নুরুল আমিন হেলালী, কক্সবাজার :::
রাতের বেলা পর্যটন নগরী কক্সবাজার শহরের হাজার হাজার নাগরিক যখন ফিরে যান আপন আলয়ে, তখন একদল সহায়-সম্বলহীন মানুষ বিছানা পাতেন বিভিন্ন মার্কেটের সামনে, ফুটপাতে কিংবা গাছের তলায়। রাজধানী ঢাকা-চট্রগ্রাম ও অন্যান্য শহরের মত পর্যটন শহরেও দেখা যায় হোমলেস বা গৃহহীনদের দুর্বিসহ জীবন। গভীর রাতে শহরের ফুটপাতে ছিন্নমুলদের স্ব-পরিবারে ঘুমিয়ে থাকা রোজগারের শ্রমিকদের যেমন দেখা মিলবে তেমনী দেখা মিলবে রাত জাগানো অপরাধী, মাদকাশক্ত ও ভাসমান যৌনকর্মীদের। এসব চরিত্রের বিচিত্র মানুষগুলো রাতের বেলায় সবচেয়ে বেশী চোখে পড়বে কোর্ট বিল্ডিং এলাকায়। রাতের লালদীঘির পাড়, পৌরসভার সামনে, সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সামনে, কোর্ট বিল্ডিং চত্বরে দেখা মিলবে কিছু মানুষের বর্ণিল সব চরিত্র। কথা বলে জানা যায়, এসব মানুষের বিচিত্র কর্মকান্ড। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একটি জায়গায় এরা সবাই এক। এদের কারোরই থাকার মত নিজস্ব কোন ঘর নেই। প্রত্যেকেরই রয়েছে আলাদা আলাদা হ্নদয় ছোঁয়ে যাওয়ার গল্প। পাঁচ বছর আগে স্বামী পরিত্যক্তা ছোট দুই মেয়েকে নিয়ে শহরে রাত জাগানো ভাসমান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক যৌনকর্মীর সাথে কথা হয়। সে জানায় অনেক দিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন ভিক্ষে করেছেন। নিরুপায় হয়ে জীবন বাঁচাতে এই অপকর্মে তার পথচলা। এছাড়া সী-কুইন মার্কেটের সামনে ফুটপাতে এক অন্ধকার অংশে দাঁড়িয়ে আগুন পোহাচ্ছিলেন একদল ছিন্নমুল মানুষ। এদের মধ্যে সাজ গোজ করা কয়েক তরুণীও রয়েছে। এদের সাজগোজ, বেশভুষা দেখে মনে হয়েছে এরা দেহ বিসর্জন দিয়ে কিছু মানুষরুপী হায়েনাদের মনোরঞ্জনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানায়, তিন বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে এভাবেই জীবন চলে র্তা দিনের বেলায় সৈকতের ঝাউবাগানে ঘুমিয়ে পড়েন। অন্যদিকে কোর্ট বিল্ডিং চত্বরে পৌরসভার সামনে দেখা যায় সারি সারি অনেকগুলো রিক্সা-ভ্যানগাড়ি। দিনের বেলায় এগুলো নিয়ে বেরিয়ে পড়ে, রাতে ফুটপাতে ঘুমিয়ে রাত কাটায় বলে জানায় আব্দু রহমান সহ কয়েকজন ভাসমান কর্মজীবি। তারা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রোজগারের আশায় শহরে এসেছেন রোজগার কম তাই ভাড়া বাসায় থাকতে পারের না ফলে রাতে খোলা আকাশের নীচে শীত উপেক্ষা করে রাত যাপন করেন। শহরের এক দোকানদার জানান, এসব ভাসমান মানুষের কেউ কেউ দু-তিন প্রজন্মও কাটিয়ে দিয়েছেন খোলা আকাশের নীচে। এদের অনেকের জন্ম হয়েছে ফুটপাতে, মৃত্যুও সেখানে। শীত মৌসুমে অনেক নব্য কোটিপতি, মুনাফালোভী ব্যবসায়ী কিংবা সুবিধাভোগী রাজনৈতিক নেতাদের দেখা মিলবে এদের হাতে শীতবস্ত্র বিতরণের নামে সেলফি তোলে ফটোসেশন করে বিভিন্ন পত্রিকায় ছবি ছাপিয়ে নিজেকে জাহির করতে। দেখা যায়, রাত বাড়ার সাথে সাথে শহর নিস্তব্ধ হতে থাকে, পথ চলতি মানুষের সংখ্যাও কমতে থাকে। শুধু শহরের বিভিন্ন স্থানে চোখে পড়ে ফুটপাতে শীতের রাতের কুন্ডলী পাকিয়ে শুয়ে থাকা ঘরহীন ছিন্নমুল মানুষদের। কবির ভাষায় বলতে হয় এদের ফেলে ওগো ধনী, ওগো দেশের রাজা, কেমন করে রুচে মূখে, মন্ডা মিঠাই খাজা।
পাঠকের মতামত: