ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

ঈদগাঁও বাঁশঘাটা সেতু ৪ ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের দূর্ভোগ

Bashgata_bridge picসেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও (কক্সবাজার) প্রতিনিধি :::

কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁও,ইসলামাবাদ,পোকখালী, ইসলামপুরসহ ৪ ইউনিয়নের প্রায় লক্ষাধিক মানুষের যাতায়াতের একমাত্র বাঁশঘাটা সেতু বর্ষা মৌসুমের আগে পুনঃনির্মাণের দাবী এলাকাবাসীর। ২০১৫ সালের জুন মাসে ভারী বর্ষণ ও উপর থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে বাঁশঘাটা ঈদগাঁও নদীর উপর নির্মিত সেতুর উত্তর পাশের্^ প্রায় ৪০ মিটার ভেঙ্গে পড়ে যায়। ইসলামাবাদ সংযোগ সেতুটি এখনো পুনঃনির্মাণ না করায় ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, গোমাতলী সড়কে বাজার এলাকা থেকে সরাসরি যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে ৪ ইউনিয়নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীসহ লাখো মানুষ। গুরুতর অসুস্থ কোন রোগীকে দ্রুত উন্নত চিকিৎসার জন্য ঈদগাঁও বাজারে নেয়ার রাস্তা নেই। ফলে ঈদগাঁও বাজারের সাথে দ্রুত যোগাযোগের জন্য ঈদগাঁও নদীর উপর বাঁশঘাটা সেতু দ্রুত নির্মাণ এখন সময়ের দাবী হয়ে দাড়িয়েছে।

সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, ইসলামাবাদ, গোমাতলী, ইসলামপুরসহ প্রায় লক্ষাধিক মানুষের প্রাণের দাবী বহুদিনের এ দাবীর সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেন রামু-কক্সবাজার আসনের সাংসদ আলহাজ¦ সাইমুম সরওয়ার কমল, উপজেলা চেয়ারম্যান জি.এম রহিমুল্লাহ সচেতন মহল। এ সেতু দিয়ে ঈদগাঁও বাজারে যাতায়াত সহজ এবং কাছের হওয়ায় বর্ণিত ৪ ইউনিয়নের মানুষজন তাদের উৎপাদিত সামগ্রী এবং দূরত্ব কম থাকার কারণে বিভিন্ন স্থান থেকে খুব সহজেই দ্রুত যোগাযোগ স্থাপনসহ পণ্য আনা-নেয়া, রোগীকে চিকিৎসা দেয়াসহ স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় যাতায়াত করে থাকে। বাঁশঘাটা রোডের ডা. শওকত ওসমান বলেন, প্রসব ব্যাথা হলে যেমন ঈদগাঁও বাজার কাছে হওয়ায় সহজে যাওয়া যায়। সেখানে সেতুটি নির্মাণ হলে খুবই ভাল লাগবে এবং স্বাস্থ্য সেবা তড়িৎ পাওয়া যাবে। মানুষের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গেলে অবশ্যই যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল থাকতে হবে।

মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ডাঃ শামসুল হুদা জানান, বাঁশঘাটা রোডের ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বাণিজ্য এখন খুবই খারাপ যাচ্ছে। এর উন্নতির জন্য বাঁশঘাটা সেতুর বিকল্প নেই। সেতুটি নির্মাণ হলে ঈদগাঁও বাজারের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগের দূরত্ব কমে আসবে প্রায় ১ কিলোমিটার পথ। ফলে যাতায়াতে সময় ও খরচ বাঁচবে এবং উন্নয়ন হবে ৪ ইউনিয়নের প্রায় ১ লাখ মানুষের।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, সেতুটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর যাতায়াত সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। বর্তমানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও জনগনের সহায়তায় কাঠ দিয়ে প্রায় ঝুলন্ত ব্রীজের আদলে সেতুটি মোটামুটি যাতায়াত উপযোগী করলেও বর্ষা মৌসুমে ২০/২৫ ফুট উঁচু হয়ে নেমে আসা ঢলের ¯্রােতের টানে সেতুটি আবার ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ। ফলে নদীর উত্তর পাড়, ইসলামাবাদ, গোমাতলী, বোয়ালখালীসহ কমপক্ষে ২০টি গ্রামে উৎপাদিত কৃষি পণ্য, শিল্পপণ্য সহজ ও সাশ্রয়ীভাবে বাজার জাত করতে না পারার আশংকায় রয়েছে। তাই সাংসদ উপজেলা, জেলা পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের একাধিক প্রতিশ্রুতি এবং নানামুখী তদবিরের দীর্ঘদিন পর সেতুটি নির্মাণের দাবী উক্ত ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষের। তবে জনগুরুত্ব বিবেচনায় রেখে দ্রুত এ সেতুর কাজ শুরু করে বর্ষার আগে কাজ শেষ করার দাবী জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৯৮ সালে ১৩ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৭ ফুট চওড়া ও ৫২ মিটার লম্বা এ সেতুটি নির্মাণের আগে সেতুটির নিচ দিয়ে খনন করে ¯্রােতের গতি ঠিক করতে হবে বলেও জানান সংশ্লিষ্টরা।

সূত্রে জানা গেছে, ঈদগাঁও বাঁশঘাটা সেতু নির্মাণসহ জেলার প্রায় ৯০টি সেতু কালভার্ট নির্মাণে সরকারের দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক এ প্রকল্পের কার্যাদেশ প্রদান প্রায় শেষ পর্যায়ে। ৮টি উপজেলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেতু কালভার্ট নির্মাণ কর্মসূচী বাস্তবায়নের মধ্যে বাঁশঘাটা ব্রীজের কথাও রয়েছে। ২০১৬-১৭ জেলার অর্থ বছরে এসব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় ২৫ কোটি টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে বলে সূত্রে প্রকাশ। এসব অর্থ শুধুমাত্র সেতু কালভার্ট ও গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণে ব্যয় করা হবে।

জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ শাখা প্রণয়নকৃত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরের উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বিবরণসূত্রে জানা যায়, জেলা ত্রাণ শাখার তত্ত্বাবধান ও তদারকির মাধ্যমে এ সেতুর কাজ শীঘ্রই শুরু করবে। সূত্রমতে, জেলার মোট ২১৭টি প্রকল্প জনগুরুত্বের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে পর্যায়ক্রমে প্রকল্পগুলি যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন করা হবে। উক্ত প্রকল্পের মাধ্যমে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বরাদ্ধ রেখে প্রায় ৯কোটি টাকা, যা জেলার প্রতিটি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এবং উক্ত অফিসের প্রধান সহকারী বলেন, এসব কর্মসূচী বাস্তবায়নের ফলে জনদূর্ভোগ নিরসনসহ গ্রামীণ অবকাঠামো পূর্বের তুলনায় শক্তিশালী ও সমৃদ্ধ হবে।

এ ব্যাপারে জেলা পরিষদ প্যানেল চেয়ারম্যান-২ সোহেল জাহান চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এমপি কমলের বরাদ্ধ থেকে বাঁশঘাটা সেতুটি পুনঃনির্মাণ করা হবে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে টেন্ডার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পাঠকের মতামত: