নিজস্ব প্রতিবেদক: রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পশ্চিম পাশের্^ আটকা পড়েছে ৬৪ টি হাতি। খাদ্য সংকটে পড়েছে এসব বন্যহাতি। পানিও পাচ্ছে না হাতিরা। এ অবস্থায় তাদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। বন উজাড় করে পাহাড় কাটার কারনে মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে উখিয়া টেকনাফে ১০ হাজারের বেশি বনভূমি। পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে উখিয়া টেকনাফ। কক্সবাজারের ‘বন্য হাতি ও পাহাড় সুরক্ষায় করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রতিবেদনে এসব তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এতে আরো বলা হয় বাংলাদেশে ২৬৮ টি এশিয়ান আবাসিক হাতির মধ্যে ১১৮টি বাস করে কক্সবাজারে। এর মধ্যে ৬৪ টি হাতি উখিয়া টেকনাফে রয়েছে। আর হাতির আবাসস্থল দখল করে এখন ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে। বন্ধ হয়ে গেছে হাতির করিডোর। ৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় আটকা পড়া এসব হাতির তিন পাশে রোহিঙ্গাদের বসতি আর একপাশে রয়েছে বঙ্গোপসাগর।
বৈঠকে হাতি সুরক্ষায় করণীয় বিষয়ে মনিটরিং সেল গঠনের এবং দেশি বিদেশি এনজিওগুলোকে কার্যক্রম সমন্বয় করার সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠকে সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেন বলেন, জেলাব্যাপী পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।, পাহাড় কাটার ব্যাপারে কোন ছাড় দেয়া হবেনা। যেসব এলাকা থেকে ট্রাকে করে মাটি পাচার করা হচেছ সেই সব এলাকায় ট্রাক ঢুকতে না পারে মত পিলার বসানো হচ্ছে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মাটি ও গাছ কাটার সরঞ্জাম জব্দ করার পাশাপাশি যে সব এনজিও এসব সরঞ্জাম দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আটকে পড়া হাতিদের সুরক্ষায় দ্রুত কর্মসূচি নেবেন বলে জানিয়ে বলেন, রোহিঙ্গা কতৃক বা স্থানীয়দের দ্বারা যাতে হাতি বিরক্ত না হয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশের কোন বন থেকে গাছ কাটা যাবেনা।
৭ জুন দুপুরে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন এবং কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষন পরিষদ এর আয়োজনে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে গোলটেবিল বৈঠকে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক দীপক শর্মা দীপু। সংগঠনের কার্যনির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ উর রহমান মাসুদের সঞ্চালনায় এই বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আজমুল হুদা। পাহাড় কাটার ভয়াবহ চিত্র ও মারাত্মক ঝুঁকিতে থাকা হাতিরর বর্তমান অবস্থার ভিডিও চিত্র সহ প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বৈশাখী টেলিভিশনের কক্সবাজার প্রতিনিধি নেছার আহমদ।
বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজি আবদুর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আশরাফ হোসেন, সহকারি শরানার্থী ও ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার, এস এম ইশতিয়াক শাহরিয়ার, কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃপক্ষের প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক সাইফুল আশ্রাব, উত্তর বনবিভাগের এসিএফ মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা মো: শাহজাহান, সাংবাদিক তোফায়েল আহমদ, হিমছড়ি জাতীয় উদ্যানের সভাপতি এডভোকেট আয়াছুর রহমান, টেকনাফ নেচারপার্ক সহ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ শফি মিয়া, নাগরিক কমিটির কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার কানন পাল, প্রফেসর এ.এম. আনোয়ারুল হক, কক্সবাজার সোসাইটির সভাপতি কমরেড গিয়াস উদ্দিন, কক্সবাজার সিটি কলেজের প্রভাষক উজ্জ্বল কান্তি দেব, কক্সবাজার পরিবেশ মানবাধিকার উন্নয়ন ফোরামের প্রতিনিধি মো: ইলিয়াছ মিয়া।
বৈঠকে জেলা প্রশাসন, বনবিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, শরনার্থী ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়, কক্সবাজার উন্নয়ন কতৃপক্ষ,সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন পরিবেশ সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংমগ্রহণ করেন। গোলটেবিল বৈঠকে পাহাড় কাটা বন্ধ করে বনায়ন সৃজন সহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা ও হাতি সুরক্ষায় কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে জেলাপ্রশাসন, বনবিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর ও পরিবেশ বাদী সংগঠন গুলো একসাথে কাজ করার সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।
পাঠকের মতামত: