ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪

লামা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আয়ারাই ডাক্তার ও নার্স!

আবুল কালাম আজাদ, লামা থেকে ::
বান্দরবানের লামা উপজেলায় সরকারি স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত দুই লাখ মানুষ। কাগজপত্রে ৮ জন মেডিকেল অফিসার নিয়োগ থাকলেও তাদের বেশিরভাগই কর্মস্থলের বাইরে প্র্রশিক্ষণ ও সভা-সমাবেশে ব্যস্ত সময় কাটান। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ কিংবা প্রশাসনিক কাজের অজুহাতে প্রায়ই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। হাসপাতালে সরকারি ওষুধপত্রের পর্যাপ্ত মজুদ থাকার কথা দাবি করা হলেও বাস্তবে রোগীরা তেমন ওষুধ পায় না। রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত বহু ওষুুধ বিতরণ না করে মেয়াদ উত্তীর্ণ করে বিনষ্ট করে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে নার্স-কর্মচারীদের তেমন একটা অভাব না থাকলেও নিরাপদ প্রসবের কোনো ব্যবস্থাও নেই। ফলে প্রতিনিয়ত চরম ঝুঁকিতে দিন অতিক্রম করছেন উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকার বহু সন্তান সম্ভবা মহিলারা। সম্প্রতিক সময়ে দুই বিশেষজ্ঞ (এফসিপিএস) ডাক্তার চিকিৎসাসেবা দেয়ায় সংকট কিছুটা নিরসন হলেও একজন গাইনি ডাক্তার না থাকায় মৃত্যু ঝুঁকিতে প্রসূতিরা।
৮০’র দশকে ৩১ শয্যাবিশিষ্ট লামা স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি স্থাপন করে তৎকালীন সরকার। ২০১২ সালে উপজেলার জনসংখ্যার আধিক্য বিবেচনা করে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর ও স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করে। ঘোষণার তিন বছর অতিক্রম হলেও স্বাস্থ্য কেন্দ্রটিতে ৫০ শয্যার প্রশাসনিক কার্যক্রম এখনও শুরু হয়নি। ডাক্তার বা যন্ত্রপাতি বরাদ্দ হয়নি এখনও। গাইনি ডাক্তার না থাকায় নিরাপদ মাতৃত্বের চরম ঝুঁকিতে রয়েছে এই উপজেলার প্রসূতি মায়েরা। সম্প্রতি লামা পৌর এলাকার মধুঝিরি গ্রামের বাসিন্দা জালাল আহমদের মেয়ে ফারজানা বেগম হাসপাতালে সন্তান প্রসবের সময় মারা যান।
প্রশাসনিকভাবে ৫০ শয্যা হাসপাতাল চালু করা হলে কনসালটেন্ট পদে ৯ জন, গাইনিসহ এমবিবিএস পদে ৯ জন ডাক্তার ও ১৪ জন সিনিয়র স্টাফ নার্স থাকার নিয়ম রয়েছে। সরকারি স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য কেন্দ্রেটিকে ৫০ শয্যা মানের সেবা কার্যক্রম চালু ও প্রয়োজনীয় জনবলসহ সেবাযন্ত্র সরবরাহে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ দাবি করেছে লামা উপজেলাবসী।
এছাড়া কর্তৃপক্ষের বাণিজ্যিক মানসিকতার কারণে শুরু থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স ও এক্স-রে মেশিনসহ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কোটি টাকা মূল্যের চিকিৎসা যন্ত্রগুলো অযত্নে নষ্ট হয়ে গেছে। হাসপাতালে আয়ারাই রোগীদের ইনজেকশন পুস, বাগান মালিরা কাটাছেঁড়া-সেলাই করাসহ গাইনি বিভাগের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় লামা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে আয়ারাই ডাক্তার ও নার্স।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. ছৈয়দ আহমদ বলেন, ডাক্তার সংকটের বিষয়টি সত্য। তিনি বলেন, সরকার যথেষ্ট ওষুধ বরাদ্দ দিচ্ছে, এক্ষেত্রে সংকট নেই। তবে গাইনি ডাক্তার না থাকায় প্রসূতি মায়েদের সেবায় বিঘ্ন ঘটছে।

পাঠকের মতামত: