আয়োডিন বিহীন ভেজাল লবণ প্রক্রিয়াজাত করে বাজারজাত করার অভিযোগে কক্সবাজারের ইসলামপুরে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ব্রাক সল্ট ইন্ডাষ্টিজ ও মদিনা সল্ট রিপাইরিং এর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল পিউর ফুড আমলী আদালতে সদর উপজেলা স্যানেটারী ইন্সেপেক্টর নুরুল আলম বাদী হয়ে গত রবিবার ১৯৮৯ সালের বিশুদ্ধ খাদ্য আইন এবং নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর সংশোধিত বিভিন্ন ধারা মোতাবেক এ মামলাটি দায়ের করেছে। এ দিকে গত ২৬ মার্চ দৈনিক কক্সবাজার পত্রিকায় এ সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের ইসলামপুর শিল্প এলাকার ব্রাক সল্ট, হক সল্ট আর.এম সল্ট, মদিনা সল্ট মমতাজ সল্ট ও মিল্লাত সল্ট নামক ৫টি লবণ উৎপাদন ও বিপননকারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আয়োডিন বিহীন ভয়াবহ ভেজাল লবণ বিক্রি করছে বলে তদন্ত রির্পোটে চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ঢাকা মহাখালী জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের ল্যাবরেটরী পাবলিক এনালিষ্ট মাজেদা বেগম স্বাক্ষরিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে আয়োডিন বিহীন লবণ উৎপাদন ও বিক্রির ভয়াবহের চিত্র তুলে ধরা হয়। যার স্মারক নং- পিএইচ এল/খাদ্য/৮৫৫ ও ৮৫৬ তারিখ ২৫-০২-২০১৬ইং তারিখ। উক্ত রির্পোটে উল্লেখ করা হয়েছে যেখানে লবণের আয়োডিন, সোডিয়াম ক্লোরাইড ও ৪৫ থেকে ৫০শতাংশ থাকার কথা সেখানে পাওয়া গেছে ১০ থেকে ১২ শতাংশ মাত্র।
খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজারের সদর উপজেলার ইসলামপুর হচ্ছে লবণ উৎপাদন ও প্রক্রিয়া জাতের একমাত্র বিসিক এরিয়া। সেখানে রয়েছে শতাধিক সল্ট কারখানা। গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, সবকয়টি কারখানায় আয়োডিন বিহীন লবণ প্রক্রিয়া জাত করে ক্রয়-বিক্রি করা হচ্ছে। সরকারের সু-নির্দিষ্ট প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ রয়েছে, লবণ উৎপাদন, প্রক্রিয়া জাত করন ও প্যাকেট জাত করনের সময় অবশ্যই আয়োডিন মিশাতে হবে। আয়োডিন বিহীন কোন লবণ প্যাকেট জাত করন করে বাজার জাত করা নিষিদ্ধ রয়েছে। গুরুতর অভিযোগ উঠেছে, ইসলামপুরে গড়ে উঠা লবণ কারখানা গুলোতে দীর্ঘদিন ধরে আয়োডিন বিহীন লবণ প্যাকেট জাত করে বাজারে দেদারছে বিক্রি করে আসছে। বিদেশী দাতা সংস্থা ইউনিসেফ বিনা মূল্যে আয়োডিন সরবরাহ করলেও কারখানার মালিকগণ লবণ প্রক্রিয়া জাত করনের সময় তা মিশ্রিত না করে কালো বাজারে চড়ামূল্যে বিক্রি করে দেয়। সূত্রে প্রকাশ সরকার আয়োডিন অভাব জনিত রোগ প্রতিরোধের বিধান প্রণয়ন কল্পে ১৯৮৯ সালে আইন সংশোধন করে লবণে আয়োডিন ব্যবহারের জন্য প্রস্তাব গৃহিত হলে রাষ্ট্রপ্রতি তা সম্মতি দেন।
এদিকে সদর উপজেলা স্যানেটারি ইন্সেপেক্টর নুরুল আলমের নেতৃত্বে একদল পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি দল গত ১০ ফেব্রুয়ারী ইসলামপুর লবণ উৎপাদন কারী কারখানা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শকালে ব্রাক সল্ট, হক সল্ট আর.এম সল্ট, মদিনা সল্ট মমতাজ সল্ট ও মিল্লাত সল্ট নামক কারখানা হতে লবণ সংগ্রহ করেন। উক্ত সংগৃহিত লবণে আয়োডিনের পরিমান পরীক্ষা করতে গত ১১ ফেব্রুয়ারী ঢাকা মহাখালী জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটে প্রেরণ করা হয়।
সদর উপজেলা স্যানেটারি ইন্সেপেক্টর নুরুল আলম জানান, গত ২৫ ফেব্রুয়ারী পরীক্ষাগার থেকে যে, তদন্ত রির্পোট প্রেরণ করেছে তা খুবই ভয়াবহ অর্থাৎ যেখানে আয়োডিনের পরিমান থাকার কথা ৪৫ থেকে ৫০ শতাংশ সেখানে মাত্র ১০ থেকে ১২শতাংশ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়। তাই বিশুদ্ধ খাদ্য আইনে ব্রাক সল্ট ইন্ডাষ্টিজের ম্যানেজার তবিবুল রহমান ও মদিনা সল্ট রিপাইরিং এর ম্যানেজার জহিরুল ইসলাম মাঝির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে অন্যান্য সল্ট ইন্ডাষ্টিজ এর বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি চলছে।
ঢাকা মহাখালী জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের পাবলিক এনালিষ্ট মাজেদা বেগম স্বাক্ষরিত উক্ত রির্পোটে উল্লেখ করেছে ১৯৬৭ সনের বাংলাদেশ বিশুদ্ধ খাদ্য আইন মোতাবেক এবং রাষ্ট্রপ্রতি ১৯৭২ সনের অনুমোদিত ৪৮ নং আদেশ অনুযায়ী আয়োডিন অভাব জনিত রোগ প্রতিরোধ আইন ১৯৮৯ এর ১০ নং ধারা মোতাবেক কক্সবাজারের ইসলামপুর ব্রাক সল্ট, হক সল্ট আর.এম সল্ট, মদিনা সল্ট মমতাজ সল্ট ও মিল্লাত সল্ট নামক কারখানার উৎপাদিত প্রক্রিয়া জাত করন লবণ বেজাল বলে বিবেচিত হইল।
খোজখবর নিয়ে জানা যায়, শুধু এ ৫টিতে নই ওই এলাকায় শতাধিক লবণ কারখানায় আয়োডিন বিহীন লবণ উৎপাদন ও প্রক্রিয়া জাত করন করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এমনকি লবণের প্যাকেটে উৎপাদনের তারিখ, উৎপাদনকারীর নাম ও ঠিকানা, ব্যাচ নং ও আয়োডিনের পরিমান সু-স্পষ্ট ভাবে প্যাকেটে উল্লেখ করার বিধান থাকলেও ভোজ্য লবণের প্যাকেটে কোন কিছু উল্লেখ না করে বিপনন করছে।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা যায়, ঢাকার মহাখালী জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের ল্যাবরেটরীর পরীক্ষার রির্পোটে আয়োডিন বিহীন ভেজাল লবণ বিক্রি প্রমাণিত হওয়ায় ইসলামপুরের ব্রাক সল্ট, হক সল্ট আর.এম সল্ট, মদিনা সল্ট মমতাজ সল্ট ও মিল্লাত সল্টের মালিক ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিয়েছে বলে সত্যতা নিশ্চিত করেছেন জেলা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
পাঠকের মতামত: