বাংলাদেশে অবস্থানকারী নির্যাতিত, নিপীড়িত, গন হত্যা ও গনধর্ষনের শিকার হয়ে প্রাণের ভয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের বেদনাদায়ক চিত্র নিজ চোখে দেখতে আসলেন মিয়ানমার সরকারের ১০ সদস্যদের প্রতিনিধি দল। গতকাল ২০ মার্চ সোমবার দুপুর ১ টার দিকে লেদা আনরেজিষ্টাট রোহিঙ্গা বস্তি পরিদর্শন করেন।
এর পর প্রতিনিধি দল নতুন আশ্রয় নেওয়া নির্যাতিত ১৫ জন নারী-পুরুষের সাথে সাক্ষাৎ ও এক মত বিনিময় সভায় মিলিত হন। এবং নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে জানতে চান। তারা বাংলাদেশে কেন এলো ? সেসব জানতে চান। প্রায় এক ঘন্টার এই বৈঠকে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা মিয়ানমার থেকে আসা তদন্ত কমিশনকে লাগাতার তিন মাসের জুলুম-নির্যাতনের বর্ণনা দেওয়া শুরু করেন। এই সময় মিয়ানমারের তদন্ত কমিশনের সদস্যরা তাদেরকে স্বদেশে ফেরত যাওয়ার জন্য অনুরোধ জানান, এই প্রশ্নের উত্তরে নির্যাতিত রোহিঙ্গারা পূর্ণাঙ্গ নাগরিকত্ব ও মিয়ানমারে ফেরত নেওয়া সহ বেশ কয়েকটি দাবী তুলে ধরেন। তার পাশাপাশি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যে সমস্ত রাখাইন সন্ত্রাসীরা তাদের উপর লাগাতার জুলুম-অত্যাচার ও নির্যাতন করেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্টাইবুনালের মাধ্যমে বিচারের দাবী তুলে ধরেন। বৈঠক শেষে নির্যাতিত রোহিঙ্গা নারী হাসিনা, সনজিদা, আম্বিয়া খাতুন, দু:খ প্রকাশ করে বলেন, আমাদেরকে দেখতে আসা এই সমস্ত নেতাদের নেতৃত্বে ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে আমাদের বাড়ি-ঘর, জুলুম-নির্যাতন করে মেরে পেলা হয়েছে নারী-শিশুসহ শত শত মানুষকে। গন হারে ধর্ষন করেছে যুবতী মেয়েদেরকে। তারা দু:খ প্রকাশ করে আরো বলেন, আমাদেরকে অমানবিক নির্যাতন করে দীর্ঘ ৪ মাস পর দেখতে এসেছে আমরা কিভাবে বেঁেচ আছি। মিথ্যা আশ^াস দিয়ে আরেকবার নিয়ে যেতে পারলে হত্যা করে নিরবংশ করে ফেলবে। আমাদেরকে আন্তর্জাতিক ভাবে সঠিক নাগরিকত্ব, বাপ-দাদার জায়গা জমি, ঘর-বাড়ি ফিরিয়ে দিয়ে স্বাধীন ভাবে চলাফেরা সুযোগ করে দিলে আমরা নিজ দেশে ফিরে যাব।
মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধি দলের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, জ্যং মিন্ট পে, ত্যং তুই থেত, তুন মায়ার্ট, নিয়াট সোয়ে, থেট থেট ঝিন, নিয়ান নাই ম্যানসহ ১০ সদস্যদের প্রতিনিধি দল। পরিদর্শনের সময় তাদেরকে সার্বিক সহযোগীতা করেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আই ও ম) বাংলাদেশ প্রধান পে পে সিদ্দিকী সহ (আই ও ম) কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য, গত বছর ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকটি বিওপিতে সন্ত্রাসী ও মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষীর সাথে সংর্ঘষকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর শুরু হয় লাগাতার জুলুম, নির্যাতন, গনহত্যা, গনধর্ষন। এর পর সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে প্রায় ৭০ হাজার রোহিঙ্গা। এর মধ্যে বেশির ভাগ রোহিঙ্গা উখিয়া-টেকনাফ উপজেলার রোহিঙ্গা বস্তি ও দেশের বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়েছে।
পাঠকের মতামত: