কক্সবাজারের উখিয়ায় পাহাড়ী এলাকায় উন্নত বিশ্বের আদলে প্রস্তাবিত অত্যাধুনিক মানের সু-বিশাল ওপেন কারাগার ও পুনঃবাসন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন আইজিপি (প্রিজন) বিগ্রেডিয়ার সৈয়দ ইফতেকার উদ্দিন। সবুজ অরণ্য বেষ্টিত বিশাল পাহাড় ও নির্জন পরিবেশ বান্ধব জায়গা দেখে তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন। গতকাল শুক্রবার বিকালে আইজিপি (প্রিজন) সরজমিনে পরিদর্শনে আসেন। ৩শত ২৫ একর সরকারি খাস জায়গায় ওপেন কারাগারটি নির্মাণ করছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণলায়। উক্ত কারাগার নির্মাণের লক্ষ্যে ভূমি অধিগ্রহণ ও হস্তান্তর প্রক্রিয়া ইতি মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
উপজেলার হলদিয়া পালং ইউনিয়নের উত্তর বড়বিল প্রস্তাবিত এলাকা পরিদর্শন শেষে গ্রামবাসীর সাথে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইজিপি (প্রিজন) বিগ্রেডিয়ার জেনারেল সৈয়দ ইফতেকার উদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরাসরি নির্দশেই এতদঞ্চলে বাংলাদেশে এই প্রথম বিশ্বমানের ওপেন কারাগার নির্মাণ হতে যাচ্ছে। এটি হলে উখিয়া নামক উপজেলাটি ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হবে। তিনি আরো বলেন, জেল খানায় বন্দিরা আমাদের ভাই, আতœীয় ও দেশেরই লোক। তাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করতে হবে। তাই বর্তমান সরকার বন্দি কয়েদিদের কে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে পূন:বাসনের জন্য ওপেন কারাগার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে ২৫টি ট্রেড সেন্টার খোলা হবে। হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন, কক্সবাজার কারাগারের জেল সুপার বজলুল রশিদ, বেসরকারি কারাপরিদর্শক আবুল মনসুর চৌধুরী, উখিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো: আবুল খায়ের, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) নূর উদ্দিন মোহাম্মদ সীবলী, গণপূর্ত অধিদপ্তরের উপ: বিভাগীয় প্রকৌশলী এস.এম.এ জাহিদ অপু, স্থানীয় বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আজিজুল হক চৌধুরী, উখিয়া সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি ফারুক আহমদ, সৌদি আরব বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হাজী গিয়াস উদ্দিন, সভাটি পরিচালনা করেন, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সাংবাদিক রাসেল চৌধুরী। পরিদর্শনকালে উপস্থিত ছিলেন উখিয়া ভূমি অফিসের সার্ভেয়ার, তহশীলদার, কানুনগো, রামু উপজেলা তহশীলদার আবুল কাশেম, মাষ্টার ইসমাইল, ডা: নাছির উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ।
জেল সুপার বজলুর রশিদ জানান উত্তর বড়বিল গ্রামে পরিত্যক্ত ৩শত ২৫.৫০ একর সরকারী খাস জমিতে ওপেন কারাগার ও পুনঃবাসন কেন্দ্রটি হবে বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ কারাগার। উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাথমিক কাজ শুরু করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে স্থান নির্বাচন, সম্ভাব্যতা যাচাই, প্রাক্কলন তৈরী ও ভূমি অধিগ্রহণ কাজ সম্পন্ন করা হয়। জেল সুপার আরও জানান ওপেন কারাগার ও পুনঃবাসন কেন্দ্র নির্মানে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪শ কোটি টাকা।
জেলা কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, পাবলিক বা ওপেন কারাগার ও পুনঃবাসন কেন্দ্রে প্রচলিত জেলখানার মত আসামিদের নির্দিষ্ট স্থানে ও লকআপে বন্দি রাখা হবে না। আসামিরা মুক্ত বিহঙ্গের মত ঘুরে বেড়াতে পারবেন। বিভিন্ন ধরণের কুটির, হস্তশিল্প, মৎস্য চাষ, ফার্ণিচার তৈরী, হাসমুরগী পালন সহ গবাদি পশু মোটা তাজা করণ সহ আয় বর্ধন মূলক কাজ করতে পারবে কয়েদিরা। শুধু তাই নয় কৃষি জমিতে চাষাবাদ করে পারিশ্রমিক ও আয় করে কারাগারে বসে সংসারের জীবিকা নির্বাহ করা যাবে। এমন কি পরিবার পরিজনের সাথে মোবাইলে কথাবলা, দেখা সাক্ষাৎ করার সুযোগ থাকবে।
স্থানীয় চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ শাহ আলম বলেন উত্তর বড়বিল এলাকায় ওপেন কারাগার ও পুনঃবাসন কেন্দ্র নির্মানে বর্তমান সরকার যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন তা ইতিবাচক। এর ফলে অবহেলিত এলাকার অভুত পূর্ব উন্নয়ন ও স্থানীয় অধিবাসীদের জীবণযাত্রার মান পরিবর্তন হবে। উত্তর বড় বিল গ্রামের বাসিন্দা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও শিক্ষা অনুরাগী আজিজুল হক চৌধুরী জানান এই এলাকাটি স্বাধীনতার ৪৫ বছর পরও উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। নেই কোন যোগাযোগ ব্যবস্থা, নেই বিদ্যুৎ, এমনকি জীবণ-জীবিকার কর্মসংস্থান। এ ধরনের সু-বিশাল কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় এলাকাবাসীদের মাঝে আনন্দ ও উচ্ছাস দেখা দিয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে অবহেলিত এলাকাটি আলোকিত হয়ে উঠবে।
পাঠকের মতামত: