বিশেষ সংবাদদাতা :
পত্রিকায় নিউজ আসলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। ওদের হাত অমেক লম্বা। ওদেরকে কেউ থামাতে পারবে না। ওদের বিরোদ্ধে প্রশাসনে কি অভিযোগ করবো? সবইতো ওদের ,আমি বিষম অতংকের মধ্যে অছি। আমি বাঁচতে চাই । থানায় অভিযোগ করলে আমিই বিপদে পড়বো। এরা যবুলীগের সভাপতির ভাই তাই চাঁদা নিলেও আমার করার কিছু করার নাই।স্থানীয় সংবাদ কর্মীদের কথাগুলো খুব ভয়ে ভয়ে কান্না জড়িত কন্ঠে বলেছিলেন ডাক্তার মোঃ হারুন অর রশিদ।
পেকুয়ায় এক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসককে আটকিয়ে ও জিম্মী করে চেকে স্বাক্ষর আদায় করে নিল সেই চাঁদাবাজ চক্র। অভিনব কৌশলে তাকে জিম্মী করা হয়। এ সময় মারাত্মক ভীতি ও আতংক দেখিয়ে তার কাছ থেকে ব্যাংক চেকে ৭০ হাজার ও নগদ ৮৫ হাজার টাকাসহ ১ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। উপজেলার পেকুয়া সদর ইউনিয়নের কবির আহমদ চৌধুরী বাজারের পূর্ব পাশের্^ নুর হাসপাতাল ও ডায়গনষ্টিক সেন্টারে এ ঘটনা ঘটেছে।
গত ১ মাস আগে এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হয়। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীরা চাঞ্চল্যকর এ খবর জানতে ওই চিকিৎসকের কাছে ছুটে যান। এ সময় গণমাধ্যম কর্মীদের এ সম্পর্কিত বিষয়ে সরাসরি বক্তব্য উপস্থাপন সহ মুখ খোলেন। সংবাদ কর্মীরা তার এ বক্তব্য রেকর্ড করে। পরবর্তীতে চাঞ্চল্যকর চাঁদাবাজির এ স্বাক্ষাৎকার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়। গত দুই দিন ধরে পেকুয়ায় চিকিৎসককে আটকিয়ে চাঁদা নেওয়ার এ দৃশ্য সর্বত্রে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
চাঁদাবাজ চক্র ওই চিকিৎসককে প্রাণে হত্যার হুমকি অব্যাহত রাখে। এক পর্যায়ে ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়া এ স্বাক্ষাৎকার তার নয় মর্মে স্বীকারোক্তি আদায় করে। তারা সেটিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে ছড়িয়ে দেয়। এক দিকে আটকিয়ে ব্যাংক চেকে স্বাক্ষর ও নগদ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এ সম্পর্কিত স্বপক্ষে চিকিৎসকের বক্তব্য ছড়িয়ে পড়ে। অপরদিকে ওই চিকিৎসক এমন বক্তব্য সংবাদ কর্মীদের উপস্থাপন করেননি এমন স্বাক্ষাৎকার ছড়িয়ে পড়া নিয়ে হত বিহবল অবস্থা তৈরী হয়েছে।
হারুনুর রশিদ পেকুয়ায় প্রায় ৩০ বছর ধরে চিকিৎসা কাজে ব্যস্ত। তিনি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। উপজেলায় চিকিৎসা কর্মে তিনি বেশ পরিচিত। নুর হাসপাতালে তার চেম্বার। ওই চিকিৎসক জানায়, গত কয়েক বছর ধরে তাকে লাগাতর চাঁদা দিতে বাধ্য করা হয়েছে। উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের পরিবার তার কাছ থেকে দফায় দফায় চাঁদা নেয়। অন্তত ২০ বারেরও বেশী তিনি এ পরিবারকে চাঁদা দিতে বাধ্য হন। গত ১৮ জুলাই একদল যুবক তার চেম্বারে ঢুকে পড়ে। বিকেলে তারা ডাক্তার হারুনুর রশিদকে চেম্বারে অবরুদ্ধ করে। এ সময় তারা আক্রমনাত্মক ছিল। ধারালো অস্ত্র উঁচিয়ে তার কাছ থেকে টাকা দাবী করে। এ সময় চরম ভয় ও আতংকের মধ্যে পড়ে ওই চিকিৎসক। তার কাছ থেকে নগদ ৮৫ হাজার টাকা ও ব্যাংক চেকে আরও ৭০ হাজার টাকা লিপিবদ্ধ করে তারা সটকে পড়ে।
মোজাম্মেল ওরফে মোকা নামের এক ব্যক্তিকে রোগী সাজায় এ সময় চিকিৎসার কথা বলে অভিনব কৌশলে তাকে ওই চিকিৎসকের কাছে পৌছায় চাঁদাবাজ চক্র। ভুল চিকিৎসা হয়েছে এমন বক্তব্য প্রচার করে। এর সুত্র ধরে যুবলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীর আলমের ছোট ভাই মো: আজমগীর প্রকাশ আজম, তার ভাই ওসমান সরওয়ার বাপ্পীসহ ১০/১৫ জন যুবক উত্তেজিত অবস্থায় ওই চেম্বারে প্রবেশ করে। তারা ভিতরে ঢুকে দরজা আটকিয়ে দেয়। এ সময় ডা: হারুনকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। গালিগালাজসহ তাকে মারধরসহ শারীরিক লাঞ্চিত করে। তারা ড্রয়ার থেকে নগদ ৮৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয়।
এ সময় জোরপূর্বক ব্যাংক চেকে স্বাক্ষর নেয়। এমনকি তারা একটি অলিখিত নন জুড়িশিয়াল ষ্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নিতে প্রচেস্টা চালায়। চিকিৎসক পায়ে ধরে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া থেকে বিরত রাখে। ডা: হারুন জানায়, আমি চরম নির্যাতনের শিকার। একজন চিকিৎসক কি ধরনের যন্ত্রনায় আছি সেটি প্রকাশ করা হচ্ছে না। মাসে তিন- চার দফা চাঁদা দিতে হচ্ছে। বিভিন্ন অজুহাতে এ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। গত কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনের আগে আজম আমার কাছ থেকে ভোটের কথা বলে টাকা নিয়েছে।
মোকা নামের এ যুবক ছিল আজমের পাঠানো। তারা কৌশলে তাকে পাঠিয়ে আমাকে জিম্মী করে। মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে এ টাকা ও ব্যাংক চেক ছিনিয়ে নেয়। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পেকুয়া শাখায় আমার হিসাব নং। তারা খালি চেকে স্বাক্ষর নেয়। পরবর্তীতে একজন সাবেক ব্যাংকারের সন্তান ওই চেক পুরন করে। টাকার অংক তারা লিখে। আমি আমার স্ত্রীকে এ অসহ্য যন্ত্রনার বিবরন বলে আসছিলাম। তবে আর কাউকে বলতে সাহস হয় না। পেকুয়ায় তারা প্রচন্ড ভয়ংকর ও শক্তিধর। প্রশাসন সহ সব কিছু এদের কথায় ওঠাবসা করে। আমি প্রতিবাদ করলে জঙ্গী বলে প্রচার করে। আজম ভয়ংকর ব্যক্তি। আমার স্ত্রী তার বড় ভাই জাহাঙ্গীর মেম্বারকে অনেকবার বিষয়টি বলেছেন।
পেকুয়ায় চিকিৎসা করছি।এখানকার মানুষের সাথে আমার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। নতুন জায়গায় যাওয়ার মত পরিস্থিতি নেই। এ জন্য পেকুয়ায় থেকে গেছি। এ দিকে চিকিৎসক হারুনুর রশিদকে জিম্মী করে টাকা ও চেক হাতিয়ে নেওয়ার এ স্বাক্ষাৎকার সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এ দৃশ্য স্থানীয়রা প্রত্যক্ষ করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক থেকে। তবে বিষয়টি নিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন এ চিকিৎসক। সংবাদ কর্মীরা চাঁদাবাজির এ বিষয়ে তার কাছ থেকে বক্তব্য নেয়। তারা সেটি যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
পাঠকের মতামত: