স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ::
মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন টেকনাফ ও উখিয়ায় মাদকবিরোধী অভিযানের শ্লথগতি দেখে ইয়াবা ডনদের কেউ কেউ ফিরে এসেছে এলাকায়। তারা ফের শুরু করেছে ইয়াবা বিকিকিনি কারবার। বৃহস্পতিবার ভোরে টেকনাফের বিজিবি দেড় কোটি টাকা মূল্যের অর্ধ লক্ষাধিক পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পাঠানো প্রতিবেদনে মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে যাদের নাম উঠে এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় তাদের কেউ কেউ সরকারী দলের
লোক বলেই প্রকাশ্যে ঘুরছে। পুলিশ বলছে, হাতেনাতে ইয়াবা পাওয়া না গেলে তাদের গ্রেফতার করা যাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, গোয়েন্দা সংস্থা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তদন্তক্রমে মাদকসম্রাট হিসেবে যাদের বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে তারাই যে ইয়াবাসহ মাদক কারবারে জড়িত এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। সূত্র আরও জানায়, গোয়েন্দা সদস্যদের পাঠানো তালিকার বাইরে উখিয়া-টেকনাফ এলাকায় বসবাসরত ধনাঢ্য ব্যক্তিসহ অন্তত সাড়ে চার লাখ নারীপুরুষ রয়েছে। তারা মাদকে জড়িত নয় বিধায় এদের নাম তালিকায় উঠে আসেনি; যারা মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাদের নামই চিহ্নিত করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। ওসব তালিকা যাচাই-বাছাই করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে চিহ্নিত ইয়াবা সম্রাটদের তালিকা পৌঁছানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের তালিকার সূত্র ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাদকবিরোধী অভিযানে নামলে থমকে যায় টেকনাফের ইয়াবা ব্যবসা। আত্মগোপনে চলে যায় তালিকাভুক্ত ইয়াবা গডফাদাররা। গত ঈদ-উল-ফিতরকে উপলক্ষ করে কেউ কেউ ফিরে আসে এলাকায়।চকরিয়া পেৌরসদরে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। মাদক বিরোধী অভিযান চলাকালে এসব ইয়াবা ব্যবসায়ীরা পালিয়ে গিয়ে গাঢাকা দিয়েছিল। কিন্তু অভিযানে ভাটা পড়ায় ফের এলাকায় ফিরে এসে ইয়াবা ব্যবসা চারিয়ে যাচ্ছে পুরোদমে।
এদিকে কক্সবাজার শহর, টেকনাফ, উখিয়া ও চকরিয়ায় মাদকবিরোধী অভিযানে ভাটা পড়ছে এ ধারণায় তালিকাভুক্তের অনেকে ফিরে এসেছে নিজ নিজ এলাকায়। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাগণ জানিয়েছেন, তাদের অভিযান থেমে নেই। খবর পাওয়া মাত্রই নির্ধারিত স্থানে হাজির হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। সচেতন মহল জানান, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে তালিকায় নাম উঠে আসা ব্যক্তিদের কোন শত্রুতা নেই। যারা হঠাৎ অঢেল সম্পদ ও বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেছে, ইয়াবা কারবারে যারা সম্পৃক্ত, যা সত্যি, তাই রিপোর্ট দিয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। তবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের কেউ কেউ বলে বেড়াচ্ছেন, তারা ইয়াবা ব্যবসায়ী নয়। ইয়াবা সংক্রান্ত কোন মামলাও নেই। ভুলবশত তাদের নাম তালিকাভুক্ত হয়েছে। অভিজ্ঞ মহল জানায়, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কতিপয় অসৎ কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে ইয়াবা গডফাদাররা প্রকাশ্যে এসেছে এলাকায়। আবারও শুরু করে দিয়েছে ইয়াবা কারবার। বিজিবি সাবরাং চান্দলীপাড়া ও কাটাবনিয়ায় পৃথক অভিযান চালিয়ে ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা মূল্যমানের ৫২ হাজার পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। এ অভিযানে ইয়াবা চোরাচালানি কাউকে আটক করতে পারেনি বিজিবি। টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অতিরিক্তি পরিচালক মেজর শরীফুল ইসলাম জোমাদ্দার জানান, ৪ জুলাই দিবাগত রাতে চান্দলীপাড়া সুপারিবাগানে ৪০ হাজার এবং ৫ জুলাই রাতে কাটাবুনিয়া পুরানপাড়া এলাকার বেগুন ও বরবটিতে লুকানো অবস্থায় ১২ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে বিজিবি।
এদিকে টেকনাফ মডেল থানা পুলিশ শুক্রবার ১২৭ কোটি টাকার মাদক ধ্বংস করেছে। ধ্বংসকরণ অনুষ্ঠানে গত ছয়মাসে জব্দ করা পণ্যের মধ্যে ছিল ৪২ লাখ পিস ইয়াবা, সাড়ে ৩ হাজার টিন বিয়ার, ৪৫০ বোতল বিদেশী মদ, ৩শ’ বোতল ফেনসিডিল ও ৩শ’ লিটার চোলাই মদ। একই দিন সকালে টেকনাফ বিজিবি ১৫৯কোটি ১৮লাখ ২৫হাজার টাকা মূল্যের মাদকদ্রব্য ধ্বংস করেছে। তন্মধ্যে ইয়াবার সংখ্যা ছিল ৫২লাখ ৫৯হাজার ৮৬৭পিস।
সূত্র জানায়, রামু গোয়ালিয়ার মোস্তাক মেম্বার, টেকনাফের হ্নীলার শামসুল আলম ওরফে বাবুল মেম্বার, নুরুল হুদা মেম্বার, সাইফুল আলম, টেকনাফের ভুট্টো ও শাহজাহান সিন্ডিকেটের কারণে মিয়ানমার থেকে দেশে ইয়াবার চালান আসা থামছে না। যদিও চারদিন আগে বাবুল মেম্বার ও সাইফুল প্রকাশ ইয়াবা সাইফুলকে বিজিবি আটক ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে দুই বছর করে সাজা দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে। ওই বাবুল মেম্বার, সাইফুল, নুরুল হুদা, ভুট্টো, শাহজাহান ও গোয়ালিয়ার মোস্তাকের গঠিত একাধিক সিন্ডিকেট এলাকায় রয়ে গেছে। তাদের নামের তালিকাও নেই প্রশাসনের কাছে। তাই তারা নিয়মিত ইয়াবার চালান আনছে দেশে। গোয়ালিয়ার মোস্তাককে ধরিয়ে দিতে রামু থানার তৎকালীন ওসি লিয়াকত আলী ১লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। সম্প্রতি তিনি অন্যত্র বদলি হয়ে গেলে মোস্তাক মেম্বার প্রকাশ ইয়াবা মোস্তাক ফিরে এসেছে দেখে এলাকায় কানাঘুষা চলছে। রামু থানার বর্তমান ওসি মিজানের সঙ্গে ওই মোস্তাকের সখ্য রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। টেকনাফ থানার ওসি রণজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা প্রদান করা বাবুল মেম্বারের বিরুদ্ধে ৬টি এবং সাইফুলের বিরুদ্ধে ৩টি মাদক সংক্রান্ত মামলা রয়েছে টেকনাফ থানায়। ওসব মামলার বিবরণ সংবলিত প্রমাণাদি শীঘ্রই আদালতে দাখিল করা হচ্ছে।
পাঠকের মতামত: