নিজস্ব প্রতিবেদক ::
কক্সবাজারের পর্যটন শিল্প ধ্বংস করতে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। পর্যটকদের কক্সবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে ভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার ফন্দি করছে একটি চক্র। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে কর্মহীন হয়ে পড়বে পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্ট লক্ষাধিক লোক। জীবন ও জীবিকা হারাবে সেন্টমার্টিনের বাসিন্দারা। বাড়বে বেকারত্বের অভিশাপ।
কক্সবাজারের পর্যটন স্পটের অন্যতম আকর্ষণ প্রবালঘেরা সেন্টমার্টিনে পর্যটক ভ্রমণ সীমিতকরণ ও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধকরণের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চেয়ে ট্যুর অপারেটর ওনার্স এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) এর মানববন্ধনে বক্তারা এমন মন্তব্য করেছেন।
মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনের সড়কে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যটন মন্ত্রণালয় ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথসভায় এমন সিদ্ধান্তকে ‘হঠকারী’ হিসেবে মন্তব্য করেছেন বক্তারা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। সীমিত পরিসরে অন্যান্য ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুললেও এখনো বন্ধ রয়েছে পর্যটন সংশ্লিষ্ট লক্ষাধিক লোকের জীবন জীবিকার প্রতিষ্ঠান। সামনে পর্যটন মৌসুম। তার আগে সেন্টমার্টিনে পর্যটক ভ্রমণ নিয়ন্ত্রণ ও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধকরণের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অমানবিক। কোনভাবেই এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া হবে না।
জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেন টুয়াক নেতৃবৃন্দ।
তাদের মতে, পর্যটক নিয়ন্ত্রণ করলে পরিবেশ রক্ষা হবে, এমন নয়। পর্যটন সংশ্লিষ্ট যেকোনো সিদ্ধান্তের বেলায় স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিতে হবে। একপক্ষীয় কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়ার সুযোগ নাই।
টুয়াকের সভাপতি এম রেজাউল করিম রেজার সভাপতিত্বে মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন- সাধারণ সম্পাদক এস এম কামরুজ্জামান ওবায়দুল, মিজানুর রহমান মিল্কি, আজমল হুদা, ইকবাল হোসেন সাজ্জাদ, নাছির উদ্দিন, আরিফুর রহমান, রিয়াজ তারেক, সৈয়দ ফরহান, কাদের খান, আবুল কাশেম, রিয়াজ উদ্দীন, আবুল আলা ফারুক প্রমুখ।
মানববন্ধন শেষে জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেনের সাথে সাক্ষাৎ করেন টুয়াক নেতৃবৃন্দ।
এ সময় তারা সেন্টমার্টিনে পর্যটক ভ্রমণ সীমিতকরণ ও রাত্রিযাপন নিষিদ্ধ করলে কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পের ক্ষতিকর বিষয়গুলো মৌখিকভাবে তুলে ধরেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী বরাবর একটি লিখিত স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন টুয়াক নেতৃবৃন্দ।
স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সেন্টমার্টিনের জনগণের প্রধান পেশা হলো ট্যুরিজম। তাদের বিকল্প জীবিকায়নের কথা চিন্তা না করে হঠাৎ পর্যটন নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিলে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা হুমকিতে পড়বে। জীবিকার তাগিদে বরঞ্চ পরিবেশ ধ্বংস করার সম্ভাবনা রয়েছে। সেন্টমার্টিনবাসীর বিকল্প জীবিকায়নের ব্যবস্থার মাধ্যমে এই ধরণের সিদ্ধান্তের দিকে অগ্রসর হলে উভয় দিক রক্ষা পাবে বলে পর্যটন সংশ্লিষ্টরা মনে করছে।
সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা হোক, সেটা ট্যুরিজম ব্যবসায়ীরাও চান। তবে এভাবে নয়। নিয়মতান্ত্রিকভাবে পর্যটক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে পরিবেশ রক্ষা ও পর্যটক নিয়ন্ত্রণ হবে না।
পর্যটন ব্যবসায়ীদের দাবি, পরিবেশ বাঁচাতে হবে। পাশাপাশি পর্যটন ব্যবসায়ীদের জীবন-জীবিকাও চিন্তা করতে হবে। সেন্টমার্টিন ভিত্তিক ব্যবসায়ীরা যাতে ধীরে ধীরে ইকো-ট্যুরিজমের দিকে ধাবিত হয় সেই ধরণের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত বলে তারা মনে করছে।
তাতে করে সেন্টমার্টিন নির্ভর ব্যবসায়ীরা সময়ের সাথে সাথে ইকো-ট্যুরিজমের দিকে অগ্রসর হতে পারবে। রক্ষা পাবে সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য।
এই মুহুর্তে জনগণের রুটি-রুজির বিষয়টি চিন্তা করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছেন ট্যুর অপারেটর সংগঠনগুলো।
প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে কিভাবে পর্যটন ব্যবসা করা যায় সে বিষয়ে সবাইকে কর্মপরিকল্পনা ঠিক করার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন।
পাঠকের মতামত: