সৈয়দুল কাদের, কক্সবাজার :: আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় স্থানীয় সরকার নির্বাচনী মনোনয়ন বোর্ড কোন বিদ্রোহী প্রার্থীকে দলের মনোনয়ন না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে কক্সবাজার জেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হওয়া ১৬ জন ইউপি চেয়ারম্যান দলের মনোনয়ন পাওয়া ক্ষিণ হয়ে এসেছে। যার ফলে অনেকেই পুনরায় বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এছাড়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৮উপজেলায় ৫টিতেই চেয়ারম্যান হয়েছেন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকারের নির্বাচনী দলীয় মনোনয়ন বোর্ড এর ঘোষণা অনুযায়ী কক্সবাজারের ৭১টি ইউনিয়নের ১৬টি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী বিদ্রোহী প্রার্থীরা আবারো দলের মনোনয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন। এছাড়া দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করে যারা পরাজিত হয়েছেন তাঁরাও দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন না।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নৌকা প্রতীকের বিরুদ্ধে যারা নির্বাচন করে জয়ী হয়েছেন কিংবা পরাজিত হয়েছেন এমন কাউকে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দেবেনা। দলের মনোনয়ন বোর্ডে যাদের নাম প্রস্তাব করা হবে তাঁরা অতীতে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনে করেছে কিনা যাচাই-বাচাই করা হবে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে এমন তালিকায় রয়েছেন রামু উপজেলার গর্জনিয়ার চেয়ারম্যান সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ঈদগড়ের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ ভুট্টু, কাউয়ারকোপের মোস্তাক আহমদ, রশিদ নগরের শাহআলম, রাজারকুলের মফিজুর রহমান ও দক্ষিণ মিঠাছড়ির ইউনুচ ভুট্টু। চকরিয়া উপজেলার বদরখালীর খাইরুল বশর, ভেওলা মানিক চরের এসএম জাহাঙ্গীর আলম ও কৈয়ারবিলের মক্কি ইকবাল হোসেন।
মহেশখালীর মাতারবাড়ি ইউনিয়নের মাস্টার মোহাম্মদ উল্লাহ ও কালারমারছড়ার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তারেক বিন ওসমান শরীফ (উচ্চ আদালতের আদেশে মনোনয়ন বঞ্চিত)। সদর উপজেলার ইদগাও ইউনিয়নের ছৈয়দ ও নুর ছিদ্দিক। টেকনাফ উপজেলার সাবরাং এর নুর হোসেন, টেকনাফ সদরের শাহজাহান মিয়া ও সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের নুর আহমদ। এছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান পদে চকরিয়া উপজেলার ফজলুল করিম সাঈদী, পেকুয়া উপজেলার জাহাঙ্গীর আলম, রামু উপজেলার সোহেল সরওয়ার কাজল, মহেশখালী উপজেলার মোহাম্মদ শরীফ বাদশা ও টেকনাফ উপজেলার নুরুল আলম।
গতবারের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে বিজয়ী রামু উপজেলার একজন ইউপি চেয়ারম্যান নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, স্থানীয় রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করতে গ্রুপিং এর শিকার হয়ে বিভিন্ন ইউনিয়নের জনপ্রিয় প্রার্থীদের নাম প্রস্তাব করা হয় না দলের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে। যার ফলে গত নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে বাধ্য হয়েছি। সুষ্ট নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে প্রমাণ করেছি কেন্দ্রে নাম প্রস্তাব সঠিক ছিল না। তিনি আরো বলেন, দলের মনোনয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতৃবৃন্দদের জনপ্রিয়তার বিষয়টি যাচাই করে নাম প্রস্তাব করা প্রয়োজন। স্রোতের বিপরীতে বিজয়ী হওয়া কঠিন। এরপরও আমরা বিজয়ী হয়েছি।
টেকনাফের একজন বর্তমান চেয়ারম্যান জানালেন জনপ্রিয়তা থাকলেও গতবার দলের মনোনয়ন পাইনি। নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছি। এবার দলের চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকব। মনোনয়ন না পেলে জনগণ চাইলে আবারো নির্বাচন লড়ব।
জানা যায়, কক্সবাজার জেলায় ৭১টি ইউনিয়নে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন মাত্র ৩২ জন। এছাড়া ১৬ জন বিদ্রোহী প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। গত ইউপি নির্বাচনে ১৫ জন চেয়ারম্যান পদে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হয়েছেন। জামায়াত সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন ৭ জন। জাতীয় পার্টি সমর্থিত ১ জন চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়ন বোর্ড (স্থানীয় সরকার) এর সিদ্ধান্তের বিষয়টি তিনি মৌখিকভাবে শুনেছেন। এ বিষয়ে লিখিত কিছু আমরা এখনো পাইনি। কেন্দ্র থেকে যেভাবে নির্দেশনা আসবে সবকিছু সেভাবে ই হবে।
পাঠকের মতামত: