃ আবুল হোসেনকে পিএমখালী মেসার্স বজল এন্ড ব্রার্দাস থেকে মহেশখালী বগাচত্তর ঘোনায়, মোঃ সাহাব উদ্দিনকে মহেশখালী বগাচত্তর ঘোনা থেকে উখিয়া সোনারপাড়া সী মার্ক বিডি লিমিটেডে, আবুল কালাম চৌধুরীকে উখিয়া সোনারপাড়া সী মার্ক বিডি লিমিটেড থেকে ঝিলংজা সাবমেরিন ক্যাবলস ল্যান্ডিং স্টেশনে, আবুল হাসানকে ঝিলংজা সাবমেরিন ক্যাবলস ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে কক্সবাজার শেখ কামাল আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বদলি করা হয়।
বেসরকারী বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর এক পত্রে বিমোচক সাপেক্ষে আনসার সদস্যদের প্রত্যাহারের নির্দেশ দেন। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী কক্সবাজার জেলা কমান্ড্যান্ট এর কার্যালয়ের স্মারক নং-৪৪.০৩.২০২২.৪৩.০৪০.১৭ মুলে গত ৮ জানুয়ারীর অফিস আদেশে আগামী ১৫ জানুয়ারীর মধ্যে বদলীকৃত কর্মস্থলে যোগদানের জন্য জেলা কমান্ড্যান্ট দেওয়ান মাতলুবুর রহমান আদেশ দেন।
অভিযোগে জানা গেছে, উল্লেখিত আনসার প্লাটুন কমান্ডাররা নিজনিজ কর্মস্থলে দীর্ঘদিন কর্মরত থাকার সুযোগে বিশেষ করে কক্সবাজার বিমান বন্দরে আনসার ক্যাম্প, মহেশখালী সী ফুডস, বগাচত্তর আনসার ক্যাম্প, শেখ কামাল আর্ন্তজাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম , কক্সবাজার সাবমেরিন ক্যাবল স্টেশন, সী মার্ক বিডি আনসার ক্যাম্প সোনারপাড়া ও কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দীর্ঘদিন কর্মরত থেকে আনসার সদস্যদের কাছ থেকে ঘুষ নেওয়াসহ বিভিন্ন ভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতি করে আসছিল। এমনকি জেলার বাহিরের বিভিন্ন স্থান থেকে চাকুরীরত অন্যান্য আনসার সদস্যদের কাছ থেকে জেলা কমান্ড্যান্ট মাতলবুর রহমানের নিযুক্ত দালাল প্লাটুন কমান্ডার (পিসি) এর মাধ্যমে টাকা আদায় করে আনসার সদস্যদের দুর্নীতি করার জন্য বাধ্য করতেন। প্রতি মাসে শুধু প্লাটুন কমান্ডারেরা (পিসি) লাখ লাখ টাকার দুর্নীতির ঘটনা ঘটিয়েছে। দুর্নীতির টাকার একটি অংশ আনসার মনিটরিং সদস্যরাও পেতে বলে জানা যায়।
দুর্নীতির ব্যাপারে গোপন তদন্ত করে গরীব ও নিরীহ আনসার সদস্যদেরকে শান্তিতে চাকুরীর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কিছু আনসার সদস্য গত ২৬ অক্টোবর পরিচালক অপারেশন আনসার ভিডিপি সদর দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেন। এসব বিষয়ে একটি গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত করে উর্ধবতন কর্তপক্ষের নিকেট গোপন প্রতিবেদনও দাখিল করেন। অভিযোগ ও গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গা নড়ে চড়ে বসেন জেলা কমান্ড্যান্ট মাতলবুর রহমান ।
অভিযোগ উঠেছে, জেলা কমান্ড্যান্ট মাতলবুর রহমানের আস্কারায় দীর্ঘদিন ধরে দুর্নীতি অনিয়মে জড়িয়ে পড়া প্লাটুন কমান্ডারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা না নিয়ে দুর্নীতিবাজদেরকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। একটি সুত্র জানিয়েছেন, বদলি নয়, কর্মস্থ অদল-বদল করা পিসি কমান্ডারদের কাছ থেকে কর্মস্থল অনুযায়ী সর্বনি¤œ ১০ হাজার টাকা থেকে সর্ব্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা পর্যন্ত বদলির টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনেক আনসার সদস্যেরও দাবী পিসি কামান্ডারদের অদল-বদল করতে অন্তত সাড়ে ৭ লাখ টাকার বাণিজ্য করা হয়েছে। যা গোপনে তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে বলেও দাবী একাধিক আনসার সুত্রের।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন আনসার সদস্য জানান, ‘যারা দুর্নীতি করে তারা শক্তিশালী’। পদে পদে চরম দুর্নীতি করে নিজেদের ভাগ্য গড়েছে দুর্নীতিবাজ প্লাটুন কমান্ডারা। আর জেলায় বিভিন্ন স্থানে কর্মরত নীরিহ ও গরীব আনসার সদস্যরা বার বার সুবিধা বঞ্চিত হয়ে আসছে।
এব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য জেলা কমান্ড্যান্ট দেওয়ান মাতলবুর রহমানের ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
পাঠকের মতামত: