কক্সবাজার সদরের ঈদগাঁওতে চলমান জেএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস চেষ্টার অভিযোগে এক শিক্ষককে জরিমানা করেছে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শাহীনুর ইসলাম। ১২ নভেম্বর শনিবার ইংরেজী ২য় পত্রের পরীক্ষার দিন এঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম জুয়েল কান্তি দে। সে ঈদগাহ জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের খন্ডকালীন শিক্ষক। জানা যায়, কক্সবাজার ৫ কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব ও উল্লেখিত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অধিকতর ভাল ফলাফল এবং বিদ্যালয়ে এ প্লাসের সংখ্যা বাড়ানোর জন্য প্রতিদিন পরীক্ষা চলাকালীন ঈদগাঁও পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের লকার থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ করে কেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে কেন্দ্র সংশ্লিষ্ঠ অন্যান্যেেদর অলক্ষ্যে সীলগালা যুক্ত প্রশ্নপত্রের প্যাকেট খুলে মাল্টিমিডিয়া মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ছবি করে ইমুর মাধ্যমে অভিযুক্ত শিক্ষকের মুঠোফোনে পাঠিয়ে দেন। প্রশ্ন পাওয়ার অপেক্ষায় ওই শিক্ষক পূর্বে থেকে ঈদগাঁও বাজারের জাগির পাড়াস্থ জনৈক সোলাইমানের কলোনীতে ৪০/৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে সকাল ৮ টা থেকে অপেক্ষা করে থাকেন। অতঃপর প্রশ্ন হাতে আসার পর পরই তা শিক্ষার্থীদেরকে জানিয়ে দেওয়া হয় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়। বিষয়টি নিয়ে কানাঘুষা চলে আসছিল বেশ কদি’ন ধরে। কক্সবাজার ২ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সদর উপজেলা পরিসংখ্যান অফিসার মোঃ মুমিন খান আঁচ করতে পেরে (ভেন্যু ঈদগাহ্ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র) ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯ টা’র দিকে তিনি পরীক্ষা কেন্দ্রের গেইটে দায়িত্বরত দু’জন সিপাহীকে সাথে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। বিষয়টি অভিযুক্ত শিক্ষক জুয়েল আঁচ করেন এবং সাথে সাথে তার নের্তৃত্বে অজ্ঞাতনামা আরো কয়েকজন মেইন গেইট বন্ধ করে দিয়ে যে যার মতো করে পালানোর চেষ্টা করে। পরে সিপাহীদের একজন দেয়াল টপকে মেইন গেইট খুলে দিলে সেখানে পূর্বে থেকে অবস্থানরত স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীসহ ওই বিদ্যালয়ের ২৫ জন শিক্ষার্থীকে পাওয়া যায় বলে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুমিন খান জানান। তিনি আরো জানান, অভিযুক্ত শিক্ষক জুয়েল ইত্যবসরে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন এবং তিনি শিক্ষার্থীদের হাতে থাকা প্রবেশপত্রগুলো জব্দ করেন এবং পরীক্ষার্থী মেয়েদের সাথে করে নিয়ে এসে পরীক্ষা কেন্দ্রের হলে প্রবেশ করান ও বিষয়টি সদর উপজেলা নির্বার্হী কর্মকর্তাকে অবগত করান। কেন্দ্র কর্মকর্তা আরো জানান, বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য জুয়েল শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ঠিক আধা ঘন্টা পূর্বে এভাবে জড়ো করেছিল। তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়াতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর কেউ করতে সাহস পাবেনা বলে তিনি মন্তব্য করেন। এলাকার সচেতন মহল অসাধুদের বিরুদ্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করাতে সংশ্লিষ্ঠ সকলকে সাধুবাদ জানিয়েছে। এদিকে পরীক্ষা শেষে কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শিক্ষার্থীদের জেরা করেন এবং পরে ৪ টা’র দিকে ইউএনও সদর পরীক্ষা কেন্দ্রে এসে অভিযুক্ত শিক্ষককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ও গতকাল অনুষ্ঠেয় ইংরেজী পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের সাথে শিক্ষার্থীদেরকে ওই শিক্ষকের ধরে দেওয়া প্রশ্নের হুবুহু মিল খুঁজে পান। সংশ্লিষ্ট শিক্ষক নিজেকে প্রথমে এ ঘটনায় নির্দোষ দাবী করেন। অভিযুক্ত শিক্ষক দাবী করেন এসময় তিনি তার বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াচ্ছিলেন। ইউএনওর অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। পরে ইউনএও অভিযুক্ত শিক্ষককে পুলিশে সোপর্দ করার প্রক্রিয়া শুরু করলে ওই শিক্ষক নিজের দোষ স্বীকার করে ইউএনওর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং ইউএনও প্রথম বারের মত মানবিক বিবেচনায় অভিযুক্ত শিক্ষককে ২ হাজার টাকা জরিমানা করেন ও সংশ্লিষ্ঠ শিক্ষক তাৎক্ষনিকভাবে জরিমানার টাকা নগদ পরিশোধ করেন। ইউএনও সদর ভবিষ্যতে অভিযুক্ত শিক্ষককে এধরনের কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে সাবধান করে দেন। এসময় ঈদগাঁও তদন্ত কেন্দ্রের এএসআই ফিরোজ ও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের কয়েকজন অভিভাবকও উপস্থিত ছিলেন। কক্সবাজার ২ কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব ও ঈদগাহ্ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খুরশীদুল জন্নাত ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেন। ঘটনার ব্যাপারে জানতে ঈদগাহ জাহানারা ইসলাম বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কক্সবাজার ৫ কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব গিয়াস উদ্দিনের সাথে মুঠোফোনে বার বার যোগোযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করাতে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি। ঘটনার শিকার শিক্ষার্থীর অভিভাবকেরা কেন্দ্র সচিবের বিরুদ্ধে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এলাকার সচেতন মহল ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত পূর্বক ওই কেন্দ্র সচিবের বিচার দাবী করেছেন।
পাঠকের মতামত: