ঢাকা,শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

সিনহা হত্যা মামলার রায়ঃ প্রদীপ-লিয়াকতের মৃত্যুদণ্ড

কক্সবাজার প্রতিনিধি :: বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় দু্ই জনের মৃত্যুদণ্ড, ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সাত জনকে মামলার দায় হতে খালাস দিয়েছেন আদালত। সোমবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল রায় ঘোষনা করেন। রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে সিনহার পরিবার। তবে আসামী পক্ষের আইনজীবীরা বলছেন, তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করবেন।

মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষনাকে কেন্দ্র করে সোমবার সকাল থেকেই কক্সবাজার জেলা ও দায়রা আদালত প্রাঙ্গনে কড়া উপস্থিতি ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। বিকেল সাড়ে ৪ টায় জনাকীর্ণ আদালতে আলোচিত মামলাটির রায় ঘোষনা করেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল। রায়ে দু্ই জনের মৃত্যুদণ্ড, ৬ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও সাত জনকে মামলার দায় হতে খালাস দিয়েছেন আদালত।

মৃত্যদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- মামলার এক নম্বর আসামী, টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের বরখাস্ত পরিদর্শক, লিয়াকত আলী ও মামলার দুই নম্বর আসামী টেকনাফ থানার বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।

যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হলেন-মামলার ৩ নম্বর আসামী, বাহারছড়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের বরখাস্ত এসআই নন্দদুল্লাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাগর দেব, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও টেকনাফের মারিশবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল আমিন, নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।

এছাড়াও খালাস পেয়েছেন এপিবিএন এর এসআই শাহজাহান আলী, কনস্টেবল মো: রাজীব, মো: আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, পুলিশের কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, লিটন মিয়া ও আব্দুল্লাহ আল মামুন।

দুপুর ১ টা ৫৭ মিনিটের দিকে ১৫ আসামিকে কক্সবাজার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। বিচারক এজলাসে আসেন ২ টা ২০ মিনিটের দিকে। এরপরই বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল রায় পড়া শুরু করেন। ৩০০ পৃষ্ঠার রায় পড়া শেষ হয় সাড়ে ৪ টায়। এসময় আদালতের এজলাসে উপস্থিত আসামীদের বিমর্ষ দেখা যায়।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় বাদীপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, তারা একই সাথে সন্তুষ্ট এবং সংক্ষুব্ধও।
তবে আসামী পক্ষের আইনজীবী বলছেন, এ রায়ে সন্তুষ্ট নন। তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করবেন।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই টেকনাফের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সিনহা। তাৎক্ষনিকভাবে সরকারি কাজে বাধা এবং মাদক আইনে তিনটি মামলা করে পুলিশ। আসামি করা হয় সিনহার সঙ্গী সাইদুল ইসলাম সিফাত এবং শিপ্রা দেবনাথকে।
এতে সমালোচনার ঝড় উঠে। এ রকম পরিস্থিতিতে ৫ আগস্ট নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস কক্সবাজার আদালতে মামলা করেন। আসামি করেন ওসি প্রদীপসহ ৯ পুলিশ সদস্যকে। আদালতের নির্দেশে তদন্তভার পায় র‌্যাব। ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর অভিযোগপত্র দিয়ে তদন্ত দল বলে, সিনহা হত্যাকান্ড একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’।

৩১ ডিসেম্বর আদালত অভিযোগপত্রটি গ্রহণ করে এবং পুলিশের দায়ের ৩ টি মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে সাইদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথকে অব্যাহতি দেন। মামলায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন ১২ অভিযুক্ত। ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬৫ জন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন।

বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ডসহ বহু বিতর্ক সামনে আনা এ হত্যা মামলার রায়ের দিকে সোমবার মনোযোগ ছিল দেশবাসীর।

পাঠকের মতামত: