রামু প্রতিনিধি :: কক্সবাজারের রামুতে দীর্ঘ আট বছর ধরে ছাত্রলীগের কোন কমিটি নেই। কমিটি ছাড়াই চলছে রামু উপজেলা ছাত্রলীগ। এতে নেতৃত্ব সংকটের আশঙ্কা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। অথচ রামু ছাত্রলীগের সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে। আন্দোলন সংগ্রামে রামু ছাত্রলীগকে সামনের কাতারে দেখা গেছে সবসময়। আজ সেই ছাত্রলীগ রামুতে নেতৃত্ব শুন্য। বিরাজ করছে দৈন্যদশা। দীর্ঘদিন কমিটি না থাকার ফলে রামু সাধারন ছাত্ররা ছাত্রলীগের প্রতি ক্রমেই আগ্রহ হারাচ্ছে। এই অবস্থা বেশি দিন চলতে থাকলে সংগঠনটি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অনেকে।
রামু উপজেলা ছাত্রলীগের সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহবায়ক জ্যোতির্ময় বড়ুয়া রিগ্যান বলেন, ২০১১ সালে ২ নভেম্বর দায়িত্ব গ্রহন করে তিন মাসের মধ্যে আমি উপজেলার সবকটি স্কুল কলেজ সহ ১১ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করি।জেলার নির্দেশে তাদের সকল কর্মসূচিতে স্বঃতপুর্ত অংশগ্রহন করেছি। সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত হয়ে জেলায় একাধিক বার যোগাযোগ করেও তাদের উদাসিনতার কারনে সম্মেলন করতে ব্যর্থ হয়েছি। ইতিমধ্যে অন্য সব উপজেলায় দুইবার করে কমিটি গঠন হয়ে গেছে। রামুতে কেন হচ্ছেনা সে প্রশ্নের উত্তর আমার এখনো অজানা। আট বছর ধরে কমিটি ছাড়াই চলছে রামুর ছাত্রলীগ। শুনেছি আমার আহবায়ক কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়েছে। তবে আমি এর কোন চিঠি পাইনি। ছাত্রলীগ আমার আবেগের জায়গা। তাই দ্রুত সময়ে রামুতে ছাত্রলীগের কমিটি গঠন হবে তা আমি এখনো প্রত্যাশা করি।
ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম হোসেন বলেন,কোন প্রকার পদ-পদবি ছাড়াই ছাত্রলীগকে ভালোবেসে সংগঠনটির দুঃসময়ে আমি হাল ধরেছিলাম। ঝিমিয়ে পড়া কর্মীদের উজ্জিবিত রেখেছি।জেলার নির্দেশে সকল কর্মসূচীতে দলবল সহকারে অংশ নিয়েছি। জাতীয় নির্বাচনে নৌকার পক্ষে প্রচারনায় রাত দিন কাজ করেছি। রামুতে ছাত্রলীগের কমিটির জন্য জেলায় বহুবার তদরিব করেও কোন কাজ হয়নি। দীর্ঘ আট বছর ধরে কমিটি না পেয়ে বর্তমানে নেতা কর্মীদের মাঝে চরম হতাশা বিরাজ করছে। আমি চাই যোগ্য ও ত্যাগি নেতাদের মুল্যায়ন করে দ্রুত কমিটি গঠন করা হোক।
কাউয়ারখোপ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নোমান বলেন, রামু উপজেলা ছাত্রলীগের দীর্ঘদিন কমিটি না থাকার ফলে রামু সাধারন ছাত্ররা স্বাধিনতার পক্ষ শক্তির প্রতি ক্রমেই আগ্রহ হারা হয়ে পড়ছে।
রামু ছাত্রলীগের সর্বশেষ বিদায়ি কমিটির সভাপতি ও রামু উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন বলেন, আমি যেটুকু জানি বাংলাদেশের মধ্যে একমাত্র রামু উপজেলাতে ছাত্রলীগের কমিটি নেই। অথচ দেশজুড়ে রামু ছাত্রলীগের যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। আজ যারা রামুতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সবাই ছাত্রলীগেরই সৃষ্টি । এমনকি আমি নিজেও। আন্দোলন সংগ্রামে রামুর ছাত্রলীগের ভুমিকা ছিল বেশ প্রশংসনিয়। আজ সেই ছাত্রলীগ নেতৃত্ব শূন্য। এটি অত্যান্ত দুঃখজনক। জেলা নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ দ্রুত কমিটি দিয়ে রামু ছাত্রলীগকে পূণর্জীবিত করবেন।
রামু উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেল সরওয়ার কাজল বলেন,রামুর মতো গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ছাত্রলীগের কমিটি না থাকাটা খুবই দুঃখজনক তাও আবার আট বছর ধরে।এটি একান্ত ছাত্রলীগের বিষয় হলেও আওয়ামীলীগের সভাপতি হিসেবে আমি ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি সম্পাদকের সাথে এনিয়ে কয়েক বার কথা বলেছি।তারা প্রতিবারই আমাকে কমিটি দেয়ার কথা বলেছে। কিন্তু কেন বিলম্ব হচ্ছে তা বুঝে আসছে না। রামুর ছাত্রলীগ এই পর্যন্ত অনেক নেতা সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে সেই ধারাবাহিকতা বন্ধ রয়েছে।এটা আমাদের জন্য অপরিমেয় ক্ষতি।
কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মোর্শেদ হোছাইন তানিম বলেন,রামু উপজেলা ছাত্রলীগ নিয়ে আমরা নিজেরাও চিন্তিত। রামু ছাত্রলীগের কমিটি গঠনে বিলম্ব হওয়ার বেশকিছু কারন রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম কারন হচ্ছে রামু ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্তির পর যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তাদের দায়িত্বে অবহেলা,এরপরে রামু বৌদ্ধ পল্লিতে হামলা,স্থানীয় নির্বাচন,উপজেলা নির্বাচন,জাতীয় নির্বাচন,সর্বোপরি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ইত্যাদি কারনে কিছুদিন বিলম্ব হয়েছে।পরে যখন কমিটি দিতে প্রস্তুত হই তখন বিতর্কিত ও অছাত্রদের অামরা প্রার্থী হিসেবে দেখতে পাই। যোগ্য প্রার্থী না পাওয়াও বিলম্বের আরও একটি কারন। বর্তমানে যারা রামুতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের সহযোগীতা চেয়েও বার বার ব্যর্থ হয়েছি। আরেকটি কথা না বললেই নয়, রামু উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটি যারা বিলুপ্ত করেছিল সে সময়কার দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা নেতৃবৃন্দের উচিত ছিল নতুন কমিটি গঠন করে দিয়ে বিদায় নেয়া। তাহলে আজ এ জটিলতা সৃষ্টি হতো না। এরপরও অনুকুল পরিবেশ ও যোগ্য প্রার্থী পেলে আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে রামু ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করার প্রত্যাশা রাখি।
পাঠকের মতামত: