ঢাকা,রোববার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪

আশ্রায়ন প্রকল্পগুলো প্রভাবশালীদের আবাসিক কলোনী

সৈয়দুল কাদের ।।
গৃহহীনদের জন্য নির্মিত আশায়ন প্রকল্পের ঘরগুলো এখন প্রভাবশালীদের আবাসিক কলোনী। বিভিন্ন স্থান থেকে এসে আশ্রয় গ্রহন করা লোকজনকে তাড়িয়ে দিয়ে প্রকল্পের সভাপতি ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের জোগসাজসে ঘর দখল করে কেউ দিয়েছে ভাড়া আবার কেউ বানিয়েছে গোয়াল ঘর। যার ফলে আশ্রয়হীনরা পথে পথে ঘুরলেও মাথাগোজার ঠাই হচ্ছে না আশ্রায়ন প্রকল্পে।
সরকার গৃহহীনদের বাসস্থান করে দেওয়ার জন্য আশ্রায়ন প্রকল্প নির্মাণের মাধ্যমে বিপুল অর্থ ব্যয় করলেও তা কোন কাজে আসছে না। স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বাররা অনিয়মের মাধ্যমে নিজেদের আত্মীয় স্বজন ও প্রভাবশালীদের নামে এবং ভুয়া নামে ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন। তারাই দখল করে আছে অধিকাংশ ঘর। যে কয়জন বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে ঘর নিয়েছেন তাদের বিভিন্ন কৌশলে চলে যেতে বাধ্য করছে স্থানীয়রা।
সরেজমিনে দেখা যায় মহেশখালীর শাপলাপুরেরর মুরুংঘোনা আশ্রায়ন প্রকল্প-১ এর ৩০টি পাকা ঘরের মধ্যে লোকজন আছে শুধুমাত্র ১০টিতে। আর ২০টি বাড়িতে কেউ নেই। তৎমধ্যে ১৪ টি ঘর ভাড়া দিয়েছেন প্রকল্প সভাপতি বাদশা মিয়া। তিনি কয়েকটি ঘর ভাড়া দিয়েছেন গোয়াল ঘর হিসাবে আর কয়েকটি দিয়েছেন গোডাউন হিসাবে। যাদের নামে এসব ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তারা কেউ নেই। তাদের তাড়িয়ে দিয়েই বাদশা মিয়াই এখন সবকটি ঘরের মালিক। আর যে ৭টি ঘর রয়েছে এতে একটিতে আলীশান করে বসবাস করেন বাদশা মিয়া এবং আর ৬টি ঘরে বসবাস করেন স্থানীয় প্রভাবশালী লোকজন। তৎমধ্যে প্রকল্পের পাশ্ববর্তী এলাকায় কয়েকজনের পাকা দালান বাড়ি রয়েছে।
এদিকে একই আশ্রায়ন প্রকল্পের টিনসেড ৩০ বাড়ির মধ্যে ১৪টিতে লোকজন নেই। ওই ১৪টির মধ্যে ৭টি ও পাকা বাড়ির মধ্যে ৬টি দখল করে ভাড়া দিয়েছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ফকির চানের পুত্র আক্কাস মিয়া। প্রকল্পের বাসিন্দা ওয়াজুল হক জানান, যারা বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাদের চলে যাওয়ার পেছনে রয়েছে প্রভাবশালীদের হাত। তারা নানা ভাবে চাপ প্রয়োগ করে তাদের তাড়িয়ে দিয়েছে। যারা এখনো আশ্রায়ন প্রকল্পে আছে তাদের উপর নানা ভাবে নির্যাতন করা হয়। অনেকের কাছ থেকে লিখিতভাবে নিয়ে নেওয়া হয় বাড়ি। যার ফলে অনেকটা অসহায়ের মত বসবাস করছেন আশ্রয় গ্রহনকারীরা।
আশ্রয়ান প্রকল্পের বাসিন্দা বুজরুক মিয়ার স্ত্রী ছমুদা বেগম জানিয়েছেন, কেউ কোথাও গেলেই সভাপতি বাদশা মিয়া বাড়ি তালাবদ্দ করে দিয়ে আর প্রবেশ করতে দেয় না। আশ্রায়ন প্রকল্পের সাইনবোর্ডটিও দখল করে রখেছে প্রভাবশালীরা। বাড়ি বরাদ্দ দেওয়ার সময়ও কোন নিয়ম কানুন ছিল না। স্থানীয় মেম্বারের যোগাসাজসে প্রকল্পের পার্শ্ববর্তী লোকজন বাড়ি পেয়েছে।
এদিকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় আশ্রায়ন প্রকল্পের সভাপতির সাথে স্থানীয় মেম্বারও জড়িত রয়েছে বাড়ি দখলের কাজে। এ ছাড়াও মহেশখালীতে স্থাপিত প্রতিটি আশ্রায়ন প্রকল্পের অবস্থা অভিন্ন। অধিকাংশ আশ্রায়ন প্রকল্পের ঘর প্রভাবশালীরা দখল করে রেখেছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবুল কালাম জানিয়েছেন, এ ব্যাপারে কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। এ ছাড়াও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।

পাঠকের মতামত: