শাহিদ মোস্তফা শাহিদ, কক্সবাজার সদর :
খাদ্য সংকট ও বনাঞ্চল ধ্বংসের কারনে ঈদগাঁওয়ের লোকালয়ে বন্য হাতি ঢুকে পড়ছে প্রতিনিয়ত। হাতির কবলে পড়ে নিহতের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। এছাড়া হাতি আতংকে দিন কাটাচ্ছে ঈদগাঁও, ইসলামাবাদ, ইসলামপুর এলাকার হাজার হাজার বাসিন্দা। বন্য হাতির কবলে পড়ে বিগত ৫ বছরের ১৮ জন লোক অকালে প্রাণ হারিয়েছে এবং আহত হয়েছে ২০-২৫ জন।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা যায়, বিগত বছর গুলোতে পাহাড়ে লাকড়ি সংগ্রহ, জুমচাষ, পাহাড়ের পাদদেশে বাঁশ- গাছ আনতে গিয়ে এবং নানা কার্য সম্পাদন করতে গিয়ে বন্য হাতির কবলে পড়ে নিহত হয়েছে প্রায় ১৮ জনেরও অধিক এবং আহত হয়েছে ২০-২৫ জনের বেশি। বন্য হাতির উপদ্রব দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা জানান, নির্বিচারে বন ধবংস, পাহাড় কাটা, বনের মধ্যে খাদ্য সংকট দেখা দেওয়ায় জীব বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ছে। শুধু বন্য হাতি নয়, লোকালয়ে নেমে আসছে অজগার সাপ, হরিণসহ বিভিন্ন প্রজাতির বন্য প্রাণী। তীব্র খাদ্য সংকট, বন ধ্বংস, আশ্রয়স্থল না থাকায় বন্য প্রাণীরা লোকালয়ের বিভিন্ন বাসাবাড়িতে হানা দিচ্ছে। বন্যহাতি গুলো আশ্রয় খুঁজে না পেয়ে প্রায়সময় লোকালয়ে ডুকে পড়ে এবং রোপনকৃত ধান সহ বিভিন্ন ক্ষেত খামার বসত বাড়ীতে তান্ডব চালায়। অনুরূপ গত ১৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে হাতি তাড়াতে গিয়ে ঈদগাঁও চান্দেরঘোনা এলাকার নুরুল ইসলামের পুত্র জসিম উদ্দীন প্রকাশ লাদেন নিহত হয়েছে। প্রতিবছর লোক মারা গেলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। নিহত কয়েক পরিবারকে সরকারীভাবে অর্থ সহযোগিতা করা হলেও আহতরা রয়েছে সর্বস্বহীনতায়। জীবনের তাগিদে এলাকার হাজার হাজার লোক প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে বনাঞ্চলে। সকাল বেলায় লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে অনেকেই প্রাণ হারায়। এছাড়া সারাদিনের কাজ শেষে রাতে পাহাড়ের পাদদেশে চাষ করা ধানক্ষেত পাহারা এবং বিভিন্ন ফলজ বাগানে কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারায় শুধু মাত্র জীবনের জন্য বাঁচার তাগিদে। মানুষ মরণশীল এটা চিরন্তন সত্য কিন্তু এভাবে বন্য হাতির কাছে এলাকার দরিদ্র জনগণ মৃত্যুবরণ করবে তা খুবই বেদনাদায়ক ও হৃদয় বিদারক।
নিহতদের স্বজনরা জানান, বনাঞ্চলে একটি হাতি অভয়ারণ্য নির্মাণ হলে অকালে এত লোক মারা যেত না। এমনকি বনখেকো, পাহাড় খেকোদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল। তারা আরো জানান, বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে একটি বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য নির্মাণ করা হোক।
এদিকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে জানা গেছে, ২০১৪ সালে হাতির আক্রমণে নিহত হন ঈদগাঁও ইউনিয়নের কালিরছড়া পূর্বপাড়ার সুলতান আহমদের স্ত্রী মোর্শিদা আক্তার, সুলতান আহমদের পুত্র শামসুল আলম, উত্তর পাড়ার বেলাল উদ্দীনের পুত্র শহিদুল্লাহ, ২০১৩ সালে কালিরছড়া শিয়া পাড়ার ছলিম মিস্ত্রির পুত্র মাহবুবুল আলম, ২০১২ সালে ভুতিয়া পাড়ার ইউছুপ আলীর পুত্র ২০১৩ সালে ইসলামপুর জুমনগরের রাজা মিয়া, পূর্ব নাপিতখালীর মোহাব্বত আলীর পুত্র নাপিতখালী স্কুলের নাইটগার্ড হাসান আলী, একই এলাকার জোহরা খাতুন, জুমনগর এলাকার গুরা মিয়ার পুত্র ছৈয়দ আলম, ২০১২ সালে ঈদগাঁও ভাদিতলার ইমাম উদ্দীনের পুত্র জাফর আলম, ২০১৩ সালে জাগির পাড়ার উল্টা মিয়া, দরগাহ পাড়ার ওলা মিয়া, ২০১৬ সালে চান্দেরঘোনার কালা মিয়ার পুত্র গুরা মিয়া, ১৫ সালে আবদুর মতলব নামের এক রোহিঙ্গা, ২০১২ সালে ইসলামাবাদ গজালিয়ার মোহাম্মদুর রহমানের স্ত্রী, ২০১৪ সালে পূর্ব গজালিয়ার সিরাজুল হকের পুত্র মোজাফ্ফর আহমদ, ২০১৫ সালে গজালিয়ার এডভোকেট বাদশার শ^শুর ছৈয়দনুর, পূর্ব গজালিয়ার শামসুল আলমের পুত্র আজিজুল হক। আহতদের মধ্যে পঙ্গুত্ববরণ করেছে কালিরছড়া উত্তর পাড়ার মৃত আবদুল আজিজের পুত্র বেলাল উদ্দীন, কালিরছড়া পূর্বপাড়ার নজির আহমদের পুত্র আবদুল আজিজ, ঈদগাঁও ভাদিতলার মৃত আবদুল করিম চৌকিদারের পুত্র ছুরত আলম, দরগাহ পাড়ার ওমর হামজার পুত্র নজির আহমদ, ইসলামাবাদ পূর্ব গজালিয়ার মৃত সুলতান আহমদের পুত্র আবুল কাশেম, চান্দেরঘোনার মোক্তার আহমদসহ অনেকে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয়রা বর্তমানে নানা ভয়-ভীতি ও আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাত করছে। পাহাড়ের পাদদেশ এলাকায় দিন কাটাচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত খামারের চাষীরা। এলাকার সর্বস্তরের মানুষের দাবী, হাতির উপদ্রব কমাতে এবং হাতির কবল থেকে রক্ষা পেতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
পাঠকের মতামত: