ঘাটতি ২ লাখ টন আমদানি হচ্ছে ৫ লাখ
অনলাইন ডেস্ক :::
কক্সবাজারের ইসলামপুর শিল্প এলাকার মদিনা ও রহমানিয়া লবণ মিলের মালিক অছিউর রহমান ৬০ হাজার মণ লবণ কিনেছিলেন শেষ বর্ষায় বিক্রির জন্য। এ সময় লবণের দাম একটু বৃদ্ধি পায়। তিনি মাঠ থেকে কিনেছিলেন মণপ্রতি গড়ে ৫৮০ টাকা দরে। প্রতি মণে ২০ টাকা লাভে তিনি ৬০০ টাকা দরে বিক্রিও শুরু করেন। কিন্তু মাত্র সপ্তাহ পার হতে না হতেই সেই লবণের মণ এসে ঠেকেছে ৫০০ টাকা দরে। এমনকি দাম ক্রমান্বয়ে আরো কমছে।
লবণ মিল মালিক অছিউর রহমান এ প্রসঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার কালের কণ্ঠকে বলেন-‘এবারের মৌসুমে লবণ উৎপাদন কম হয়েছে বড়জোর দুই থেকে আড়াই লাখ মেট্রিক টন। কিন্তু সেই ঘাটতি পূরণের জন্য আমদানি করা হচ্ছে ৫ লাখ মেট্রিক টন। গণমাধ্যমে আমদানির খবর ফলাও করে প্রচার হয়ে পড়ায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়েছে মাঠে। বড় ক্রেতারা আমদানির লবণ ক্রয়ের হুমকি দিচ্ছে। ফলে উৎপাদন পর্যায়ে লবণের মূল্য নিম্নমুখী রয়েছে। ’
মাঠের উৎপাদনকারীরাও লবণের কিছু বাড়তি দাম পাওয়ার লোভে অনেক সময় সত্য প্রকাশ থেকেও বিরত থাকেন। কুতুবদিয়া দ্বীপের নাম প্রকাশে একজন লবণ উৎপাদক বলেন, মৌসুম শেষে মাঠের গর্তে প্রচুর পরিমাণ লবণ মজুদ করে রাখা হয়েছিল, যা কার্তিক-অগ্রহায়ণে দাম বাড়তি হওয়ার সময় তুলে বিক্রি করা হয়। কিন্তু ঘাটতিজনিত কারণে আকস্মিক ৫ লাখ মেট্রিক টন লবণ আমদানির খবরে দাম পড়ে যাওয়ায় গর্তের লবণও এখন তুলে বিক্রি করা হচ্ছে। মাঠের এই গর্তের লবণের হিসাব কখনো বিসিক কর্তৃপক্ষের কাছে থাকে না।
দেশের অন্যতম লবণ উৎপাদন এলাকা কক্সবাজার উপকূলের লবণ উৎপাদন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করার দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুঠির শিল্প কর্তৃপক্ষের বিসিক লবণ প্রকল্প। কক্সবাজারের বিসিক লবণ প্রকল্পের উপমহাব্যবস্থাপক দিলদার আহমদ চৌধুরী জানিয়েছেন, সদ্যসমাপ্ত লবণ মৌসুমে উৎপাদনের চাহিদা ছিল ১৫ লাখ ৭৬ হাজার মেট্রিক টন। আর উৎপাদন হয়েছে ১৩ লাখ ৬৪ হাজার মেট্রিক টন লবণ। অর্থাৎ ঘাটতির পরিমাণ ২ লাখ ১২ হাজার মেট্রিক টন।
বিসিক সূত্রে আরো জানা গেছে, এবারের মৌসুমে আবহাওয়া ছিল লবণ উৎপাদনের প্রতিকূলে। অর্থাৎ এবারের মৌসুমের শুরু থেকেই অকাল বর্ষণ লেগেই ছিল। সেই সঙ্গে শীতের কুয়াশাও ছিল প্রচণ্ড। ফলে লবণ উৎপাদন হয়েছে মৌসুমের শেষ প্রান্তে মে-জুন মাসে।
অভিযোগ উঠেছে, মৌসুমে লবণের উৎপাদন ঘাটতিকে পুঁজি করে একপক্ষ বিদেশ থেকে লবণ আমদানির জন্য মরিয়া হয়ে পড়ে। অন্যদিকে কক্সবাজারের মাঠপর্যায়ের উৎপাদক থেকে শুরু করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা চান যাতে ঘাটতির অতিরিক্ত কোনোভাবেই আমদানি করা না হোক। উৎপাদনকারীদের যুক্তি হচ্ছে ঘাটতির বেশি লবণ আমদানি করা হলে লবণের উৎপাদন মূল্যও কৃষকরা পান না।
এমন পরিস্থিতিতে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের শরণাপন্ন হন কক্সবাজার এলাকার জনপ্রতিনিধিরা। গত বুধবার জাতীয় সংসদের লবিতে মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিকের নেতৃত্বে বাণিজ্যমন্ত্রী ও শিল্পমন্ত্রীকে পৃথকভাবে স্মারকলিপি দেওয়া হয় লবণ পরিস্থিতি নিয়ে। স্মারকলিপিতে কক্সবাজারের জনপ্রতিনিধিরা আবেদন জানিয়েছেন যাতে উৎপাদনে ঘাটতি পূরণ ছাড়া অতিরিক্ত লবণ আমদানি করা না হয়।
স্মারকলিপি গ্রহণ করে মন্ত্রীদ্বয় বলেছেন, লবণ চাষিদের শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। দেশে লবণের যা ঘাটতি হবে সে পরিমাণ লবণই শুধু আমদানি করা হবে। এতে লবণের মূল্যে কোনো প্রভাব ফেলবে না। বিসিকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী চাহিদার লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ায় যা ঘাটতি আছে ওই লবণ আমদানি করবে সরকার।
মহেশখালী-কুতুবদিয়ার সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য দিয়ে আরো জানান, স্মারকলিপি গ্রহণ করে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু বলেন, চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন সিদ্ধান্ত সরকার গ্রহণ করবে না। তিনি জানান, আগামী কোরবানির ঈদের পর দেশের চামড়াশিল্পের জন্য অনেক লবণের প্রয়োজন হবে। প্রয়োজনীয় মুহূর্তে লবণের সংকট সৃষ্টি যাতে না হয় তাই লবণ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। যদি ঘাটতি না হতো তাহলে কোনো অবস্থাতেই লবণ আমদানি করা হতো না। এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ। খুব অল্প সময়ের মধ্যে লবণ বোর্ডও গঠন করা হবে।
স্মারকলিপি গ্রহণ করে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, কক্সবাজারের লবণ চাষিদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকার লবণের যুক্তিসংগত মূল্য স্থিতিশীল রাখতে কাজ করছে। যে পরিমাণ লবণ প্রয়োজন তাই আমদানি করা হবে। এতে লবণের মূল্যে কোনো প্রভাব পড়বে না। তিনি বলেন, ঘাটতির বাইরে এবং কোনোভাবেই লবণ মৌসুমের শুরুতে লবণ আমদানি করা হবে না।
স্মারকলিপি প্রদানের সময় কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফাসহ আরো অনেক স্থানীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন। কালের কন্ঠ
পাঠকের মতামত: