সেলিম উদ্দিন, ঈদগাঁও, কক্সবাজার প্রতিনিধি ::
ইটভাটা গিলছে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঈদগাঁওর উর্বর ফসলি জমি। হেক্টরের পর হেক্টর জমির ওপরের স্তর ভাটার পেটে যাওয়ায় কমছে জমির উর্বরা শক্তি। নিম্নমানের কয়লা পোড়ানোয় বাড়ছে দূষণ। নষ্ট হচ্ছে ফসলের খেত, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন হাজারও কৃষক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঈদগাঁয়ে অধিকাংশ ইটভাটা গড়ে উঠেছে লোকালয়ে। ফসলি জমি উজাড় করে নতুন নতুন ইটভাটা গড়ে উঠছে। ফসলহানি ছাড়াও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে পড়ছে মানুষ। সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে পর্যায়ক্রমে আইন অমান্যকারীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার সদর কৃষি দফতরের হিসাবে, মাত্র ৬টি ইউনিয়নে ৭টি ইটভাটা গড়ে উঠেছে ঈদগাঁওয়ে। ইটভাটায় চলে যাওয়া জমির পুরোটাই উর্বর ফসলি খেত।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, শুকনা মৌসুমে যেসব বিলে পানি থাকে না, সেসব বিলের ফসলি জমিতে ইটভাটা গড়ে উঠেছে বা উঠছে। এতে ফসলি জমি কমছে, চাপ পড়ছে কৃষির ওপর। গত ১০ বছরে অন্তত অর্ধডজনাধিক ইটভাটা গড়ে উঠেছে ঈদগাঁওর বিভিন্ন এলাকায়। এখন ইটভাটার সংখ্যা প্রায় ৭টি। এর মধ্যে কটি’র নিবন্ধন রয়েছে তার সুনিদিষ্ট তথ্য পাওয়া যায়নি।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের হিসাব অনুযায়ী, ঈদগাঁওয়ে যে সব ভাটা রয়েছে এর মধ্যে ১২০ ফুট এবং ১৩০ ফুট উচ্চতার স্থায়ী চিমনির ইটভাটা। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী স্থায়ী চিমনি ইটভাটার সবগুলো অবৈধ। জিগজ্যাগ এবং হফম্যান হাউব্রিড ইটভাটাকে বৈধ বলা হচ্ছে।
পরিবেশ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, কঠোর নজরদারির পর দেয়া হয় পরিবেশ ছাড়পত্র। ছাড়পত্র পাওয়া ভাটাগুলোতে চলে নজরদারি। নিয়মিত ব্যবস্থা নেয়া হয় আইন ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে। জেল-জরিমানাও হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পরিবেশ অধিদফতরের গাফেলতির কারনে ব্যাহত হচ্ছে কঠোর নজরদারি। এ সুযোগে যত্রতত্র গড়ে উঠছে ইটভাটা। এগুলোর দু-একটির বিরুদ্ধে মাঝে মধ্যে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলেও বেশির ভাগই নির্বিঘেœ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে ঈদগাঁওর কৃষি ও পরিবেশে।
ফল গবেষকরা জানায়, ইটভাটা থেকে নির্গত ছাই আশপাশের গাছপালা ও ফসলের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। ছাই ও বস্তুকণা গাছের পত্ররন্ধ্র বন্ধ করে দিচ্ছে, উদ্ভিদের সালোক সংশ্লেষণ ও শ্বষণ প্রক্রিয়াকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। কার্বনডাই অক্সাইড ও সালফারডাই অক্সাইড মিশ্রিত ছাই ধান, আম, কাঁঠাল, লিচু, শিম, কুমড়াসহ নানাবিধ ফসলের রেণুকে বিনষ্ট করছে। ফলে ফসলের উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে যাচ্ছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক। তার মতে অনাবাদি কিংবা এক ফসলি জমিতে ইটভাটা নির্মাণ করা যায়। কিন্তু ঈদগাঁওর অধিকাংশ ইটভাটা গড়ে উঠেছে দুই ফসলি জমিতে। অনেক সময় ভাটা মালিকরা জমি কিনে নিয়ে কয়েক বছর অনাবাদি ফেলে রাখেন। পরে অনাবাদি দেখিয়ে ছাড়পত্র নেন। ভাটা মালিকরা প্রভাবশালী হওয়ায় কৃষি দফতরের কিছুই করার থাকেনা। এ নিয়ে জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরকে ব্যবস্থা নেয়ার তাগিদ দেন তিনি।
জনবল সঙ্কটে কার্যক্রম জোরদার করা যাচ্ছে না বলে স্বীকার করেছেন কক্সবাজার পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক তিনি বলেন, চিঠি দিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তার দাবি, এ জনবল দিয়েই স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও কার্যক্রমে গতি আনতে প্রথম শ্রেণির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আরও জনবল দরকার।
ইট প্রস্তুতকরণ ও ভাটা স্থাপন-সংক্রান্ত ২০১৩ সালের আইন অনুযায়ী, জেলা প্রশাসকের অনুমোদন ছাড়া ভাটা স্থাপন ও ইট পোড়ানো নিষিদ্ধ। এ আইন লঙ্ঘনকারী এক বছরের কারাদন্ড অথবা এক লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। কিন্তু ঈদগাঁওতে এ আইন লঙ্ঘন করেই বেশির ভাগ ইটভাটায় ইট বানানো ও পোড়ানোর কাজ চলছে।
যোগাযোগ করা হলে এ নিয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও নেজারত ডেপুটি কালেক্টর।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঈদগাঁওর জনৈক ইটভাটা মালিক বলেন, নিবন্ধন প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ এবং জটিল। ফলে মোটা বিনিয়োগের পর পুরো প্রক্রিয়া পর্যন্ত অপেক্ষা না করে অনেকেই ইটভাটা চালু করেছে বলে তিনি দাবী করেন।
পাঠকের মতামত: