ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

৬০ গডফাদারের মাধ্যমে মাদক আসে মিয়ানমার থেকে

ডেস্ক রিপোর্ট :
মিয়ানমার ইয়াবার উৎস ভূমি হিসেবে পরিচিতি। বাংলাদেশকে টার্গেট করে মিয়ানমার সীমান্তে গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধশত ইয়াবা কারখানা। মিয়ানমার থেকে সমুদ্রপথে ট্রলারযোগে মাছের আড়ালে মরণ নেশা ইয়াবার বড় বড় চোরাচালান আসছে বাংলাদেশে। আর দেশে ইয়াবা আনতে মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি নেটওয়ার্কে জড়িত কক্সবাজারের টেকনাফ এলাকার ৬০ গডফাদার। তারা মিয়ানমারের ব্যবসায়ীদের কাছে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চাহিদা অনুযায়ী ইয়াবা দেশে আনছেন।

তালিকাভুক্ত এই ৬০ গডফাদারই বাংলাদেশের সর্বত্রই ইয়াবার মূল সরবরাহকারী। তাদের মাধ্যমে প্রতি মাসে ইয়াবা বাবদ কোটি কোটি ডলার যাচ্ছে মিয়ানমারে। এসব মাদক টেকনাফসহ কক্সবাজরের বিভিন্ন এলাকা থেকে সড়ক, রেল ও নৌ পথে ইয়াবা সারাদেশে সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে। এদিকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাদক নির্মুল অভিযান অব্যাহত রেখেছে। অভিযানে গুলি বিনিময়কালে গতকাল মঙ্গলবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ১১ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দুইজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী (গডফাদার)। এরা হচ্ছেন ফেনীতে নিহত মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু ও আড়াইহাজারে নিহত বাচ্চু। এই বাচ্চু উত্তরা ও টঙ্গী এলাকায় ইয়াবাসহ মাদক নিয়ন্ত্রণের গডফাদার। গতকাল পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়কালে কুমিল্লা ও নীলফামারীতে দুইজন করে মোট চারজন এবং চুয়াডাঙ্গা, নেত্রকোণা ও দিনাজপুরে একজন করে তিনজন নিহত হয়েছেন। আর র্যাবের সঙ্গে গুলি বিনিময়কালে চট্টগ্রাম, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নারায়ণগঞ্জে নিহত হয়েছেন চারজন। গত ৪ মে থেকে এ পর্যন্ত ৩৬ শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী নিহত হলো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, রাষ্ট্রীয় পাঁচ সংস্থার প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করেই সারাদেশে মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। পুলিশের আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী জানান, প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। মাদক নির্মুল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। টেকনাফ হলো ইয়াবার মূল ঘাটি। এই এলাকার ইয়াবার সরবরাহ বন্ধ ও জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে দেশের ৯০ ভাগ ইয়াবা সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে বলে চারটি গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা জানান।
জানা গেছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের প্রায় ৪৩টি পয়েন্ট দিয়ে বিভিন্ন কৌশলে ইয়াবা পাচার করা হচ্ছে। এর মধ্যে টেকনাফ ও শাহপরীর দ্বীপের মধ্যবর্তী প্রায় ১৪ কিলোমিটার নাফ নদীর চ্যানেল এলাকা ইয়াবা পাচারের প্রধান রুট হিসেবে ব্যবহার করে চোরাচালানিরা। ইয়াবা চোরাচালানে ছোট নৌকা, ট্রলার, মালবাহী ছোট জাহাজ ব্যবহার করা হচ্ছে। ইয়াবার ৯০ শতাংশই নাফ নদী ও সাগর পথে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। আমদানি করা গাছের মধ্যে খোড়ল কেটে ও মাছের প্যাকেটের মধ্যে ইয়াবা আনা হয়। ইয়াবা গডফাদাররা এখন সরাসরি বস্তাবন্দী অবস্থায়ই ইয়াবা আনা শুরু করেছেন। ইয়াবার এই ৬০ জন গডফাদারের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণীর কর্মকর্তারা জড়িত। ওই সকল কর্মকর্তা এসব গডফাদার থেকে নিয়মিত পাচ্ছেন মাসোহারা। এছাড়া কর্মকর্তাদের অনুষ্ঠান ও বিদেশে যাতায়াতের ব্যয়ভারও এই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীরা বহন করে থাকে। এর বদৌলতে ইয়াবা পাচারের রুটগুলো সুরক্ষিত রাখতে ভূমিকা রাখছেন। অপরদিকে রাজনৈতিক দলের শীর্ষ অনেক নেতা, এমপিদের নির্বাচনী ব্যয়ভারও এই শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী বহন করে থাকেন। এজন্য এসব গডফাদাররা আইনের ঊর্ধ্বে। তাদের দাপটে স্থানীয় থানা পর্যায়ের কর্মকর্তারা রীতিমতো ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে।  ইয়াবা পাচারে সব জায়গায় তাদের প্রভাব রয়েছে। কেউ গ্রেফতার হলে তার জামিনও তারা পাইয়ে দেন। এদিকে দেশজুড়ে ইয়াবাসহ মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত থাকলেও কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তে এখনো কোনো ধরনের অভিযান চালানো হয়নি। এ পর্যন্ত বড় কোনো ইয়াবা কারবারি আটকের খবরও পাওয়া যায়নি। সীমান্তের ইয়াবা গডফাদাররা রয়েছে বহাল তবিয়তেই।
কক্সবাজারে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায় এবার একজন আলোচিত গডফাদারের নাম বাদ পড়েছে। তবে তার পুরো পরিবার ব্যবসায় জড়িত। কক্সাবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় নিয়ন্ত্রণকারী ৬০ গডফাদার হলেন, টেকনাফের ওলিয়াবাদ এলাকার আব্দুল আলিম, আব্দুল শুকুর, মারুফ বিন খলিল ওরফে বাবু, বাজারপাড়ার সাবেক পুলিশ ইন্সপেক্টর আবদুর রহামনের ছেলে সায়েদুর রহমান নিপু, নিপুর মা শামছুন্নার, চৌধুরীপাড়ায় পৌর কাউন্সিলর মৌলভী মজিবুর রহমান, মো. শফিক, মো. ফয়সাল, আলির ডেলের আক্তার কামাল ও তার সহদর শাহেদ কামাল, খানকারপাড়ার কামরুল হাসান রাসেল, শিলবনিয়াপাড়ার হাজী সাইফুল করিম, সাইফুল ইসলাম, আচারবনিয়ার আবুল কালাম, পশ্চিম লেদার ইউপি সদস্য নুরুল হুদা, টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ, তার ছেলে মোস্তাক মিয়া, দিদার মিয়া, সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান, ডেলপাড়ার মো. আমিন, তার ভাই নুরুল আমিন, নাজিরপাড়ার ইউপি সদস্য এনামুল হক, মৌলভীপাড়ার একরাম হোসেন, আব্দুর রহমান, নাজিরপাড়ার সৈয়দ মেম্বার, নয়াপাড়ার শামসুল আলম মারকিন, বাহারচরার ইউপি চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন, শ্যামলাপুরের হাবিবুল্লাহ, কচুবনিয়ার মৌলভী বসিরউদ্দিন ওরফে ডাইলা, খানকারপাড়ার মৌলভী বোরহান, পুরান ফোরলানপাড়ার শাহ আলম, নাজিরপাড়ার জিয়াউর রহমান, তার ভাই আব্দুর রহমান, মধ্যম জালিয়াপাড়ার মোজাম্মেল হক, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার জোবায়ের হোসেন, কাউন্সিলর কুলালপাড়ার নুরুল বশত ওরফে নুসরাত, পুরান ফোরলানপাড়ার আব্দুল হাকিম ওরফে ডাকাত আব্দুল হাকিম, হাতিয়ারগোনার মো. আব্দুল্লাহ, জালিয়ারপাড়ার জাফর আলম ওরফে টিটি জাফর, গোদারবিলের আলি আহমেদ চেয়ারম্যানের ছেলে আব্দুর রহমান, তার পুত্র জিয়াউর রহমান, গোলারবিলের চেয়ারম্যান নুরুল আলম, সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর দুই ছেলে মো. রাশেদ, মাহবুব মোর্শেদ,  বাজারপাড়ার মো. শাহ মালু, নির্মল ধর, পশ্চিম লেদার নুরুল কবির, বড় হাবিবপাড়ার ইউসুফ জালাল বাহাদুর, নাইটেংপাড়ার ইউনুস, উলুমচামুরীর আব্দুল হামিদ, পশ্চিম শিকদারপাড়ার সৈয়দ আহমদ ছৈয়তু, রঙ্গিখালীর হেলাল আহমেদ, জাদিমুরার হাসান আব্দুল্লাহ, উত্তর জালিয়াপাড়ার মোস্তাক আহমেদ ওরফে মুছু, কুলালপাড়ার মৃত রশিদ চেয়ারম্যানে তিন পুত্র মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, দেলোয়ার হোসেন টিটু, আলমগীর হোসেন, শাবপুরিরদিন শাবরং ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হামিদুর রহমান, নয়াপাড়ার রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা মো. আলম ওরফে মাত আলম, মঠপাড়ার আব্দুল জব্বার ও তার ভাই মো. আফসার।

পাঠকের মতামত: