ঢাকা,মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ : ’ধানের শীষ প্রার্থীকে হত্যায় নৌকা প্রার্থীর পুরস্কার ঘোষণা’

IMAG1447_2বিশেষ প্রতিনিধি:
ইউপি নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের এক চেয়ারম্যান প্রার্থীকে হত্যা করতে পুরস্কার ঘোষণা করেছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। এ অবস্থায় যে কোন সময় প্রাণহানির শঙ্কা করছেন বিএনপির প্রার্থী। ১৭ এপ্রিল দুপুরে কক্সবাজার জেলা বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে চকরিয়া উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বিএনপি মনোনিত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মৌলানা এহেছানুল করিম এ অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি প্রার্থী এহেছানুল করিম বলেন, নির্বাচনের মনোয়ন দাখিলের পর থেকেই আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী প্রার্থীতা প্রত্যাহারের জন্য তার উপর চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে। শুরু থেকেই প্রচারণাসহ সব ধরণের নির্বাচনীয় কাজে বাঁধা দিয়ে আসছে। প্রচারণার ২য় দিন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তাকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেয়। পর দিন ফাঁসিয়াখালী ফকিরা হাটস্থ তার ভাইয়ের দোকানে তালা মেরে দেয় আওয়ামীলীগের প্রার্থীর লালিত সন্ত্রাসী বাহিনী। এরপর পুরো ফাঁসিয়াখালীতে প্রায় ৪ হাজার নির্বাচনীয় পোষ্টার লাগায় বিএনপি প্রার্থী। পরে পোষ্টার লাগানোর কাজে নিয়োজিত বিএনপি প্রার্থীর কর্মীদের মারধর ও লাঞ্চিত করে পোষ্টার গুলো ছিঁড়ে ফেলে।
তিনি বলেন, বোনদের নিয়ে নির্বাচনীয় প্রচারণায় বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করতে গেলে আওয়ামীলীগ প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরীর ভাগিনা সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তাদেরকে অবরুদ্ধ করে ফেলে। এক পর্যায়ে বিএনপি প্রার্থীর বোনদের লাঞ্চিত করে সন্ত্রাসীরা। ওই সময় বিএনপির প্রার্থী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার, রিটার্নিং অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোন ধরণের প্রশাসনিক সহযোগিতা পায়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, গত শনিবার মোটর সাইকেল নিয়ে কক্সবাজার আসার পথে হঠাৎ আওয়ামীলীগ প্রার্থীর লালিত সন্ত্রাসী বাহিনী হত্যার উদ্দেশ্যে অস্ত্রের মুখে তাকে জিম্মি করে ফেলে। ওই সময় কোন রকম দৌঁড়ে পাশের একটি বাড়িতে ঢুকে পড়েন তিনি। পরে সন্ত্রাসীরা তাকে ওই বাড়িতে বেশ কিছুক্ষণ জিম্মি করে রাখে। পরে জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে চকরিয়া থানার ওসির সাথে বার বার যোগাযোগ করার পর পুলিশ তাকে উদ্ধার করে। ওই সময় তার মোটর সাইকেলটি ছিনিয়ে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। কিন্তু এ ঘটনায় এখনো পুলিশ একটি অভিযোগও নেয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি। জিম্মি করার পর থেকে তার মোবাইলে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করে এ বিষয়ে কোথাও কোন অভিযোগ না করার জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। একই সময় মিথ্যা একটি ঘটনায় তার বাবাকেও পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি বলেন, ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করার জন্য গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তার নিজস্ব মুরগীর খামারে খাদ্য নিয়ে যেতে বাঁধা দিচ্ছে। কয়েকদিন ধরে মুরগীর বাচ্চা গুলো না খেয়ে আছে। খেতে না পেরে বাচ্চা গুলো মারা যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানোর অভিযোগ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে কান্না জড়িত কণ্ঠে বিএনপি প্রার্থী বলেন, নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিলের পর থেকেই হত্যার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে আওয়ামীলীগ প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী। শুরু থেকেই যেখানে সেখানে হামলা চালাচ্ছে। জন সমর্থন না থাকায় শুরু থেকেই প্রার্থীতা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কিছুদিন আগে আওয়ামীলীগের প্রার্থী গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি প্রার্থীকে মেরে ফেললে ২ লক্ষ টাকা পুরস্কার দেয়ার। তখন থেকেই এলাকা ছাড়া বলে জানান বিএনপি প্রার্থী। কারণ যে কোন সময় তার উপর হামলা চালিয়ে বসে নৌকা প্রতীক প্রার্থীর সন্ত্রাসী বাহিনী।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক দেশে যদি ভোটে দাঁড়ানো অপরাধ হয় তাহলে সেই ভোটের দরকার নেই। কিভাবে প্রকাশ্যে জাহেলিয়া যুগের বর্বরোচিত আচরণ করতে পারে তার উদাহরণ স্ব-চক্ষে দেখেছেন বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা বিএনপির সভাপতি মোঃ শাহাজান চৌধুরী বলেন, শুধুমাত্র গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। কিন্তু এখন সবখানে ক্ষমতাসিন দলের লেলিয়ে দেয়া সন্ত্রাসীরা ভোটে বিজয়ী হওয়ার জন্য ভোট কারচুপি, বিএনপি প্রার্থীকে অপহরণ, সন্ত্রাসী হামলা, মিথ্যা মামলাসহ নানা ধরণের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হয়রানি করে যাচ্ছে। পূর্ণ জনসমর্থন এখন বিএনপির পক্ষে। কিন্তু জোর করে ভোটে জয় লাভ করার জন্য ইসি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাই সহযোগিতা করে যাচ্ছে আওয়ামীলীগকে। দেশের সব ইউপি নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীরা নির্যাতন আর হয়রানির শিকার হলেও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের বিএনপি প্রার্থীর নির্যাতন বর্বরোচিত।
বর্তমান ইসিকে অযোগ্য ঘোষণা করে তিনি বলেন, এই মূহুর্তে নির্লজ্জ ইসির পদত্যাগ করা উচিত। নতুন আইন পাস করে ইউপি নির্বাচন দলীয় প্রতীকে বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এখনো পর্যন্ত সব রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহণে ইউপি নির্বাচনে একটিও আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠক করেনি ইসি। এভাবে চলতে থাকলে ইউপি নির্বাচন থেকে বিএনপি সরে যাবে বলে ঘোষণা দেন তিনি। একই সাথে ফাঁসিয়াখালীর ঘটনায় কেন্দ্রীয় বিএনপি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সাবেক এমপি লুৎফুর রহমান কাজল বলেন , নৌকা প্রতীকের প্রাথী আওয়ামীলীগের উপজেলা সাধারণ সম্পাদক হওয়ায় ক্ষমতার দম্ভ ও কর্তৃত্ববাদী হয়ে পড়েছেন । অন্য কোন প্রাথী তার বিরুদ্ধে দাড়ানোকে বেয়াদবি মনে করছেন! পরিস্থিতি নিবাচনের অনুকূলে না হলে আমাদের প্রাথী নিবাচন বয়কট করতে বাধ্য হবে।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামিম আরা স্বপ্না, আলহাজ্ব রফিকুল হুদা চৌধুরী , এনামুল হক , এড. আবু সিদ্দিক উসমানী , জামিল ইব্রাহিম চৌধুরী , রফিকুল ইসলাম কাউন্সিলর , রাশেদ মোহাম্মদ আলী , অধ্যাপক আজিজুর রহমান , মোবারক আলী,  এম মোকতার আহমদ , ছৈয়দ আহমদ উজ্জল , রাশেদুল হক রাশেল , সরওয়ার রোমন , মনির উদ্দিন , মাসউদুর রহমান মাসুদ , মো: রফিক , মুরাদ প্রমুখ । অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক আকতার চৌধুরী ।

 

পাঠকের মতামত: