কক্সবাজার প্রতিনিধি :: কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদী দখল ও প্যারাবন ধ্বংসের ঘটনায় কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয় ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনানসহ ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার (১৪ জুন) রাতে পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের পরিদর্শক মাহবুবুল ইসলাম বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামীরা হলেন, যথাক্রমে মহেশখালীর চরপাড়ার মৃত জালাল আহমেদের পুত্র মো. ইউসুফ, কক্সবাজার পৌরসভার টেকপাড়ার মাহবুবুল আলম মুকুলের পুত্র ও জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মারুফ আদনান, বদরমোকাম এলাকার মৃত নজরুল ইসলামের পুত্র ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ইশতিয়াক আহমেদ জয়, মহেশখালী কুতুবজোমের মেহেদিয়াপাড়ার মৌলভী কবির আহমদের পুত্র রুকন উদ্দিন, নেত্রকোনার মৌগাতি চচুয়ার মারাদিঘীর ইদ্দিকুর রহমানের পুত্র ওমর ফারুক, কক্সবাজার পৌরসভার নুরপাড়ার মুবিনুল ইসলামের পুত্র তায়েফ আহমেদ ও তাইসাদ সাব্বির, গাড়ির মাঠ এলাকার টিপু, ইকরা রিয়েল এস্টেট হাউজিং এর মালিক আমিনুল ইসলাম আমান, খুরুশকুল মনুপাড়ার মোহাম্মদ সেলিম প্রকাশ বার্মায়া সেলিম, কক্সবাজার শহরের হোটেল তাজসেবার মৃত হাজি জমির হোসেনের পুত্র মাহবুবুর রহমান, নুরুল ইসলামের পুত্র জিসান উদ্দিন, রুমালিয়ারছড়ার আবদুল মোনাফের পুত্র ইসমাইল, মধ্যম বাহারছড়ার শেখ জসিমের পুত্র মো. রানা, লালদীঘির পাড় এলাকার মফিজুর রহমানের পুত্র ঝুমা এবং মহেশখালীর শাপলাপুরের দীনেশপুর এলাকার মো. নাসিমের পুত্র ইকবাল হাসান। এছাড়া মামলায় অজ্ঞাত হিসেবে আরও ১৫/২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
সূত্রমতে, কক্সবাজার শহরের প্রাণ ঘেঁষে কস্তুরাঘাটের ঐতিহ্যবাহী বাঁকখালী নদী। এই নদী শ্রেণির ২২৬২ দাগের জায়গা খাস খতিয়ানের প্যারাবন দখলে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। এই সিন্ডিকেটটি প্যারাবন কেটে ও পাহাড়ি মাটি ফেলে ভরাট করে নামে-বেনামে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করে যাচ্ছে। আর এসব প্রশাসনের চোখে আড়াল করতে ব্যবহার করেছে টিন ও পলিথিনের ঘেরাও। স্থানীয়দের তথ্যমতে, এরা গভীর রাতে পাহাড় কেটে ডাম্পারে মাটি এনে নদী ভরাট প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এ দখলবাজ সিন্ডিকেটের দাবি, তারা খুরুশকুল মৌজার অন্তর্গত খতিয়ানভুক্ত জমি কিনে ভরাট কাজ করছেন। এসব জমি নদী কিংবা প্যারাবন হলেও তাদের কাছে বৈধ কাগজ রয়েছে। যে কারণে তারা প্যারাবন কেটে ও নদী ভরাট করে বসতবাড়ি নির্মাণ করছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, বদরমোকাম মসজিদের উত্তর পাশ থেকে বাঁকখালী নদী শুরু। এক সময় সেখানে ট্রলার ভেড়ানো হতো। যাতায়াত ছিল মহেশখালী-কুতুবদিয়া লাখো মানুষের। খননের অভাবে ধীরে ধীরে পানির প্রবাহ দূরে সরে গেছে এ কস্তুরাঘাটে। তবে জোয়ারের সময় সেখানে পানি চলাচল হয়। সরকারি বিভিন্ন নৌযান রয়েছে সেখানে। কয়েক মাস আগেও সেখানে প্যারাবনের বড় বড় দুই শতাধিক বাইন গাছ ছিল। দখলদারেরা সেগুলো গোপনে কেটে ফেলেছে। মূলত পরিবেশ অধিদপ্তর ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের নীরবতায় দখলদারেরা সক্রিয়ভাবে কাজ করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
কক্সবাজারের বাঁকখালী নদী দখল, ভরাট, প্যারাবনের লাখ লাখ গাছ কাটা ও স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করে বাঁকখালী নদী ও প্যারাবন রক্ষায় দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবাদ সভা, বিক্ষোভ, নদী পরিদর্শন, মানববন্ধন, ১৩ দফা দাবীতে স্মারকলিপি প্রদান সহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে আসছে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল।
পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এনভায়রনমেন্ট পিপল এর প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, দখল নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষ চলছে। দখলে দুই পক্ষের লোকজন জড়িত থাকলেও প্রভাবশালীদের বাদ দিয়ে শুধুমাত্র একটি পক্ষের লোকজনকে আসামি করা হয়েছে, ঘটনায় জড়িত সকলকে মামলায় অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। অন্যথায় নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হবে। এছাড়া শুধু মামলা করে দায়িত্ব শেষ করলে বাঁকখালী রক্ষা করা যাবে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে দখল উচ্ছেদ করে নদী পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক শেখ মো. নাজমুল হুদা বলেন, মামলায় কেউ বাদ পড়ে থাকলে পরবর্তীতে তাদের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এছাড়া বাঁকখালীতে পরিবেশ ধ্বংস করলে আরও মামলা দায়ের করা হবে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার সদর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) সেলিম উদ্দিন। তিনা জানান, ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে ৩৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। সুত্র: নয়া শতাব্দী
পাঠকের মতামত: