সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার প্রতিনিধি, কক্সসবাজার উত্তর বনবিভাগের ফুলছড়ি রেঞ্জের আওতাধীন মহাসড়কের পূর্ব পাশের্^ সামাজিক বনায়নের প্লট দখল উচ্ছেদ অভিযানে গুলাগুলিতে ৩ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সংঘটিত ঘটনায় কেউ আটক হয়নি। শনিবার ২৭ জানুয়ারী বিকেল সাড়ে ৩টার সময় এ ঘটনা ঘটে। ঐদিন ফুলছড়ি রেঞ্জার মো: আবদু রাজ্জাকের নেতৃত্বে বিশেষ টহল বাহিনীর মেহেদী হাসান, মেদাকচ্চপিয়া বিট কর্মকর্তা ছৈয়দ আবু জাকারিয়া, রাজঘাট বিট কর্মকর্তা মহেষ চন্দ্র হাজং, বন প্রহরী, ভিলেজার, সিপিজি সদস্য ও হেডম্যানদের সঙে নিয়ে অভিযান চালিয়ে ৪টি ঝুপড়ি ঘর ভেঙ্গে দেয়। এ ঘটনায় বনবিভাগের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হবে বলে জানা গেছে। তবে অন্য একটি সুত্র দাবী করছে স্থানীয় মুজিব ঐসময় জমিতে সেচ দিতে যান। ঐসময় বনবিভাগের লোকজনের এলোপাতাড়ি গুলিতে তিনিসহ বেশ ক’জন আহত হয়েছে। সামাজিক বনায়নের বিশালাকার প্লট দখল করে ঝুঁপড়ি নির্মান সম্পুন্ন উচ্ছেদ করতে পারেনি বনবিভাগ। এমনকি উচ্ছেদ অভিযানে গিয়ে দখলদারদের সাথে বন কর্মকর্তাদের কয়েক দফে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটলেও কোন ধরনের মামলা কিংবা প্রদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে উক্ত প্লটের উপকারভোগীদের মধ্যে চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে।
ফুলছড়ি রেঞ্জার মো: আবদু রাজ্জাক জানায়, ফুলছড়ি রেঞ্জের পাশর্^বর্তী খুটাখালী ইউনিয়নের শিয়াপাড়ার ২৫/৩০ জনের সংঘবদ্ধ নারী-পুরুষ দখলকারী অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ২০০৪ ও ২০০৫ সালের সামাজিক বনায়নের আনুমানিক ৩০ কানি মত রিজার্ভ জায়গায় ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে দখল করে নেয়। বিষয়টি তার নজরে আসলে তিনিসহ সঙীয় ফোর্স নিয়ে শনিবার বিকেলে উচ্ছেদ অভিযানে গেলে দখলদাররা গুলিবর্ষন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে তাদের উপর হামলা চালায়। এসময় নিজেদের রক্ষা করতে গিয়ে দখলদারদের হামলায় বিট কর্মকর্তা, বনপ্রহরী, হেডম্যানসহ ৩ জন গুরুত্বর আহত হয়। তারা হলেন ফুলছড়ির নবাগত বিটকর্মকর্তা মো: ছৈয়দ আলম ফরেষ্টার, বনপ্রহরী নাপিতখালীর গওহারুল জান্নাত ও ইউপি মেম্বার হেডম্যান আবদু শুক্কুর। তাদেরকে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। দখলদারদের দায়ের কুপে বনপ্রহরী গওহারুল জান্নাতের আঙুল কেটে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন বলে জানা গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ফুলছড়ি রেঞ্জার মো: আবদু রাজ্জাক জানান, গুলিবর্ষণের বিষয়টি তিনি জানেন না এবং এসিএফের নির্দেশে তিনি সহ সঙীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ৪টি ঝুপড়ি ঘর উচ্ছেদে করেন। ঐসময় দখলদাররা তাদের উপর হামলা চালায়। এসব বিষয়ে জানার জন্য অভিযুক্তদের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা দখলের বিষয়টি সত্য নয় দাবী করে উপকারভোগী হিসাবে তারা রাতের বেলায় পাহারা দেওয়ার জন্য কয়েকটি ঝুপড়ি নির্মাণ করেন বলে জানায়।
সুত্র জানায়, ফুলছড়ি বনাঞ্চলে সংঘবদ্ধ বনদস্যুদের ধারাবাহিক বনজ সম্পদ লুটপাট, পাচার বাণিজ্যের ফলে রেঞ্জের প্রায় ৫০ হাজার হেক্টরের অধীন বনভূমি উজাড় হতে চলেছে। গত শনিবার তারই ধারাবাহিকতায় দিন দুপুরে ফুলছড়ি রেঞ্জের নাপিতখালী বনবিটের অরলতলি এলাকার নজির আহমদের প্লট থেকে ২ লক্ষাধিক টাকার বিশালাকার ১৬/১৭টি আকাশমনি গাছ কেটে নিয়েছে স্থানীয় চিহ্নিত গাছ খেকোরা। খবর পেয়ে বিট কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে ২শ ফুট গাছ উদ্ধার করছে। এমনকি প্রতিদিন বন নিধনযজ্ঞ ও পাহাড় কেটে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ ও সামাজিক বনায়নের প্লটের উপর ঝুপড়ি নির্মাণের পর অভিযানে গিয়ে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা চলছেই। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে বনায়ন সৃজনের মত আর কোন পরিবেশ থাকবে না বলে মনে করেন পরিবেশবাদীরা।
নির্ভর যোগ্য সূত্রে জানা যায়, ফুলছড়ি রেঞ্জের আওতাধীন নাপিতখালী, রাজঘাট, ফুলছড়ি, খুটাখালী ও মেধা কচ্ছপিয়াসহ ৫টি বনবিট অফিসের ভিলেজার ও কয়েক হেডম্যান গাছ চোর, ভুমিখেকোদের সহায়তায় প্রায় ১৫ হাজারের অধিক অবৈধ স্থাপনা গড়ে তুলেছে। এসব স্থাপনার একাধিক মালিকরা বলেন বনবিভাগ সময়ে-অসময়ে কয়েকবার এসব বসতি ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। কিছুদিন যেতে না যেতেই পুনরায় ঘরবাড়ি ও দখল বাণিজ্যে মেতে উঠে স্থানীয়রা। ফুলছড়ি রেঞ্জের পূর্ব নাপিতখালী ভিলেজার পাড়া, জৈন্যা কাটা, খুটাখালী মধুর শিয়া, সেগুন বাগিচা ও মেধাকচ্ছপিয়া ন্যাশনাল পার্কের আশপাশ এলাকা জুড়ে প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর বনভূমি বিগত সালে সামাজিক বনায়নের আওতায় এনে দলিল হস্তান্তর করা হলেও অন্যান্য বনভূমি বনদস্যু, ভিলেজার, গাছ চোরদের থাবায় বেহাত হয়ে গেছে। এদিকে গত ১৫ জানুয়ারী থেকে জুমনগর এলাকায় সামাজিক বনায়নের বিশালাকার প্লট দখল করে ঝুপড়ি নির্মাণ করে আসছে খুটাখালী ইউনিয়নের শিয়া পাড়ার সংঘবদ্ধ চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা। এমনকি ২০ জানুয়ারী অরলতলি এলাকা থেকে আশরাফ আলীর পুত্র রমজান আলী, ইসলাম ও তার বোন জামাই ছলিমসহ আরো ৬/৭জনের বনদস্যু ২দিন ধরে গাছগুলো কেটে পাচার করে আসছিল। ঐদিন সংবাদ পেয়ে ফুলছড়ি বিট কর্মকর্তা সঙ্গীয় ফোর্স অভিযান চালিয়ে ৬৩ টুকরা ২শ ফুট গাছ জব্দ করে নিয়ে আসে।
ফুলছড়ি এসিএফ মো: বেলায়ত হোসেন বলেন, মুলত দখলদাররা এসব জায়গা দখল করে মাদকের আখড়া তৈরী করেছে। খবর পেয়ে তিনি ফুলছড়ি রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো: আবদু রাজ্জাকসহ লোকজন পাঠিয়ে ঝুপড়ি ঘরগুলো উচ্ছেদ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবী করেন।
কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা হক মাহবুব মোর্শেদের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি জেনেছেন এবং সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করবেন বলে জানান।
পাঠকের মতামত: