কিছুতেই রোধ করা যাচ্ছেনা মরণ নেশা ইয়াবা বানিজ্য। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম, কক্সবাজার-টেকনাফ এ একটি সড়ক দিয়ে ইয়াবা পাচার বন্ধ করতে কক্সবাজার জেলার পুলিশ প্রসাশনকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারের তৈরি ইয়াবার বিস্তার বর্তমানে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শহরের অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় বানিজ্যিক এলাকা সহ পাড়া মহল্লায় হাত বাড়ালেই পাওয়া যাচ্ছে ইয়াবা। উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার থেকে প্রতিদিনই এদেশে ঢুকছে লাখ লাখ পিচ ইয়াবার চালান। প্রায় সময় ইয়াবা আটকের ঘটনা ঘটলেও ইয়াবার চালান আসা বন্ধ হয়নি। বরং প্রায় প্রতিদিনই এর সাথে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সদস্য। উখিয়া, টেকনাফ উপজেলার আনাচে-কানাচে ইয়াবা পাচারে নারী পুরুষ, রোহিঙ্গা যুবক, যুবতী থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরা সক্রিয় কর্মীরাও জড়িয়ে পড়েছে। গত ২ ফেব্র“য়ারী ভোর রাতে ২০ হাজার পিচ ইয়াবা সহ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ থানা পুলিশের হাতে আটক হয়েছে উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড যুবলীগ সভাপতি নুর মোহাম্মদ মিজান সহ তার সিন্ডিকেটের ৭ সদস্য। যাদের অধিকাংশ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী। তবে, রাজাপালং ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রাসেল উদ্দিন সুজন জানান, আটককৃত মিজানকে ১ মাস আগে সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে বহিস্কার করা হয়েছে।
জানা গেছে, উখিয়া টেকনাফ উপজেলার অন্ততপক্ষে ২০ টি ইয়াবা সিন্ডিকেট তৎপর রয়েছে মরণঘাতী এ বানিজ্য। প্রায় প্রতিদিনই আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে দেশের বিভিন্নস্থানে ইয়াবা আটকের ঘটনা ঘটছে। এসব আটকের ঘটনা ঘটলেও প্রসাশনের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঠিকই নিদিৃষ্ট গন্তব্যে ইয়াবা পাচার করে যাচ্ছে। আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানে ইয়াবা আটকের সময় মাঝে মধ্যে পাচারকারী আটক হলেও এর সাথে জড়িত রাঘববোয়াল বা গডফাদাররা আটক না হওয়ায় ইয়াবা পাচার বন্ধ করা যাচ্ছে না বলে স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ।
উখিয়া টেকনাফ সীমান্তের মাদক ব্যবসার সাথে সংশিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, উখিয়া উপজেলার দরগাবিল, ডিগলিয়া, ডেইল পাড়া, টাইপালং, তুমব্র“, ঘুমধুম, বালুখালী, উলুবনিয়া, ধামনখালী, টেকনাফের হ্নীলা নয়াপাড়া সাম্পানঘাট, টেকনাফ বন্দর, শাহপরীরদ্বীপ, জালিয়াপাড়া, নাইটংপাড়া দিয়ে প্রতিদিন লাখ লাখ পিচ ইয়াবার চালান অনায়াসে পাচার হয়ে এসে উখিয়া টেকনাফের নিদ্দিষ্ট কয়েকটি গুদামে জমা হয়। পরে সুযোগ বুঝে রোহিঙ্গা যুবক যুবতীসহ সিন্ডিকেটের সদস্যরা এসব ইয়াবা সড়ক পথে কক্সবাজার, চট্টগ্রাম ও রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সিন্ডিকেটের হাতে পৌঁছে দেয়। এছাড়াও পর্যটকবেশী কতিপয় পাচারকারী বিলাস বহুল গাড়ীতে করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অভিনব কায়দায় ইয়াবা পাচার করে যাচ্ছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন অনেক ক্ষেত্রে পর্যটক মনে করে এসব গাড়ীগুলো তল্লাসীর বাইরে রাখে। শুধুমাত্র উখিয়া উপজেলায় ১০ টির অধিক ইয়াবা সিন্ডিকেট স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে মাসিক চুক্তিতে ম্যানেজের মাধ্যমে তাদের ব্যবসা ওপেন সিক্রেটভাবে চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব সিন্ডিকেটের মধ্যে উপজেলার হরিনমারার ফরিদ সিন্ডিকেট, জাদিমুরার হেলাল সিন্ডিকেট, দুছড়ির আতা উল্লা ও মীর আহামদ সিন্ডিকেট, বালুখালী পানবাজারের বকতার, জাহাঙ্গীর, এনাম সিন্ডিকেট ও ফজল কাদের ভূট্টো সিন্ডিকেট, উখিয়ার খোকা সিন্ডিকেট অন্যতম। উল্লেখিত প্রতিটি সিন্ডিকেটে ৫০ জনের মত যুবক, যুবতী রয়েছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। এদের মধ্যে অনেকেই আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী হিসেবে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজের মাধ্যমে ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে ইয়াবা বানিজ্যর লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না বলে স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ। এদিকে বিগত কয়েক বছর ধরে ইয়াবা সহ মানব পাচার করে উখিয়ার অনেকেই এখন কোটিপতির খাতায় নাম লিখিয়েছে। টাকার গরমে অনেকের আবার জনপ্রতিনিধি হওয়ার আশায় খায়েশ হয়েছে। আসন্ন ইউপি নির্বাচনে প্রায় অর্ধ শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী জনপ্রতিনিধি হওয়ার জন্য মাঠ ময়দান চষে বেড়াচ্ছেন। তাদের অবৈধ টাকার কাছে সৎ, যোগ্য প্রার্থীরা হারিয়ে যাচ্ছে। এ কারণে এসব সম্ভাব্য প্রার্থীদের শীঘ্রই আইনের আওতায় আনার দাবী জানান এলাকাবাসী।
সূত্রে জানা গেছে, ৯০ দশকে নেশার জগতে প্রবেশ করে ইয়াবা। শুরুতে দুবাই, পাকিস্তান থেকে ল্যাগেজ পাট্টির মাধ্যমে এসব ইয়াবা এদেশে প্রবেশ করলেও তা ছিল ব্যয় বহুল ও সীমিত আকারে। এ সময় এক একটি ইয়াবা ট্যাবলেট ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হওয়ার সুবাদে ইয়াবা ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল নগন্য। ২০০৫ সালে পাশ্ববর্তী দেশ মিয়ানমারে এসব ইয়াবা তৈরি শুরু হয়। মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন নেশা জাতীয় উপকরণ ও কাচাঁমাল দিয়ে স্বল্প ব্যয়ে ইয়াবা তৈরি করে এদেশে পাচার করতে থাকে। মিয়ানমারের তৈরি এক একটি ইয়াবা ৫০/৬০ টাকায় বিক্রি হলেও এসব ইয়াবা সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে টেকনাফে আসার পর ঘুষ লেনদেন সহ প্রতিটির মূল্য দাড়াঁয় ১০০/১২০ টাকা । পরে এসব ইয়াবা কক্সবাজার চট্টগ্রামে ৩ থেকে ৫ শত টাকায় অনায়াসে বিক্রি হওয়ার সুবাধে ব্যাপক চাহিদা ও অল্প পুঁিজতে বেশী লাভবান হওয়ার আশায় ইয়াবা পাচারে ঝুকে পড়ে শিক্ষিত ও অশিক্ষিত যুব সমাজ। বর্তমানে ইয়াবা পাচার ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পাড়ার কারণে রোহিঙ্গা যুবক যুবতী সহ উখিয়া- টেকনাফের সহস্রাধিক স্মাট যুবক হোন্ডা, মাইক্রো ও বিশাল বহুল গাড়ী নিয়ে ইয়াবা পাচারে নিয়োজিত রয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে আবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কর্মী। তারা বিভিন্ন সময় রুট পরিবর্তনের মাধ্যমে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে প্রসাশনের চোখ ফাঁকি দিয়ে। উখিয়া- টেকনাফের উঠতি বয়সী যুবকরা ছাড়াও দেশের অভিজাত পরিবারের যুবক যুবতীরাও কম সময়ে কোটিপতি হওয়ার নেশায় ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে উখিয়া টেকনাফের সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল মালেক মিয়া জানান, প্রতিদিনই ইয়াবা আটকের ঘটনা ঘটছে। সড়ক পথে সুনিদ্ধিষ্ট তথ্য ছাড়া ইয়াবা আটক করা কঠিন। তবুও আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
পাঠকের মতামত: