ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

অপরিকল্পিত কক্সবাজার পৌরসভা, বাড়ছে ক্ষোভ

rrrr_1আব্দুল আলীম নোবেল  :

কক্সবাজার পৌরসভাকে উদ্দেশ্য দেয়া একটি ফেইসবুকের স্ট্যাটাস ধিক্কার, ঘৃণা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই স্ট্যাটাস টিকে কেন্দ্র করে আলোচনা সমালো ঝড় ওঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক দুনিয়াতে। ওই স্ট্যাটাসে কমেন্ট দেখা গেছে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ আর নানা সমালোচনা। ১০ মার্চ জেলা আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা ও সাবেক পৌর কমিশনার(কাউন্সিলর) আব্দুল খালেকের ফেইসবুক আইডি থেকে এটি পোষ্ট করা হয়। ওই সময় তিনি কক্সবাজার শহরের বাজারঘাটা এলাকার গতকালের বৃষ্টির কারণে কাঁদায় ভরে যাওয়া বেশ কয়েটি ছবিও ছাড়েন।

সাধারণ মানুষের অভিযোগ পৌরসভায় অপরিকল্পিত উন্নয়ন। উন্নয়নে মানা হচ্ছে না কোন নিয়ম কানুন। পাল্লা দিয়ে চলছে দখল,দুষণ, একই সাথে চলছে নালা দখলের প্রতিযোগিতা। কর্তৃপক্ষ নালা সংস্কারের বেশ কিছু কার্যক্রম দেখা গেলেও এটির কোন স্থায়ী সমধান দেখা মিলছে না দাবী সচেতন মহলের। অপর দিকে কক্সবাজার পৌরসভাকে নিয়ে এইচ.এম নজরুল ইসলাম তার ফেইসবুক আইডিতে লিখেছেন, আমি লজ্জিত আমার শহরের নামের আগে পর্যটন নগরী লেখা হয়। জন্মসূত্রে অভিভাবকহীন পর্যটন নগরী কক্সবাজার। কক্সবাজার পৌরসভা বলতে কিছুই নেই যেটি আছে সেটি একটি ভাগবাটোয়ার অফিস। কাউন্সিলর বলতে কেউ নেই যারা আছেন সব ঠিকাদার। সেই স্ট্যাটাস গুলোর সাথে সহমত পোষণ করেছেন শত শত সচেতন মানুষ। দেখা গেছে এমন স্ট্যাটাস পৌরসভাকে নিয়ে অহরহ, অত্যন্ত কটুর এবং ক্ষোভের। সবার অভিযোগেরতীর দায়িত্বে থাকা কার্তা বাবুদের বিরুদ্ধে।

শহরের একটু বৃষ্টি হলে বাজারঘাটাসহ আশে পাশের এলাকায় চলাচলের চরম অনুপযোগি হয়ে পড়ে। এই দৃশ্য দেখতে দেখতে সাধরণ মানুষের মাঝে দিন দিন ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান, সেইভ দ্যা ন্যাচার বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আ.ন.ম মোয়াজ্জেম হোসেন। তিনি আরো বলেন শহরতলীর পাহাড়া গুলো নির্বিচারে কেটে চলছে। আর বৃষ্টি হলে এই পাহাড়ের মাটি এসে ড্রেইন ভরাট হয়ে যায়, ফলে জলাবদ্ধার সৃষ্টি হয়, এই সবের সুষ্টু সমধান দরকার।

পরিকল্পিত কক্সবাজার আন্দোলনের সমন্ময়ক(আইন উপদেষ্টা) ব্যারিষ্টার ফারজানা রশিদ জানান, পর্যটন নগরী কক্সবাজারকে দেশে বিদেশে পরিচিত করতে অনেক বেশি পরিকল্পিত পরিকল্পনা দরকার। তা না হলে বৃষ্টির কাঁদা না আরো অনেক ম্যাজর সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে এলাকাবাসীর। আগামী প্রজন্মের পরিকল্পিত বাংলাদেশের স্বপ্ন বির্নিমাণে পদক্ষেপ নেওয়ার এখনই সসময়। এই যাত্রা পর্যটন নগরী থেকে শুরু করা যেতে পারে।

গত কয়েক বৎসর আগের কক্সবাজার পৌর এলাকার প্রধান সড়কের পাশে পানি চলাচলের নালা দেখা গেলেও এখন অনেক নালা ভরাট করেছে দখলবাজরা। কিছু কিছু এলাকায় এখন রাস্তার সাথে সমতল হয়ে যাওয়ায় নালার চিহ্ন নেই বললেই চলে। এদিকে কক্সবাজার পৌরসভার মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরে প্রধান সড়কের পাশে পর্যাপ্ত নালা না থাকায় দীর্ঘদিন ধরে অসহনীয় কষ্টের মধ্যে রয়েছেন কক্সবাজার পৌরসভাবাসী। পানি চলাচল অন্য মৌসুমে রাস্তার উপর দিয়ে করে থাকলেও বর্ষায় সময় পানি বেড়ে যাওয়ায় পৌরবাসীর আতংকের শেষ থাকে না। কোটি টাকার লোকসানে পড়ে পৌরসভার ব্যবসায়ীরাও। যার কারণে প্রতি বৎসর বর্ষা মৌসুম আসার পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত চিন্তিত হয়ে পড়েন পৌরবাসী ও ব্যবসায়ীরা। গতকালের সামন্য বৃষ্টিতে শহরের রাস্তা ও আশে পাশের সড়কে কাঁদার সৃষ্টি হয়েছে। নালা খননে তেমন কোন পরিকল্পিত উদ্যোগ নেই বলে এটিকে কারণ হিসেবে দেখছেন এলাকাবাসী। আগামী বর্ষা মৌসুমে কক্সবাজার পৌরসভা পানির নিচে তলিয়ে না যাওয়ার আগে প্রভাবশালীদের হাত থেকে নালা উদ্ধার করা জরুরি।

কক্সবাজার পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার পৌরসভার সংশ্লিষ্ট নালা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করে ১২৯ জন প্রভাবশালী। প্রাথমিক তালিকায় থাকা এসব দখলকারীর মধ্যে যাচাই-বাছাই করে ৪৬ জন দখলদারের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযানে নামেছিল কক্সবাজার পৌরসভা। কিন্তু এই অভিযানে তেমন কার্যকরী ফলাফল দেখা যায়নি।

এতে প্রথমধাপে ঘোনারপাড়া রাস্তার মোড় থেকে বার্মিজ মার্কেট, বাজারঘাটা হয়ে পেশকার পাড়া পর্যন্ত নালা দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। ওইসময় চাউলবাজারের রাবেয়া কুটিরের বর্ধিতাংশ থেকে ওই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছিল কক্সবাজার পৌরসভা। গত বছর ৭ আগস্টের মধ্যে পৌরসভার নালা দখলকারীদের দখল ছেড়ে দেয়ার জন্য প্রচারও করেছিল কক্সবাজার পৌরসভা। এতে বলা হয়, ৮ আগস্টের মধ্যে পৌরসভার নালা দখলকারীরা স্বেচ্ছায় দখল ছেড়ে না দিলে অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা করা হবে এবং দখল উচ্ছেদ করা হবে। কয় এখন পর্যন্ত কাজের কাজ তেমন কিছু হয়নি।

স্থানীয় অনেকের অভিযোগ, নালা দখলকারীদের বিরুদ্ধে কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও অদৃশ্য কারণেই তা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়। অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ইমারত নির্মাণকারীদের তাদের নিজ নিজ উদ্যোগে স্থাপনা সরিয়ে ফেলতে নির্দেশ দেয়া হলেও কোন কাজেই আসছে না। এসব দখলকারীদের স্থাপনা অপসারণের সময় বেঁধে দেয়া হলেও নিজ উদ্যোগে অপসারণ হয়নি অবৈধ স্থাপনা। নিজ উদ্যোগে স্থাপনা অপসারণ করা না হলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষ তা অপসারণ করবে এবং দখলকারীদের জরিমানাও করা হবে সংশ্লিষ্ট দফ্্তরের এমন প্রচাও কোন কাজ হয়নি। অবৈধ দখলকারীরা বহাল তবিয়তে রয়েছে। আদৌ এসব অবৈধ দখলকারীদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে কিনা সন্ধিহানে রয়েছে কক্সবাজার পৌরবাসী।

পাঠকের মতামত: