ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

অনাবৃষ্টিতে বিপর্যয়ে জেলার চিংড়ি চাষ

নিজস্ব প্রতিবেদক :: জেলায় অনাবৃষ্টির কারণে থমকে গেছে চিংড়ি চাষ। ব্যাপক লোকসানের প্রহর গুনছেন চিংড়ি চাষীরা। কোন মৌসুমে এমন পরিস্থিতি হয়নি বলে জানালেন চিংড়ি চাষীরা। চিংড়ী প্রজেক্টের পানি গরম হয়ে যাওয়ায় নার্সারীর অধিকাংশ পোনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া প্রজেক্টের পানিতে অতিরিক্ত লবণাক্ততাও দেখা দিয়েছে।

কক্সবাজার জেলায় থমকে গেছে চিংড়ি চাষ। যথাসময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষীরা। প্রজেক্টের পানি পরিবর্তন করলেও ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আবারো গরম হয়ে যাওয়ায় একাধিক প্রজেক্টে দেখা দিয়েছে বাগদা পোনায় মড়ক।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায় জেলায় অন্তত ৬৫ হাজার একর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ হচ্ছে। গত মৌসুমে চিংড়ি উৎপাদন সন্তোষজনক হওয়ায় লাভের মুখ দেখেছেন চাষীরা। তাই চলতি মৌসুমে আরো বেশী পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায় এই সময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে পানির পিএইচ (অম্লত্ব ও ক্ষারত্ব) মাত্রা চিংড়ির চাষের জন্য অনেকটা সহনশীল পর্যায়ে চলে আসে। ফলে অধিকাংশ ঘেরে উৎপাদন বেশি হয়। কিন্তু এবার বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম এবং হঠাৎ নদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় চিংড়ি পরিবেশ বিপর্যয়ে পড়েছে। এ কারণে অধিক হারে চিংড়ি মারা যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন চিংড়ী চাষিরা। মড়ক দেখা দিলে ২/৩ দিনেই সব চিংড়ি মারা যায়। তাই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় রয়েছে।

চিংড়ি পোনা সরবরাহকারী হোয়ানক ইউনিয়নের ফকিরখালী গ্রামের আজিজুর রহমান বলেন, গত মৌসুমে চিংড়ি চাষীরা লাভবান হয়েছেন। তাই চাষীরা চলতি মৌসুমে আরো বেশী পোনা ছেড়েছেন প্রজেক্টে। অধিকাংশ প্রজেক্ট মালিক অবশ‍্য এখনো পোনার টাকা পরিশোধ করেনি। বর্তমান সরকারের সময়ে বাগদা চিংড়ির মূল্য সন্তোষজনক থাকায় চাষীরা ছিলেন উৎফুল্ল। আমরা ব্যবসা করেও লাভবান হয়েছি। মৎস্য বিভাগ নিয়ে বিগত কোন সরকার ইতিবাচক কোন পদক্ষেপ না নিলেও বর্তমান বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে চাষীদের প্রশিক্ষণসহ বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এই মৌসুমে আষাঢ় মাসেও বৃষ্টি না হওয়ায় অধিকাংশ চিংড়ি প্রজেক্ট অচল হয়ে পড়েছে। একটানা গরমে নার্সারীতে রাখা পোনা অধিকাংশই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া অধিকাংশ প্রজেক্টে মড়ক দেখা দেওয়ায় আমরা সবাই হতাশ।

বড় মহেশখালী ইউনিয়নের একটি চিংড়ি ঘেরের পরিচালক নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন প্রতি মৌসুমে আষাঢ় মাসেই প্রজেক্টের অর্ধেকেরও বেশী পুঁজি উঠে আসে। কিন্তু চলতি মৌসুমে কোন প্রজেক্ট মালিক খরচের টাকাও পায়নি। তাই সবাই হতাশ হয়ে পড়েছেন। ঋণ করে পোনা ক্রয় করে ওই টাকা কিভাবে পরিশোধ করব তা নিয়ে চিন্তায় আছি।

কুতুবদিয়ার চিংড়ি চাষী মিজানুর রহমান টিটু চকরিয়া নিউজকে জানিয়েছেন, যথা সময়ে বৃষ্টি না হওয়ায় লবণ চাষীরা নির্ধারিত সময়ের চাইতে আরো অন্তত ২০-২৫ দিন বেশী চাষ করেছে। এতেও পিছিয়ে পড়েছে চিংড়ি চাষ। আর আড়াই মাস পরেই প্রজেক্ট লবণ চাষের জন্য ছেড়ে দিতে হবে।

কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এস এম খালেকুজ্জামান বলেন, চিংড়ি চাষীদের প্রতি আমাদের দৃস্টি রয়েছে। আনাবৃষ্টির কারণে শুধু চিংড়ি নয় সর্বক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হবে। তবু যে সময় আছে চাষিরা যদি পরামর্শ মেনে ঘেরে কাজ করতে পারে তাহলে কেউ লোকসানের মুখে পড়বে না।

পাঠকের মতামত: