সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :::
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জে পাহাড়ের মালিক এখন স্থানিয় প্রভাবশালীরা। তাদের কাছ থেকে চড়া দামে কিনতে হচ্ছে সরকারি পাহাড়ের খাস জমি। পাহাড়ের দখল বিক্রি করেই ইতিমধ্যে অনেকে বিপুল টাকার মালিক বনে গেছে। সরকারি পাহাড়ের জমির দাম এখন বেশ চড়া। শতক প্রতি ১ লাখ টাকাও বিক্রি হচ্ছে এসব জমি। আর ক্রয় বিক্রয়ের তালিকায় আছে স্থানিয় প্রভাবশালীসহ খোদ সংঘবদ্ধ কাঠচোর অসাধু বনকর্মীরা। বর্তমানে ফুলছড়ি রেঞ্জে পাহাড়ের ৫% জমিও সরকারের দখলে নেই।
এদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে ,খুটাখালী বনবিট এলাকার সংরক্ষিত বনভূমি দখল করে ঘেরা বেড়া দিয়ে পাকা দালান ঘর নির্মাণ করেছে সেগুন বাগিচা এলাকার জয়নালগং। এখানে বন বিটের দীর্ঘদিনের নার্সারী বাগানের জায়গা দখলে নেওয়ার প্রতিযোগীতায় নেমেছে স্থানীয় জয়নাল, ছৈয়দ, ও নুরুল আলম নামের অনেকে এখন মিলেমিশে পাহাড় বিক্রি করছে শতক প্রতি লাখ টাকা দামে।
২০০৭-২০০৮ সালের সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীরা বলেন, সরকার মহৎ উদ্দেশ্যে সামাজিক বনায়নের আওতায় বাগান সৃজন করে উপকারভোগী নির্বাচন করে ৬৩ নং খুটাখালী মৌজার ৩০ হেক্টর সংরক্ষিত বনভূমি বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু বনভূমি দখলবাজ-সন্ত্রাসীদের তৎপরতার মুখে সামাজিক বনায়নের মতো বৃহৎ প্রকল্প ভেস্তে যেতে চলেছে।
একইভাবে ফুলছড়ি রেঞ্জের অধীনস্থ খুটাখালীর তানজুককাটা এলাকার পাহাড়ের গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে সরকারি পাহাড়ের জমি বিক্রি হচ্ছে খুবই চড়া দামে আর এসব জমি বিক্রি করার জন্য নিয়মিত কাগজপত্র নিয়ে বসে আছে অনেকে। এখানে শতক প্রতি ১ লাখ টাকার কাছাকাছি দামে পাহাড়ের জমি বিক্রি হচ্ছে। আর কেনা বেচাকারী খোদ স্থানিয় প্রভাবশালীসহ সংঘবদ্ধ কাঠচোর অসাধু বনকর্মীরা ।এছাড়া স্থানিয় কিছু প্রভাবশালী লোক রাজনৈতিক পশ্রয়ে সরকারের এসব মূল্যবান পাহাড়ের জমি বিক্রি করছে।
এদিকে ফুলছড়ির সামাজিক বনায়ন এখন নিয়মিত দখলে অস্থিত্ব সংকটে পড়েছে। এ ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে উপকারভোগীরা বলেন, সব জমি এখন বাড়ি ঘরে পরিপূর্ণ মাঝে মধ্যে সেখানে জমি দখল নিয়ে মারামারিও হয়। ফুলছড়ির সামাজিক বনায়নে পাহাড় কাটা এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে।
তারা আরো জানায়, ক্ষমতাসীন দলের নাম ভাঙ্গিয়ে সংঘবদ্ধ অস্ত্রধারী দখলদারদের কাছে তারা এখন অসহায়। বিষয়টি চকরিয় উপজেলা চেয়ারম্যান, চকরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, ফুলছড়ি এসিএফ, ফুলছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন। এরপরেও থামছেনা দখলদারদের তান্ডবলিলা। সম্প্রতি বাগানের জংগল সাফ করে পাহাড় কেটে লাখ টাকায় বসতি স্থাপনের চেষ্টা চালালে উপকারভোগীদের মধ্যে সংঘর্ষের আশংকা দেখা দেয়।
বনবিভাগ সূত্র জানায়, ফুলছড়ি রেঞ্জের জঙ্গল খুটাখালী মৌজার ৩০ হেক্টর সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ইতিপূর্বে উপকারভোগী নির্বাচন করে রেজিস্ট্রিকৃত দলিলের মাধ্যমে সামাজিক বনায়নের আওতায় প্লট আকারে বরাদ্দ দেয়। সেখানে সামাজিক বনায়নও সৃজিত হয়। কিন্তু দখলবাজ-সন্ত্রাসীরা সামাজিক বনায়নের গাছ উজাড় করে এসব বনভূমি দখলে নেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত তৎপরতা চালাচ্ছে। এ কারণে উপকারভোগীরা ধারে-কাছেও ভিড়তে পারছেননা।
খুটাখালী বিট কর্মকর্তা আবদু রজ্জাক বলেন, সরকার দলের নাম ভাঙিয়ে এসব বনভূমি জবর-দখলের চেষ্টা চালাচ্ছে দখলবাজ-সন্ত্রাসীরা। প্লট আকারে বনভূমি পাইয়ে দেয়ার নাম করে দখলবাজ-সন্ত্রাসীরা কয়েকশত গরীব লোকজনের কাছ থেকে লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তথ্য রয়েছে। বিষয়টি ইতিমধ্যে লিখিতভাবে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
ফুলছড়ি সহকারী বন সংরক্ষক মোঃ ইউছুপ জানান, দখলদারিত্ব স্থায়ীত্ব করতে বনভূমিতে স্থাপনাও করে দখলবাজরা। কোন অবস্থাতেই বনভূমি জবর-দখল করতে দেয়া হবে না কাউকে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনে রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা গেছে, ফুলছড়ি রেঞ্জে ৯০ % জমিই বেদখল হয়ে আছে অনেক আগে থেকে। আর এসব জমিতে বহু আগে থেকে ঘর বাড়ি তৈরি করে নিয়মিত বসবাস করছে মানুষজন। তারাই স্থায়িভাবে পাহাড়ে বসাবাস করে পাহাড় ধ্বংস করছে।
পাঠকের মতামত: