ঢাকা,সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অকেজো সিসিটিভি, ১১ স্পটে নিয়মিত ছিনতাই

কক্সবাজার প্রতিনিধি ::

# কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা লালদীঘি-গোলদীঘির পাড়ে

# পুলিশের তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারী ১১৭

# গেল কয়েক বছরে ছিনতাই বেড়েছে ৭ গুণ

# ১৯ মামলার আসামী মুন্না পুলিশের জালে

# বিশেষ অভিযানে ৪৮ ঘন্টায় গ্রেপ্তার ৩২

দেশের প্রধান পর্যটন নগরী কক্সবাজারে বাড়ছে ছিনতাইসহ নানা অপরাধ। পর্যটন স্পটগুলো ছাড়াও শহরের প্রধান সড়কগুলোর ১১টি স্পটে নিয়মিত ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছেন পর্যটক ও পথচারীরা। পুলিশের হিসেবে, তিন বছরে ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৭ গুণ। বছর বছর ছিনতাই বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা, পর্যটক ও রোহিঙ্গা শিবিরে নিয়োজিত আর্ন্তজাতিক দাতা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা।

২০১৮ সালে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির নানামুখি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে কক্সবাজার শহরকে সিসিটিভির আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল পুলিশ। যার অধিকাংশ সিসিটিভি ক্যামরার বেশিরভাগ এখন অকেজো বলে জানিয়েছে পুলিশ। যার ফলে অপরাধ সংঘঠিত করে অপরাধীরা দ্রæত পালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছে। তাদের আর চিহ্নিত করা যাচ্ছে না।

পুলিশের তথ্যমতে, কক্সবাজার শহরে ২০১৯ সালে ছিনতাইয়ের অভিযোগ রেকর্ড হয়েছে মাত্র ৮টি। ২০২০ সালে প্রায় চার গুণ (২৬২ দশমিক ৫ শতাংশ) বেড়ে ছিনতাইয়ের অভিযোগ দাঁড়ায় ২৯টি। আর ২১ সালের ডিসেম্বরে এসে ছিনতাইয়ের অভিযোগ রেকর্ড হয়েছে ৩৩টি। যা ২০২২ সালে এসে দাড়িয়েছে সাত গুণে। সদর মডেল থানা এলাকায় তালিকাভুক্ত ছিনতাইকারীর সংখ্যা ১১৭ জন।

আর শহরের বিজিবি ক্যাম্প, রুমালিয়ারছড়া, পশ্চিম লারপাড়া, উত্তরণ পাহাড়, আদর্শ গ্রাম মোড়, লাইট হাউস পাড়ার মুসলিম সড়ক, গোলদীঘির পাড়, কলাতলী বাইপাস, বাজারঘাটা ও মগপাড়া এই ১১ স্পটকে ছিনতাইকারীদের স্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

সামপ্রতিক সময়ে কক্সবাজার জেলাজুড়ে খুন, ছিনতাই, কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাত, যানজট, পাসপোর্ট অফিসে জন ভোগান্তি ও উখিয়া-টেকনাফের ক্যাম্প ছেড়ে রোহিঙ্গাদের পালিয়ে শহরমুখি হওয়ার প্রবণতা নিয়ে জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভায় ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। তার রেশ কাটতে না কাটতেই গেল ৫ দিনের মধ্যে জেলায় তিন হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটেছে।

সভায় ঈদকে সামনে রেখে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়কে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নানা অভিযানের পরেও সীমান্ত দিয়ে মাদক, স্বর্ণ, বিভিন্ন অবৈধ পণ্য সামগ্রী অনুপ্রবেশের বিষয়টি উঠে এসেছে।

নানা সমালোচনার মূখে গেল ৪৮ ঘন্টায় কক্সবাজার শহরজুড়ে অভিযান পরিচালনা করেছে জেলা পুলিশের ৫টি টিম। যাদের হাতে ধরা পড়েছে শহরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ ছিনতাইকারী ও ১৯ মামলার আসামী নুরুল ইসলাম মুন্নাসহ ৩২ জন। ১ থেকে শুক্রবার ভোর পর্যন্ত চলা পুলিশের এ বিশেষ অভিযানে প্রথম ধাপে ১২ জন ও গতকাল আরও ২০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যাদের বিরুদ্ধে, ছিনতাই ও ডাকাতি প্রস্তুতি মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

এ বিষয়ে প্রেস ব্রিফিংকালে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সব সময় সক্রিয়। তবে সামাজিক আন্দোলন না হলে পুলিশের একার পক্ষে পুরোপুরি অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সক্ষম হচ্ছে না। এজন্য সমাজের জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।

শহরে স্থাপিত সিসিটিভি ক্যামরার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, শহরে চলমান উন্নয়ন কর্মকান্ডের ফলে স্থাপিত একাধিক সিসিটিভি ক্যামরা এখন অচল। বলতে গেলে সংযোগও নেই। তবে শহরের বাজারঘাটামুখি ক্যামরাগুলি এখনো সচল আছে।

আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় সদস্য জেলা আওয়ামীলীগের নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ সিআইপি বলেন, জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় যে সব সিদ্ধান্ত নেয়া হয় এগুলো কার্যকর হয় না। ফলে সভাটি অকার্যকরের দিকে যাচ্ছে। তিনি এব্যাপারে সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং সভার সকল সিদ্ধান্ত যেন কার্যকর হয় সেদিকে খেয়াল রাখার দাবি জানান।

পর্যটন-শহরকে ছিনতাইমুক্ত ও পর্যটকদের চলাফেরা নির্বিঘœ করতে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এসবেরই একটি ছিল শহরকে সিসিটিভির আওতায় এনে মনিটরিং করার পদক্ষেপ। প্রায় ১৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের ফেব্রæয়ারীতে অর্ধ-শতাধিক সিসিটিভি ক্যামরা লাগানো হয়েছিল। কিন্তু ক্যামরাগুলো অচল থাকায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণ অনেক অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

পাঠকের মতামত: