ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে এক্সট্রা মোহরারদের কলম ও কর্মবিরতি চলছেই…..

mail-google-comমোঃ রেজাউল করিম, ঈদগাঁও, কক্সবাজার :::

বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহরার (নকল নবিস) এসোসিয়েশনের দেশব্যাপী কলম বিরতী আন্দোলনের আওতায় কক্সবাজারের ৮ উপজেলায় অনির্দিষ্টকালের কলম বিরতি, কর্ম বিরতি ও বিক্ষোভ কর্মসূচী চলছেই। আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে নিবন্ধন পরিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণাধীন রেজিষ্ট্রেশন বিভাগে এক্সট্রা মোহরারদের এক দফা এক দাবী তথা চাকুরী জাতীয়করণের দাবীতে এ কর্মসূচী ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্রীয়ভাবে। ফলে কক্সবাজারের আওতাধীন সাব-রেজিষ্টার অফিস থেকে কোন জমির নকল সংগ্রহ করতে পারছেন না ক্রেতা-বিক্রেতারা। আর এ কারণে সরকার হারাচ্ছে লাখ লাখ টাকার রাজস্ব। নিয়মিত নকল সরবরাহ বন্ধ থাকায় জন ভোগান্তি চরমে উঠেছে। মামলায় নকল দাখিল করাও যাচ্ছে না। উন্নয়ন খাতের অতিরিক্ত নকল নবিসদের রাজস্ব খাতে নকল নবিসে পদায়নের দাবীতে এসোসিয়েশন ধারাবাহিক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে অনির্দিষ্টকালের এ কলম ও কর্মবিরতি শুরু করেছে বেশ কিছুদিন আগে থেকে। বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহরার এসোসিয়েশন সভাপতি মো. জয়নাল আবেদীন জানান, সংগঠনের পক্ষ থেকে স্কেলভূক্ত করার একদফা দাবী পেশা করা হলে আইন মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটির সুপারিশের আলোকে নিবন্ধন পরিদপ্তরের মহা পরিদর্শকের দপ্তর থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে এক্সট্রা মোহরারদের স্কেলভূক্ত করার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়। দীর্ঘদিন পরও উক্ত দাবী বাস্তবায়ন না হওয়ায় গত ১২/৪/১৬ ইং তারিখে এসোসিয়েশনের উদ্যোগে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করা হয়। পরদিন আইনমন্ত্রীর বাসভবনে আলোচনা সভায় যে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তা এখনো বাস্তবায়ন না হওয়ায় ৩/৫/১৬ ইং তারিখে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি পেশ করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হতে প্রেরিত পত্রের এখনো কোন বাস্তব পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। এমনকি গত ১৫ মাসের বকেয়া পারিশ্রমিকও পরিশোধ করা হয়নি। সকল সরকারী কর্মচারীগণের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি হলেও এক্সট্রা মোহরারগণের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি করা হয়নি। সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল ইসলাম (শহিদ) জানান, সংগঠনের পক্ষ থেকে দাবী বাস্তবায়নের নিমিত্তে পত্র মারফত অনুরোধ জানানো হয়। যা দু’দফে তাগিদপত্রের মাধ্যমে আবারো দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। কিন্তু এ পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না হওয়ায় ৩১/৭/১৬ ইং পর্যন্ত স্থগিত করা কর্মসূচীর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এসোসিয়েশনের বিশেষ সাধারণ সভা আহবান করা হয়। তাতে গৃহীত সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ২৫/১১/১৬ ইং এর কার্যকরী পরিষদের সভায় চলতি মাসের ৪ তারিখ সকাল ৯ ঘটিকা থেকে দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত নিবন্ধন পরিদপ্তরের অধীনে রেজিষ্ট্রেশন বিভাগের সকল মহাফেজখানাসহ প্রত্যেক সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের এক্সট্রা মোহরারগণ কলম বিরতি ও কর্মবিরতিসহ অফিস প্রাঙ্গনে শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশ ও বিক্ষোভ প্রদর্শনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এসব কর্মসূচী পালনকালে কর্তৃপক্ষ আলোচনার মাধ্যমে দাবী বাস্তবায়ন না করলে কেন্দ্রীয় পরিষদ প্রয়োজনে আরো কঠোর ও কঠিন কর্মসূচী গ্রহণে বাধ্য হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ এক্সট্রা মোহরার (নকল নবিস) এসোসিয়েশনের কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি রবীন্দ্র নাথ দে জানান, কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসে কর্মরত মোট ১২০ জন অতিরিক্ত নকল নবিস এ কর্মসূচীর সাথে যুক্ত রয়েছেন। এছাড়া জেলা সদরে রয়েছেন ৫০ জন অতিরিক্ত নকল নবিস। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলায় এ খাতে দৈনিক কমপক্ষে ৫০ লক্ষ টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে। এছাড়া নিয়মিত নকল সরবরাহ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সংগঠনটির কক্সবাজার জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মিনার মোহাম্মদ সাইফুদ্দীন জানান, সরকার জনগণের কাছ থেকে দলিল পূরণ বাবদ প্রতি পৃষ্ঠার জন্য ৪০ টাকা আহরণ করলেও পারিশ্রমিক হিসাবে তাদের দেয়া হয় ২৪ টাকা। এছাড়া ১৫ মাসের বেতন-ভাতা বাবদ প্রায় দেড় কোটি টাকার বকেয়া রয়েছে জেলায়। সরেজমিন কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উক্ত কর্মসূচীর কারণে জেলা সদরসহ উপজেলা পর্যায়ের সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসে নিয়মিত নকল সরবরাহ বন্ধ থাকায় জনভোগান্তি চরমে উঠেছে। ইচ্ছে সত্ত্বেও কেউ মামলায় নকল দাখিল করতে পারছেন না। কলম বিরতির কারণে সাধারণ মানুষ তাদের জায়গার দলিল সম্পূর্ণরূপে সম্পন্ন করতে পারছেন না। এখানকার সাব-রেজিষ্ট্রার অফিসগুলো কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। এক্সট্রা মোহরারদের চাকরী পে-স্কেলভূক্ত না হওয়ায় সরকারী ছুটিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তাদের কারো রোগ-ব্যাধি বা কেউ মারা গেলে প্রত্যেকের পরিবারকে করুণ পরিণতি ভোগ করতে হয়। বাড়ী ভাতা, চিকিৎসা ভাতা, শিক্ষা সহায়ক ভাতা- এই ৩টি মৌলিক অধিকারসহ যাতায়াত ভাতা, টিফিন ভাতা, মহার্ঘ ভাতা ও সরকারী যাবতীয় সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত এ পেশার লোকজন।

পাঠকের মতামত: