ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’ মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। সোমবার সাড়ে ১১টায় জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেনের সভাপতিত্বে প্রস্তুতি সভায় উপকূলের অন্তত ৫ লাখ মানুষের নিরাপদ আশ্রয়ের রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দূর্যোগকালীন সময়ে তাদের জন্য সেহেরী ও ইফতারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকাসমূহে চলছে সতর্কতামূলক মাইকিং।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা, ট্রলার এবং সমুদ্রগামী জাহাজকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
কক্সবাজারের ৮টি উপজেলার সাধারণ মানুষের কাছে দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ মেডিকেল টিম গঠনসহ সর্বাত্মক আগাম প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ৮৮টি মেডিকেল টীম। খোলা হয়েছে উপজেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম।
জেলা প্রশাসক সুত্র জানায়, উপকূলের ৫৩৭টি আশ্রায়নকেন্দ্রকে প্রস্তুত করা হয়েছে। এছাড়া উপকূলবর্তী সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে অস্থায়ী আশ্রায়নকেন্দ্র ঘোষণা দেয়া হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে সরকারী ছুটি। পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থার পাশাপাশি ৪ হাজারের অধিক স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
‘মোরা’ থ্যাইল্যান্ডের প্রস্তাবিত নাম। এটি ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উত্তর মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থিত গভীর নিন্মচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রুপ নিয়েছে। ঘুর্ণিঝড়টি সরাসরি চট্টগ্রাম, নোয়াখালির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এটি মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে রাত ১০ টার ভিতরে চট্টগ্রাম, নোয়াখালি ও এর পার্শবর্তী এলাকা অতিক্রম করতে পারে। বর্তমানে ঘুর্ণিঝড়টি ক্রমশ উপকূলের দিকে গতিশীল রয়েছে। উপকূলে আঘাত হানার পূর্বে ঝড়টি যথেষ্ট শক্তি সঞ্চয় করবে একই সাথে ক্রমশ ধীর গতিতে অগ্রসর হতে থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রম করার সময় ঐসকল এলাকায় ঘন্টায় ১০০ থেকে ১৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত থাকতে পারে।
ওই সকল এলাকার উপকূল ও চরদ্বীপ স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২০ থেকে ২৫ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তর।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে সতর্ক সংকেত সাত ৭ ও পায়রা ও মংলা বন্দরকে ৫ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘুর্ণিঝড় ‘মোরা’ চট্টগ্রাম থেকে ৫৭০ কিলোমিটার দক্ষিনে, কক্সবাজার থেকে ৪৯০ কিলোমিটার দক্ষিনে, পায়রা বন্দর থেকে ৫৪৫ কিলোমিটার দক্ষিনে ও মংলা থেকে ৫৮০ কিলোমিটার দক্ষিনে অবস্থান করছে বলে জানান আবহাওয়া অধিদপ্তর। বর্তমানে এটি উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
ঘূর্ণিঝড় এর প্রভাবে দেশের উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ ভারি বর্ষন ও চট্টগ্রাম কক্সবাজারে পাহাড় ধ্বস হতে পারে।
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলবর্তী দক্ষিণাঞ্চল। ঝড়ের মূল শক্তি দ্বারা সম্ভাব্য আক্রান্ত জেলার মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম(১০), কক্সবাজার(১১), ফেনী(১৬), নোয়াখালী(৪৭) এই চারটি জেলা সহ আশপাশের এলাকা। এর মধ্যে চট্টগ্রাম(১০) ও কক্সবাজার(১১) সব থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
দেশের উপকূলবর্তী এলাকায় সম্ভাব্য বিপর্যয় ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট সকলকে একযোগে কাজ করে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন কক্সবাজার রেড-ক্রিসেন্ট সোসাইটির সহ-সভাপতি সাবেক পৌর চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল আবছার।
পাঠকের মতামত: