ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে করোনা মোকাবিলায় দিশেহারা পুলিশ

আব্দুল কুদ্দুস রানা, প্রথম আলো ::  কাজের ঘোরে কখন নিজেই করোনায় আক্রান্ত হন টের পাননি কক্সবাজার জেলা পুলিশের উপ পরিদর্শক সিদ্ধার্থ সাহা (৪৪) । তিনি এখন রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালের আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন। নারায়ণগঞ্জের আরেক উপপরিদর্শক হেদায়ত উল্লাহর দেওয়া প্লাজমায় তিনি বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন। আক্রান্ত ওই পুলিশ কর্মকর্তার কর্মস্থল উখিয়ার ইনানী পুলিশ ফাঁড়ি। তিনি ওই ফাঁড়ির ইনচার্জ। উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়ন এবং পাশের তিনটি আইসোলেশন ( হোটেল-রিসোর্ট) সেন্টারে ভর্তি হওয়া রোগীদের সেবাযত্ন করতে গিয়েই তিনি করোনায় আক্রান্ত হন। তাঁর বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপার ফুলহরি গ্রামে।

মুঠোফোনে তিনি বলেন, জেলা পুলিশের এসপি এবিএম মাসুদ হোসেনসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের আন্তরিক সহযোগিতা এবং মানুষের দোয়ায় বেঁচে আছি। গত ৩১ মে তাঁর নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়।

আশ্রয়শিবিরে রোহিঙ্গাশরণার্থীদের নজরদারি, আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রণ, অপরাধীদের গ্রেপ্তার অভিযান, করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মানবিক সহায়তা, লকডাউন কাযকরের পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সেবাযত্ন, দাফন-কাফন, করোনা রোগীর সংস্পর্শে আসা লোকজনকে শনাক্তকরণের কাজেই দিশেহারা পুলিশের প্রায় দুই হাজার সদস্য। কমবেশি সকল পুলিশের মধ্যে এখন করোনা আতঙ্ক ।

কক্সববাজার জেলা পুলিশ সুপার এ বি এম মাসুদ হোসেন বিপিএম(বার) বলেন, ইতিমধ্যে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ জন। উপসর্গ দেখা দেওয়ায় আইসোলেশনে ৫০ জন। তাঁদের নমুনা সংগ্রহ হলেও গত বুধবার পযন্ত ফলাফল হাতে আসেনি। এই ৭৩ সদস্যকে রাখা হয়েছে দুটি হোটেলে। করোনা উপসর্গ দেখা দেওয়ায় ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে আছে আরও ১০২ জন। তারপরও মনোবল হারায় নি পুলিশ। মানবিক সেবা ও করোনা মহামারি ঠেকাতে পুলিশ কাজ করছে আন্তারিকতা দিয়ে।

# রোহিঙ্গা নিয়ে আতঙ্ক

উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ। দুই উপজেলায় সাত লাখ নাগরিকসহ প্রায় ২০ লাখ জগোষ্ঠিীর শান্তিশৃংখলা রক্ষা ও করোনা মোকাবিলায় কাজ করছে ৬৫০ জনের বেশি পুলিশ ও আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশ। ইিতিমধ্যে শিবিরে করোনায় তিন রোহিঙ্গা শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৩৫ জন। আইসোলেশন সেন্টারে চিকিৎসাধীন ১১৩ জন। পুরো শিবিরে করোনা ছড়িয়ে পড়লে নিয়ন্ত্রণ কঠিন হয়ে পড়বে, এরকম আতঙ্কে আইনশৃংখলা বাহিনীসহ মানবিকসেবায় নিয়োজিত কয়েক হাজার স্বেচ্ছাসেবী।

গত মঙ্গলবার পযন্ত উখিয়ায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৮০ এবং টেকনাফে ৫০ জনের ।

উখিয়া থানার ওসি মরজিনা আকতার বলেন, এ পযন্ত উখিয়ায় ছয় জন কর্মকর্তাসহ আট পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এরমধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরে কর্মরত আর্মড ব্যাটালিয়ন পুলিশের একজন উপ পরিদর্শকও রয়েছেন। আইসোলেশনে আছেন ২৭ জন। রোহিঙ্গাদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে পুলিশের।

টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, চরম ঝুঁকি নিয়ে পুলিশ সদস্যদের করোনা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। আইসোলেশনে রাখা হয়েছে এ থানার আরও ৪ জন সদস্যকে ।

# ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন

পেকুয়া বাজারের চৌমহনী এলাকায় দায়িত্বরত অবস্থায় করোনা আক্রান্ত হন ওই থাকার পুলিশ কনস্টেবল এরশাদুর রহমান ( ৪১)। ১৯ মে তাঁর নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়। ২০ মে তাঁকে পাঠানো হয় রামুর আইসোলেশন সেন্টারে। সুস্থ হয়ে ২৭ মে তিনি পেকুয়ার বাসায় ফিরেন। বর্তমানে তিনি ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন ।

পুলিশ কনস্টেবল এরশাদুর রহমান বলেন, করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর মানষিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছিলাম। পরিবারের সদস্যদের কীহবে ভেবে দিশাহীন হয়ে পড়ি। কিন্তু পুলিশ সুপার স্যারসহ সহকর্মীদের একাধিক ফোন, তাঁদের পাশে থাকার অঙ্গীকার-মনে সাহস বাড়িয়ে দিয়েছিল। সেই সাহসের জোরেই করোনা জয় করে বাড়ি ফিরতে পেরেছি।

করোনা আক্রান্ত আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য বলেন, জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা করোনা ঝুঁকি এড়াতে শুরু থেকেই সদস্যদের গাইডলাইন দিয়ে আসছেন। প্রত্যেক সদস্যকে পিপিই, মাস্ক, হ্যান্ড গ্ল্যাভস, সাবান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ দিয়েছেন। করোনা আক্রান্তদের ভালো জায়গায় ( হোটেল-রিসোর্ট) রাখা, তাঁদের উন্নতমানের খাবার, ফলমূল ও ওষধ সরবরাহ করা হচ্ছে। অতিরিক্ত সিভিল সার্জন মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আলমগীরের তত্বাবধানে সদস্যদের চিকিৎসা চলছে। দিনে দুইবার অক্সিজেন ও তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে। একারণে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে অনিহা নেই পুলিশ সদস্যদের।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ( প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইন বলেন, পুলিশ লাইনস, থানা ও ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যদের তিনভাগে ভাগ করে ডিউটি করানো হচ্ছে। প্রতিটি দল ১৪ দিন করে ডিউটি করছে। প্রতিটি দলকে রাখা হচ্ছে আলাদাভাবে। অন্য জেলা থেকে যোগ দিতে আসা পুলিশ সদস্যদের জন্য ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিন বাধ্যতামূলক। তাঁদের শহরের লারপাড়ার একটি স্কুলে রাখা হয়েছে।

পাঠকের মতামত: