ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

ইউএনও নোমান হোসেনের বদলী মানতে পারছে না জনগণ

শাহেদ মিজান, কক্সবাজার :
মাত্র আট মাসের মধ্যে কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ নোমান হোসেন প্রিন্সের বদলীর আদেশ জারি করা হয়েছে। তাকে বান্দরবান সদরে বদলীর আদেশ হয়েছে। বুধবার এই আদেশ জারির বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার সাথে কক্সবাজারের সকল স্তরের মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছেন। কারণ নোমান হোসেন প্রিন্স মাত্র আট মাসে কক্সবাজারে এক অভূতপূর্ব কর্মযজ্ঞ দেখিয়েছেন। দেখিয়েছেন- জনগণের সেবা, অনিয়মের বিরুদ্ধে অ্যাকশন আর উন্নয়নের এক মোহনীয় চিত্র। তাই তাঁর এই অপ্রত্যাশিত বদলী মানতে পারছেন না কক্সবাজারের জনগণ।

ক্ষুব্ধ কক্সবাজারের মানুষের দাবি, মোঃ নোমান হোসেন মাত্র আট মাসে যে কাজ করেছেন অতীতে পাঁচ বছরেও তা হয়নি। তবে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা মানুষের বিপদে ছুটে গেছেন এই কর্মপাগল, সৎ ও জনদরদী এই কর্মকর্তা। তাই তাঁর হঠাৎ বদলীর খবরে কক্সবাজারের মানুষ বিস্মিত ও আঘাত পেয়েছেন। নোমান হোসেনের এই বদলীর ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করছেন যেখানে জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ীসহ সাধারণ মানুষ। অন্যায় ও নীতি বিরুদ্ধে কাজে বাধা দেয়ায় স্বার্থবাদী রাজনৈতিক মহল তাঁকে বদলী করিয়েছেন বলে দাবি মানুষের।


মোঃ নোমান হোসেন প্রিন্সের বদলী ও ষন্ত্র দাবী করে বুধবার থেকে ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় চলছে। শুধু ফেসবুক নয়; কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে মানুষের মাঝেও সমালোচনা হচ্ছে। সবার দাবি, স্বার্থন্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মোঃ নোমান হোসেনের বদলীর আদেশ হয়েছে।

দাবি মতে, মোঃ নোমান হোসেন প্রিন্স এসিল্যান্ড থেকে পদোন্নতি পেয়ে ইউএনও হিসেবে প্রথম যোগ দেন কক্সবাজারে। তিনি যোগ দেয়ার পর কক্সবাজারের সরকারি জমি উদ্ধার, পাহাড় কাটা বন্ধে অভিযান, ভেজাল ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে এক অভূতপূর্ব নজির স্থাপন করেছেন। তাঁর এই কঠোরতার কারণে কক্সবাজারে এসব অপরাধ অনেক নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। সেই সাথে বাল্য বিবাহ রোধ, পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধ রোধেও কাজ করেছেন তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, তিনি সাধারণ মানুষের সমস্যা জানলে তাৎক্ষণিক ছুটে যান ভুক্তভোগীর সান্নিধ্যে। এর আগে তিনি মহেশখালীতে এসিল্যান্ডের দায়িত্বে ছিলেন। সেখানেও তিনি ভূমি সেবায় বিরল সেবার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছিলেন।


অভিযোগ মতে, নানা ধরণের অপরাধের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেয়া অপরাধীরা মোঃ নোমান হোসেনর উপর বরাবরই ক্ষুব্ধ ছিলেন। তিনি সবার রক্ষচক্ষুকে উপেক্ষা করে নিজের নিষ্ঠায় অবিচল থেকে অপরাধ ও অনিয়ম দমনে থমকে যাননি। এসব অপরাধীদের মধ্যে অধিকাংশই রাজনৈতিক পরিচয়ধারী। সর্বশেষ একটি ঘটনা থেকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারের এক শীর্ষ জনপ্রতিনিধি তাঁর উপর ক্ষুব্ধ হন। ওই জনপ্রতিনিধিই ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ইউএনও মোঃ নোমান হোসেনের বদলীতে কলকাঠি নেড়েছেন। আর সাথে অন্যান্য অপরাধীদেরও

যোগসূত্র রয়েছে।

এদিকে ইউএনও মোঃ নোমান হোসেনের বদলীর ঘোষণার পর কক্সবাজারের মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে থেমে থাকেনি। তারা ওই সৎ কর্মকর্তার বদলীর আদেশ প্রত্যারে সোচ্চা হয়েছেন। এই জন্য অনেকে মানবন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশসহ বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচীর ঘোষণা দিচ্ছেন।

সচেতন নাগরিক মঞ্চ কক্সবাজার চ্যাপ্টারের প্রধান সমন্বয়ক কাফি আনোয়ার বলেন, ‘অতীতে স্মরণকালে ইউএনওদের স্বচক্ষে দেখতে পায়নি আমজনতা। কিন্তু মোঃ নোমান হোসেন প্রিন্স হলেন ব্যতিক্রম। তিনি অসহায় খেটে খাওয়া- সর্বোপরি সাধারণ মানুষের কাছে থাকেন। তাদের কোনো বিপদের কথা শুনলেই গভীর রাতেও ছুটে যান। তাঁর কার্যালয়ও সাধারণ মানুষের জন্য সব খোলা থাকে। এমনকি তার বাসায়ও সমস্যা পর্যবসিত মানুষ অনায়সে যাতায়াত করতে পারে।’

কাফি আনোয়ার আরো বলেন, ‘মোঃ নোমান হোসেন প্রিন্স দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করতে সদা প্রস্তুত থাকেন। এই জন্য তিনি কাউকে পরোয়া করেন না। তার সৎ সাহস, নিষ্ঠা ও জনগণের প্রতি ভালোবাসার যে স্পৃহা তা সহজে দেখা মেলে না। কিন্তু দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করতে গিয়েই তিনি রাজনৈতিকভাবে ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছেন। সম্প্রতি ঘটিত কক্সবাজার সরকারি কলেজের একটি ঘটনাই তার কারণ। কিন্তু আমরা তাঁর বদলী মেনে নিচ্ছি না। আমরা এই আদেশ প্রত্যাহার চাই। এই জন্য বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচী হাতে নিয়েছি। প্রয়োজনে বৃহত্তর আন্দোলনে যাবো।’

সদরের জালালাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান ইমরুল রাশেদ বলেন, ‘গত দু’বছরে কক্সবাজার সদর উপজেলায় চারজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বদলী করা হয়েছে। এটা সামগ্রিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা। বিশেষ করে মোঃ নোমান হোসেনের শূন্যস্থানটা সহজে পূরণ হবার হয়।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ নোমান হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা জনগণের সেবক। কিন্তু একথাটা অনেকে ভুলে যায় বা মানে না। জনগণের সেবক হিসেবে আমি নিজেকে প্রতিটি মুহূর্ত জনগণের সেবায় নিয়োজিত থাকার চেষ্টা করেছি। এই জন্য কোনো অপরাধীকে আমি প্রশ্রয় না দিই না। পাশাপাশি আমি নিজেকে জনগণের একজন মনে করে তাদের খুব কাছাকাছি থাকার চেষ্টা করি।’

জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘বদলী বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দেখে। সেখানে আমার কোনো মন্তব্য বা করার কিছু থাকে না। তবে কক্সবাজার সদরে গত ১৫ মাসে চারজন ইউএনও বদলী হওয়ার বিষয়টি উদ্বেগজনক। এতে সরকারের উন্নয়ন কাজে বড় ব্যাঘাত ঘটে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ যদি তার প্রত্যাহার করে তাহলে বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।’

পাঠকের মতামত: