চকরিয়া নিউজ ডেস্ক ::
নতুন বছরে নতুন বইয়ে মনমাতানো গন্ধে মেতে উঠেছে চকরিয়া উপজেলাসহ কক্সবাজারের শিক্ষার্থীরা, সরকারিভাবে সম্পুর্ণ বিনা মূল্যে প্রতিবছরের ন্যায় নতুন বছরের প্রথম দিনে কক্সবাজারের ১ম থেকে ৯ম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের জন্য ৭১ লাখ ২১ হাজার ৪৪৯ টি বই বিতরণ করা হবে। একই সাথে ১ জানুয়ারী সারা দেশের ন্যায় কক্সবাজারেও বই উৎসব পালন করবে কক্সবাজারের প্রতিটি স্কুলে। এদিকে এত বিপুল পরিমান শিক্ষার্থীদের সম্পূর্ন বিনা মুল্যে সরাকরিভাবে বই বিতরণ করা সরকারের অত্যন্ত সাহসি পদক্ষেপ বলে জানান সচেতন মহল। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ব্যয়ভার কমা সহ সার্বিকভাবে ্উপকার হচ্ছে সাধারণ মানুষের। আজ সকাল ১০টা থেকে চকরিয়া উপজেলার সকল সরকারী, বেসরকারী এবং রেজিষ্টার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই উৎসব শুরু হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে চলতি বছর জেলার ৬৩৪ টি স্কুলের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৮ লাখ ৪৬ হাজার ৪৪৯টি বই বিতরণ করা হবে। ইতি মধ্যে জেলায় এসে পৌচেছে ১৮ লাখ ১২ হাজার ৩৯০ টি বই এবং বিদ্যালয় পর্যায়ে পৌছে গেছে ৯০.৫০% বই। বাকি বই গুলোও খুব দ্রুত চলে আসবে বলে জানা গেছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শহীদুল আজম বলেন ১ জানুয়ারী জেলার প্রতিটি স্কুলে বই বিতরণ করা হবে। এখানেএবতেদায়ী,মাদ্রাসা সহ বিশেষ শ্রেনীর শিশুদের জন্য আলাদা বই আছে বলে জানান তিনি। এবং কোথাও কোন শিক্ষার্থী বই না পেয়ে থাকবে না বলেও নিশ্চিত করেন এই কর্মকর্তা। এবং ১ জানুয়ারী শহরের লিংকরোড়ের মহুরী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই উৎসব হবে বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে চলতি বছর জেলায় ৬ষ্ঠ থেকে ৯ম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ৫২ লাখ ৭৫ হাজার বই বিতরণ করা হবে। ১ জানুয়ারী এই বই শিক্ষার্থীদের হাতে পৌছাবে। ইতি মধ্যে প্রায় ৪৫ লাখ বই কক্সবাজারে চলে এসেছে এবং সেটা উপজেলা পর্যায়েও পৌছে দেওয়া হয়েছে। এখানে নিয়মিত স্কুলে বই ছাড়াও ভোকেশনাল,দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি, সহ সব ভার্সনের বই আছে।
কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যার্যাটরী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নুরুল ইসলাম বলেন আমার দীর্ঘ শিক্ষকতা জীবনে এরকম সাহসি উদ্যোগ দেখি নি। সরকার চাইলে যে সব কিছু পারে এটা তার একটি উজ্জল দৃষ্টান্ত। এক সাথে দেশে সব শিক্ষার্থীকে সম্পুর্ন বিনা মুল্যে সরকারি ভাবে বই দেওয়ার দৃস্টান্ত বোধয় আর কোন দেশে আছে কিনা সেটা আমার জানা নেই। এতে শিক্ষার খরচ কমেছে, সাধারণ মানুষের জন্য অনেক বড় উপকার হয়েছে।
অন্যদিকে বাংলা বাজার কেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষক এমআর মাহবুব বলেন সরকারি ভাবে সব স্কুলে বই দেওয়াটা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এর ফলে গ্রামের অনেক শিক্ষার্থী বিনা মুলে বই পাচ্ছে। কিন্তু বই বিতরণের খেত্রে কেজি স্কুল গুলোর সাথে একটি বিমাতাসূলভ আচরন করা হয়। আগে সরকারি স্কুল গুলো এমনকি মাদ্রাসা গুলোকে দিয়ে তার পর কেজি স্কুল গুলোকে সরকারি বই দেওয়া হয়। এতে কেজি স্কুলের মেধাবি শিক্ষার্থীরা দেরীতে বই পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ে। যদি শিক্ষা কর্মকর্তারা সমন্নয় করে সবাইকে এক সাথে বই দেওয়ার ব্যবস্থা নেয় তাহলে খুবই উপকার হতো।
রামু জারাইলতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ শ্রেনীর এক ছাত্রীর অভিবাবক আবদুর রহমান বলেন আমার ৩ ছেলে মেয়ে স্কুলে পড়ে। আগে তাদের ছোট বেলায় প্রতি বছরের শুরুতে তাদের বই কিনে দিতে আমার হিমশিম খেতে হতো। পেশায় কৃষক হিসাবে সংসারে তেমন টাকা জমানো থাকতো না। তাই বছরের শুরুতে ছেলে মেয়েদের কয়েক হাজার টাকার বই কিনে দিতে আমার অবস্থা করুন হয়ে যেত। কিন্তু এখন বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছেলে মেয়েদের বিনা মুল্যে বই দিয়ে আমাদের মত গরীব মানুষের জন্য খুবই উপকার হয়েছে। এখন আমাকে আর বইয়ের টাকার জন্য চিন্তা করতে হয় না। তবে কিছু গাইড বই কিনতে হয় যার মূল্য অনেক বেশি। এটা যদি কোন ভাবে নিয়ন্ত্রন করা যেত তাহলে অনেক উপকার হতো।
্পেকুয়া জিএমসি ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন বর্তমান সরকার শিক্ষা ক্ষেত্রে সফলতার জন্য অনেক কিছু করেছে যা বলে শেষ করা যাবে না। এর মধ্যে অন্যতম এক সাথে জেলায় ৭১ লাখের বেশি বই দিচ্ছে তাহলে সারা দেশে কত কোটি বই দিচ্ছে,এটি সাহসি পদক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই না। এছাড়া এক সাথে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় কে সরকারি করণ,মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সরকারি করণম কলেজকে সরকারি করন করা এত সহজ কথা না। এটা আসলেই প্রশংসার দাবীদার। আর বর্তমানে ১ জানুয়ারী দেশের সব শিক্ষার্থীর হাতে সম্পূর্ণ বিনামুল্য বই উপহার দেওয়াটা সত্যি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য মাইল ফলক।
এদিকে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ ছালেহ আহাম্মদ চৌধুরী বলেন ১ জানুয়ারী বই উৎসব করার জন্য আমরা সর্বাত্তক প্রস্তুতি গ্রহন করেছি। জেলার সব স্কুল,মাদ্রাসা সহ সব খানে বই দেওয়া হবে। ইতি মধ্যে বেশির ভাগ বই চলে এসেছে বাকি যা আছে তাও খুব দ্রুত চলে আসবে। তিনি সরকারি ভাবে প্রদত্ত এই্ বইকে যতœ সহকারে ব্যবহার করার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহবান জানান।
এ ব্যপারে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ আলী হোসেন বলেন নতুন বই বেশির ভাগ স্কুল পর্যায়ে পৌছে গেছে, এ বিষয়ে আমরা নিয়মিত খোঁজ খবর রাখছি। ১ জানুয়ারী সবাই বই উৎসব পালন করবে।
পাঠকের মতামত: