ঢাকা,বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে এক মাসের পাসপোর্ট মিলছেনা তিন মাসেও..

শাহীন মাহমুদ রাসেল, কক্সবাজার :: কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে এক মাসে ডেলিভারীর জায়গায় তিন মাসেও মিলছেনা আবেদনকারীদের পাসপোর্ট। বই সংকট, প্রধান কার্যালয়ের প্রিন্টার মেশিন নস্টসহ কারিগরি বিভিন্ন সমস্যায় এখানকার প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার আবেদনকারীর পাসপোর্ট ডেলিভারী দেয়া যাচ্ছেনা।

প্রবাসী অধ্যুাষিত এ জেলায় আবেদনের নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট হাতে না পেয়ে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েছেন বিদেশগামী যুবক, দেশ ফেরত প্রবাসী ও চিকিৎসার জন্য বিদেশ গমনেচ্ছুক যাত্রীরা। তবে জরুরী পাসপোর্ট আবেদনকারীদের বই প্রক্রিয়া শেষে দ্রুত হাতে দিতে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানান কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা।

ট্রাভেল্স এজেন্সি, পাসপোর্ট অফিস ও আবেদনকারী সূত্রে জানা যায়, পাসপোর্ট ও বহিরাগমন অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে বই সংকটের কারণে চলতি বছরের আগষ্ট মাসের শুরু থেকে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের ডিলিভারীতে সময় ক্ষেপন শুরু হয়। দীর্ঘদিন পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকায় বর্তমানে এ কার্যালয়ে অন্তত ৩ হাজার পাসপোর্টের আবেদনকারীর বই আটকা পড়ে।

ঢাকা থেকে এসব বই প্রিন্টিং হয়ে না আসার কারনে নির্ধারিত সময়ের দুই মাস পরও গ্রাহকরা পাসপোর্টের বই ডেলিভারী পাচ্ছেনা। জরুরী প্রয়োজন হওয়ায় পাসপোর্ট নিতে আবেদনকারীরা প্রতিদিন এ অফিসে ধর্ণা দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। এতে করে একদিকে বাড়ছে বিড়ম্বনা অন্য দিকে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে।

জেলা ট্রাভেল্স এজেন্সি মালিক সমিতির একটি সূত্র জানায়, সাধারণ ভিত্তিতে তিন হাজার ৪৫০ টাকা জমা দিয়ে নির্ধারিত ২১ কর্মদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়ার নিয়ম থাকলেও বর্তমানে ৯০ থেকে ১০০ কর্মদিবসেও তা হাতে পাওয়া যাচ্ছেনা। আবার জরুরী ভিত্তিতে ৬ হাজার ৯০০ টাকা জমা দিয়ে নির্ধারিত ৭ কর্মদিবসের মধ্যে ডেলিভারি দেওয়ার কথা থাকলেও তা পাওয়া যাচ্ছে ২০ থেকে ২৫ কর্মদিবস পরে।

তাছাড়া বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে ভিসা সহজিকরণ করায় সারাদেশে এক সাথে পাসপোর্টের আবেদন বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা থেকে প্রক্রিয়া শেষ হয়ে আসতে সময় বেশি লাগছে।

এমতাবস্থায় নানা ভাবে পাসপোর্ট আবেদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সর্বাধিক বিড়ম্বনায় পড়ছে বিদেশ ফেরত প্রবাসীরা, যারা দেশে এসে তাদের পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেছে।

এক্ষেত্রে পাসপোর্ট হাতে না পাওয়ায় অনেকের পুণরায় প্রবাসে যাওয়াটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় ট্রাভেল্স এজেন্সির মালিকরাও বিপাকে রয়েছে।

পাসপোর্টের জন্য আবেদনকারী জোবাইদা ইয়াছমিন জানায়, তিনি তার মাকে ভারতে জরুরী চিকিৎসার জন্য নিতে সেপ্টেম্বর মাসের ২ তারিখে পরিবারের ৩ সদসস্যের জন্য পাসপোর্টের আবেদন করেন।

নিয়ম মোতাবেক অক্টোবর মাসের ২ তারিখের আগেই সকল প্রক্রিয়া শেষে পাসপোর্টগুলো হাতে পাওয়ার কথা। কিন্তুু এখন পর্যন্ত পাসপোর্টগুলো ডেলিভারী দিতে পারেনি কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস। ঠিক কবে ডেলিভারী দিতে পারবে সেটাও বলতে পারছেনা কর্তৃপক্ষ। এমতাবস্থায় তার মায়ের চিকিৎসা নিয়ে তারা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন। দুশ্চিন্তায় দিনাতিপাত করছেন পরিবারের সকল সদস্য। মোহাম্মদ রায়হান নামে প্রবাস ফেরত এক যুবক জানান, তিনি সময় স্বল্পতার কারণে ৬ হাজার ৯শ টাকা দিতে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে নতুন পাসপোর্টের জন্য জরুরী ভিত্তিতে আবেদন করেন।

নিয়ম মোতাবেক এটি ৭দিনের মধ্যে হাতে পাওয়ার কথা। কিন্তুু ২৩ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও তিনি আবেদনকৃত পাসপোর্টটি পাননি। অনিশ্চয়তার মুখে পড়ে প্রতি একদিন পরপর তিনি পাসপোর্ট অফিসে এসে খবরা খবর নিতে যোগাযোগ করছেন। এতে একদিকে সে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন অন্য দিকে প্রতিদিন যাতায়াতে তার বাড়ি খরচ ও সময় নস্ট হচ্ছে।

কক্সবাজার জেলা ট্রাভেল এজেন্ট এসোসিয়েশনের নেতারা জানান, দেশের সব জেলার চেয়ে কক্সবাজারের মানুষ সবচেয়ে বেশি দেশের বাহিরে আয়রোজগারের জন্য অবস্থান করছেন। তারা দেশে ছুটিতে এসে পাসপোর্ট নবায়ন (রিইস্যু) করতে আবেদন দিলে তিন থেকে চার মাসেও পাসপোর্ট ডেলিভারি পাচ্ছেন না। অনেকের ছুটির সময় চলে গেছে তারপরও পাসপোর্ট ডেলিভারি পায়নি। তাদের চাকরি হারানোরও উপক্রম হচ্ছে।

এদিকে কক্সবাজারের আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা যথাসময়ে আবেদন অনুমোদন না দেওয়ার কারণেও পাসপোর্ট পেতে বিলম্ব হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন।

এবিষয়ে জানতে কক্সবাজার আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আবু নায়েম মাসুমের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রতিবেদককে অফিসে যেতে বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক মাস থেকেই সংকটের শুরু হয়েছে।

অসুস্থ ও জরুরী পাসপোর্ট আবেদনকারীদের তালিকা করে দ্রুত পাসপোর্ট ডেলিভারী দিতে ঢাকায় যোগাযোগ করা হচ্ছে।

বর্তমানে কক্সবাজার অফিসে প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার আবেদনকারীকে যথাসময়ে পাসপোর্ট ডেলিভারী দেয়া যাচ্ছেনা বলে তিনি দু:খ প্রকাশ করেছেন।

পাঠকের মতামত: