ঢাকা,মঙ্গলবার, ৫ নভেম্বর ২০২৪

লামায় পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে ১২ হাজার পরিবার

pic 19.06 (2)মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি ঃ

টানা বৃষ্টিতে বান্দরবানের লামায় পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। লামায় এই ঝুঁকিতে রয়েছে প্রায় ১২ হাজার পরিবার। চলমান বর্ষায় লামায় ৩০৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। লামা উপজেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে প্রতিবছরই বর্ষার সময় পাহাড় ধসে জীবন হারান অসংখ্য মানুষ।

গত বছর লামা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ড হাসপাতাল পাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে ৬জনের মৃত্যু ও ২০১২ সালে ২৭ জুন রাতে ফাইতং, রুপসীপাড়া ও লামা সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধস ট্রাজেডিতে ২৯ জন নারী-পুরুষ মারা যান। ২০১২ সালের এই দিনে উপজেলার আরো অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়। ফাইতং ইউনিয়নের রাইম্যা খোলায় এক পরিবারের ৭জন একসাথে মারা যাওয়ার ঘটনা মনে পড়লে এখনো শিউরে উঠেন স্বজন হারানো সেই মানুষগুলো।

২০১২ সালের ভয়াবহ পাহাড় ধস ট্রাজেডির বর্ণনা দিতে গিয়ে লামার ফাইতং ইউনিয়নের পিয়ারা বেগম বলেন, নুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি তার প্রতিবেশী হিসেবে মাত্র দু’মাস পূর্বে পাহাড়ের পাদদেশে ঘর বেঁধে বসবাস শুরু করে তারা। সে রাতের পাহাড়ের মাটি চাপায় আমার পরিবারের ৭ জন ও ৪ মেহমানসহ ১১ জন মর্মান্তিক ভাবে মারা যান।

লামা পৌরসভার হাসপাতাল এলাকার স্থানীয় অধিবাসী মোঃ রুবেল, আলমগীর ও আলমগীর সহ অনেকে জানান, থাকার কোথাও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের ঢালুতে পরিবার-পরিজন নিয়ে বসবাস করছেন। সরকারি কোথাও নিরাপদ স্থানে থাকার সুযোগ করে দিলে তারা এখান থেকে চলে যাবেন।

জনপ্রতিনিধি ও বিভিন্নি এনজিও’র জরিপে দেখা গেছে, লামার সাত ইউনিয়নে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাহাড়ের ঢালুতে (পাদদেশে) বসবাস করছেন ৪০ হাজার অধিক মানুষ। যার মধ্যে ১৫ হাজার মানুষ অতিঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। লামা উপজেলার গজালিয়া, লামা সদর, ফাঁসিয়াখালী, আজিজনগর, সরই, রুপসীপাড়া ও ফাইতং ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে ১২ হাজার পরিবার। এদের বেশিরভাগই হতদরিদ্র মানুষ। বিগত বছরে বর্ষার শুরুতে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষকে সরাতে প্রশাসন নানান পদক্ষেপ নিলেও তা সম্ভব হয়নি। ভূমিহীনদের নতুন করে পূর্নবাসন না করে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে উচ্ছেদ করা সম্ভব নয় এবং তা অমানবিক হবে বলে জানান সচেতন মহল।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার খালেদ মাহমুদ বলেন, পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী পরিবার গুলোকে মাইকিং করে নিরাপদে সরে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে। পাশাপাশি প্রত্যেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যানদের নিয়ে ইতিমধ্যে মিটিং করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালে লামা পৌর এলাকার রাজবাড়িতে একই পরিবারের ৭জন, ২০০৬ সালে জেলা সদরে ৩জন, ২০০৯ সালে লামা উপজেলায় শিশুসহ ১১জন, ২০১০সালে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ৫জন, ২০১১ সালে রোয়াংছড়ি উপজেলায় ২জন, ২০১২ সালে ২৭ জুন রাতে ফাইতং ইউনিয়নে ২৫জন, রুপসীপাড়া ইউনিয়নে ২জন ও সদর ইউনিয়নে ২জন সর্বমোট লামা উপজেলায় ২৯জন ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায় ১০ জন সর্বশেষ ২০১৫ সালে লামা পৌরসভায় ৬জন পাহাড় ধসে মারা যান।

 

পাঠকের মতামত: