গিয়াস উদ্দিন ভুলু, টেকনাফ :::
আলোচিত ইয়াবা গডফাদার জামাল মেম্বারকে আটকের জের ধরে টেকনাফ থানার প্রধান ফটক অবরুদ্ধ করে শতাধিক নারী ও যুবক। ২৯ জুলাই শনিবার সৌয়া ১১ টার দিকে হ্নীলা এলাকা থেকে কয়েকটি গাড়ী যোগে টেকনাফ থানার সামনে এসে ইয়াবা গডফাদার জামাল মেম্বারের মুক্তির দাবী করে। প্রায় এক ঘন্টা ধরে থানার প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শ্লোগান দিতে থাকে। পরে তাদের পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে দেয়। তবে ইয়াবা গডফাডারদের ছাড়িয়ে নিতে এ ধরনের অবরোধে কারা উৎসাহ যুগিয়েছেন তা খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করছেন এলাকার সচেতন মহল।
গত শুক্রবার সন্ধ্যায় থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) বোরহান উদ্দীনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ হ্নীলা ষ্টেশন এলাকা থেকে তাকে আটক করে। এ খবরে ইউপি সদস্য জামাল হোসেনের ছেলে শাহজালাল এলাকায় ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে ত্রাস সৃষ্টির চেষ্টা চালায় বলে জানা গেছে। তবে ইউপি সদস্য জামাল মেম্বারকে নিয়ে পুলিশ রাতে অভিযানে নামে। এ পর্যায়ে রঙ্গীখালী নিজ বাড়ী থেকে একটি দেশীয় তৈরি এলজি, চার রাউন্ড তাজা কার্তুজ ও সাড়ে ১৫ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এর জের ধরে সকালে জামাল মেম্বারের সমর্থক নারী, পুরুষ শিশুরা থানার ফটক অবরোদ্ধ করে রাখে।
এক পর্যায়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (উখিয়া-টেকনাফ) সার্কেল চাইলাউ প্রু মারমার নেতৃত্বে থানার পরিদর্শক তদন্ত শেখ আশরাফুজ্জামানসহ একটি টিম বাহির থেকে এবং থানার পরিদর্শক অপারেশন শফিউল আজমের নেতৃত্বে থানার ভিতর থেকে নারী পুলিশসহ একটি টিম যৌথভাবে ধাওয়া করে অবরোধকারীদেরকে চত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়।
প্রত্যক্ষদশী একাধিক লোকজন জানান, জামাল মেম্বারের আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বেশ কিছু ভাড়াটিয়া নারী এ অবরোধে অংশ নেয়। এসব প্রতিবাদকারীদের জনপ্রতি ৫শ টাকা ধরিয়ে দিয়ে থানা অবরোধে আনা হয়।
অবরোধে আসা রঙ্গীখালীর আবুল কালামের স্ত্রী আমিনা বেগম জানান, তারা রোহিঙ্গা নন, এলাকার দানশীল ও ভাল মানুষ হিসাবে আমরা তার মুক্তি চাইতে এসেছি।
এ প্রসংঙ্গে টেকনাফ মডেল থানার পরিদর্শক অপারেশন শফিউল আজম বলেন, ইয়াবা গডফাদারকে ছাড়িয়ে নিতে ইয়াবা কারবারীদের সহযোগীদের নিয়ে কিছু রোহিঙ্গা নারী, শিশুসহ তার সমর্থকরা থানার প্রধান ফটক অবরোদ্ধ করে রাখে। বার বার বলার পরও ছড়ে না যাওয়ায় এক পর্যায়ে ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে।
টেকনাফের মানবাধীকার কর্মী এম আলী জানান, লেদা অনিবন্ধিত ক্যাম্পের খালেদা ও হোসনে আরা নামে দুই রোহিঙ্গা নারীকে থানার প্রধান ফটকের সামনে মিছিলরত অবস্থায় দেখে বিম্মিত হয়েছি। নিশ্চয় অসহায় এসব নারীদের টাকার বিনিময়ে এ কাজে ব্যবহার করেছে ইয়াবা গডফাদাররা।
টেকনাফ মডেল থানার পরিদর্শক তদন্ত শেখ আশরাফুজ্জামান জানান, টেকনাফের আলোচিত ইয়াবা গডফাদারকে জামাল মেম্বারকে আটকের পর স্বীকারোক্তীতে অস্ত্র, গুলি ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। এ সংক্রান্ত বিষয়ে অস্ত্র ও মাদক আইনে পৃথক মামলা করা হয়। এছাড়াও মাদক ও অস্ত্র আইনসহ তিনটি মামলা রয়েছে। তার পরিবারের বিরুদ্ধে এলাকায় ব্যাপক ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগও রয়েছে বলে জানায়।
এদিকে গত ২৬ জুলাই হ্নীলা রঙ্গিখালীর মকবুল আহমদের ছেলে অটোরিক্স চালক আব্দুল গফুরকে জামাল মেম্বারের ছেলে ইয়াবা গডফাদার শাহ আজমসহ একদল সন্ত্রাসী বাড়ি থেকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে অপহরণ করে গাছে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন চালায়। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের আসামী করে টেকনাফ মডেল থানায় মামলা দায়ের করা হয়।
পাঠকের মতামত: