মিজবাউল হক, চকরিয়া : ২৭টি বসতঘরে অগ্নিসংযোগ, নারীকে পুড়িয়ে হত্যা ও তিন কোটি টাকার সম্পদ লুটের ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে চকরিয়া উপজেলার কৈয়ারবিল ইউনিয়নের খিলছাদক এলাকা। ঘটনার মুলহোতা বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার, সাবেক ইউপি সদস্য দিদারুল ইসলাম ও তার সহোদর বাবুলের ফাঁসির দাবীতে এখন প্রতিবাদমুখর পুরো এলাকা। কৈয়ারবিল ইউনিয়নের সর্বস্তরের নারী-পুরুষ জড়িত খুনিদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমৃলক শাস্তি দাবী জানিয়েছেন। ১৮ মে দুপুর ১২টার দিকে খিলছাদক এলাকায় শতশত নারী-পুরুষ বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে।
১৪ মে ভোররাতে সেহরির সময় মাতামুহুরী নদীর তীরে জেগে ওঠা চরের জায়গার দখল নিতে প্রায় তিন শতাধিক লাঠিয়াল বাহিনী সশস্ত্র ভাবে খিলছাদক গ্রামে নারকীয় তাণ্ডব ও লুটপাট চালিয়েছে। এ সময় একান্নবর্তী পরিবারের ২৭ টি বসতঘর পেট্রল দিয়ে জালিয়ে দিয়েছে। লুট করে নিয়ে গেছে নগদ টাকা, স্বর্নালঙ্কার, গবাদিপশু, শতশত বিভিন্ন প্রজাতির গাছ ও মূল্যবান মালামালসহ প্রায় তিনকোটি টাকার সম্পদ। মনোয়ারা বেগম (৫৫) এক নারীকে নৃশংশভাবে আগুনে পুড়ে মারা হয়েছে। এসময় লাঠিয়াল বাহিনী অর্ধশতাধিক নারী-পুরুষ গুলিবিদ্ধ ও কুপিয়ে জখম করেছে।
এদিকে বর্তমানে ওইএলাকায় খোলা আকাশের নিচে পরিবার গুলো দিনাপাতি যাপন করছেন। পরিবার গুলোতে দেখা দিয়েছে খাদ্যভাব। সর্বশান্ত লুটে নেয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনের অবহেলার কারণে আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে সন্ত্রাসীরা। প্রশাসনিক চাপের মুখে ঘটনার মূল আসামীদের বাদ দেয়া হয়েছে। ফলে এসব দূবৃর্ত্তদের হুমকীর মুখে এখনো নিরাপত্তহীনতায় ভুগছেন ২৭টি পরিবারের লোকজন। আগুনে সর্বস্ব খোয়ানো বাড়ির মালিক জসিম উদ্দিন অভিযোগ করেন, গত ৭ মে দূবৃত্তরা ফাঁকাগুলি বর্ষণ করে নদীর পার্শ্ববর্তী জেগে উ্ঠা চর দখলের চেষ্ঠা চলায়। এ সময় দূবৃর্ত্তদের গুলিতে চারজন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় গুলিবিদ্ধ ওসমানের পিতা নুরুল হোসাইন বাদী হয়ে দূবৃর্ত্তদের বিরুদ্ধে চকরিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করলেও পুলিশ এব্যাপারে নীরব দর্শকের ভুমিকা পালন করায় দূবৃর্র্ত্তরা পুনরায় এ ধরণের বর্বর কর্মকান্ড চালানোর সাহস পায়। ফলে এ ঘটনার জন্য প্রশাসন কখনো তাদের দায়িত্ব এড়াতে পারেন না। এ ঘটনার পর উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ত্রাণ সহায়তা হিসেবে ২০ কেজি চাল ও দুই বান ডেউটিন বরাদ্দ দেয়া হলেও অনেকেই তা পায়নি। আবার এসব সহায়তা বাড়ি নির্মানের জন্য পর্যাপ্ত না হওয়ায় নগদ টাকার অভাবে ক্ষতিগ্রস্থ লোকজন বাড়ি নির্মাণ করতে না পেরে খোলা আকারে নিচে বসবাস করছে।
স্থানীয় প্রবীণ মোজাহার আহমদ জানান, শতবছরের পৈত্রিক ভিটা থেকে উচ্ছেদ করার জন্য বরইতলী ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার ও সাবেক ইউপি সদস্য দিদারুল ইসলামের নির্দেশে তিন শতাধিক লাঠিয়াল বাহিনী তান্ডব চালিয়েছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর লুটপাট ও ধর্ষণকে হার মানিয়েছে। পেট্রল দিয়ে তার বাড়িতে আগুন স্ত্রী মনোয়ারা বেগমকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। এধরণের বর্বর হত্যাকান্ড ও লুটপাট আর দেখিনি বলে জানান।
গ্রামবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘ কয়েকযুগ ধরে তাদের গ্রামের বিশাল অংশ মাতামুহুরী নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে নদীতে বিলিন হয়ে যায়। তবে কয়েকবছর ধরে নদীতে তলিয়ে যাওয়া সেই জায়গা দিনদিন সিকিস্তি হয় তথা জেগে উঠে। যাদের জায়গা জেগে উঠে তারা সেই জায়গায় বসতি গড়ে তোলে। কিন্তু নদীর ওপার তথা পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন বরইতলীর গোবিন্দপুর গ্রামের লাঠিয়াল বাহিনী এপারে এসে বার বার জেগে ওঠা জায়গা দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালায়।
একান্ন পবিরবারের নেতা জমির উদ্দিন, সাজ্জাদ জানান, ১৪ মে সেহরির পরপরই দেখতে পান চারদিকে দাউ দাউ করে বসত ঘর জলে যাচ্ছে। সেখানে দেখতে পান সশস্ত্র অবস্থায় তিনশতাধিক লাঠিয়াল বাহিনী। সন্ত্রাসীরা মুহুর্তের মধ্যে শতশত রাউন্ড এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে। তারা প্রায় দুই ঘন্টা ধরে তান্ডব চালায়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় শত বছরের ২৭টি বসতঘর। একান্ন পরিবারের নগদ টাকা, স্বর্নালঙ্কার, ধান, মরিচ, আলু, শতশত বিভিন্ন প্রজাতির গাছ সহ প্রায় তিনকোটির সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়।
ক্ষতিগ্রস্ত মো. হানিফ বলেন, ১৫ বছর বিদেশে ছিলাম। নগদ ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকাসহ জীবনের অর্জিত সবকিছু আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল।
নবী হোসেন বলেন, তার মেয়ের বিয়ের জন্য ঘরে রাখা ১লক্ষ ৬০হাজার টাকা লুট করে নিয়ে গেছে সন্ত্রাসীরা।
ক্ষতিগ্রস্ত নুরুল মোস্তফা বলেন, গত ৭ মে বিকালে একই কায়দায় সন্ত্রাসীরা ওই জমি দখলে নিতে হামলা চালিয়েছিলেন। এসময় তাদের গুলিতে ৫জন আহত হয়। এ ঘটনায় নুরুল হোসেন নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে ১১ মে চকরিয়া থানায় একটি মামলা রুজু করেন। ওই মামলায় ২০ জনকে আসামী করা হয়। পুলিশের নিস্ক্রিয়তার কারণে সন্ত্রাসী ফের এ ধরনের নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছে। ##
পাঠকের মতামত: