নুর মোহাম্মদ, উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ফলিয়া পাড়া গ্রামের বাসিন্দা আর ৪ জুন অনুষ্টিত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ওই ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের একজন সাধারণ মেম্বার প্রার্থী। তিনি লাঠিম প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করেছেন। তার আরও একটি পরিচয় আছে, তিনি রাজাপালং ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি।
এই নূর মোহাম্মদের বাড়ির কাছের ভোট কেন্দ্র ফলিয়া পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই কেন্দ্রে তিনি নিজের ভোট দিয়েছেন। একই ভাবে তার লাটিম প্রতীকে ভোট দিয়েছেন স্ত্রী, মা ছাড়াও নিকটজনরাও। সাধারণ ভোটার তো আছেনই। কিন্তু ভোট শেষে যখন গণনা করা হলো তখন অতিবিস্ময়ের সাথে দেখা গেলো, তার লাঠিম প্রতীকে একটিও ভোট নেই!
মেম্বার প্রার্থী নুর মোহাম্মদের এখন প্রশ্ন, ‘কোন ভোটার নাহয় আমাকে ভোট দিলেন না! কিন্তু আমি যে ভোট দিলাম, আমার সেই ভোটটি কই?’
নূর মোহাম্মদের এই প্রশ্নের উত্তর মিলছে না। সেই ভোট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ছিলেন উখিয়া খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা সুনীল দত্ত। নূর মোহাম্মদ রোববার সকালে নিজের কর্মী-সমর্থকদের সাথে নিয়ে ওই কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়েছিলেন ওই উত্তর খুঁজতে। কিন্তু তিনি ভালো কোন উত্তর দিতে পারেননি। ওই সরকারী কর্মকর্তা প্রার্থী নূর মোহাম্মদকে জানান, তার ভোট কোথায় গেল তিনি জানেন না! তাকে যেভাবে রেজাল্ট শিট লিখতে বলা হয়েছে তিনি সেভাবে লিখে দস্তখত করে দিয়েছেন। বাকিটা তিনি জানেন না!
এমনটাই ঘটেছে রাজাপালং ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ফলিয়া পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের ফলাফলে। আর এই ফলাফলের চিত্র তুলে ধরে মেম্বার প্রার্থী নূর মোহাম্মদ উখিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাঈন উদ্দিন এবং রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও টেকনাফ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা নুরুল ইসলামের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একই সাথে ওই কেন্দ্রের ভোট পূনরায় গণনার দাবি জানিয়েছেন।
কেন্দ্রটিতে মোট ভোটারের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ১৬৩। সেই ভোটারের মধ্যে ৩ হাজার ১০২ জন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। এগুলোর মধ্যে ১৭০ ভোট বাতিল করা হয়েছে। আর ৬১ জন ভোটার অনুপস্থিত ছিলেন।
প্রিসাইডিং কর্মকর্তার দেয়া ফলাফল অনুযায়ী এই কেন্দ্রে মেম্বার প্রার্থীদের মধ্যে সর্বোচ্চ এক হাজার ৩৪১ ভোট পেয়েছেন তালা প্রতীকের আবদুল হক। তার পরের অবস্থানে আছেন ঘুড়ি প্রতীক নিয়ে রুহুল আমিন। তিনি পেয়েছেন ৭৩১ ভোট। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন ক্রিকেট ব্যাট প্রতীক নিয়ে বুজুরুক মিয়া। তার ভোট সংখ্যা ৬৭৬। এছাড়াও অন্য দুই প্রার্থী বর্তমান মেম্বার আবদুল গফুর বৈদ্যুতিক পাখা প্রতীক নিয়ে ১৫৩ ভোট ও বেলাল উদ্দিন টর্চ লাইট প্রতীক নিয়ে ৩১ ভোট পেয়েছেন।
এই ওয়ার্ডে মেম্বার পদে ১২ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করেছিলেন। এদের মধ্যে ৫ জন প্রার্থীর ফলাফলে প্রাপ্ত ভোটের সংখ্যা দেখানো হলেও অন্য ৭ জন প্রার্থীকে ‘শূণ্য’ ভোটের হিসাব নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। ‘শূণ্য’ ভোটের হিসাবপ্রাপ্ত প্রার্থীরা হলেন পানির পাম্প প্রতীকের আমির হোছন, লাঠিম প্রতীকের নূর মোহাম্মদ, ফুটবল প্রতীকের মোহাম্মদ ইব্রাহিম, ভ্যানগাড়ি প্রতীকের মোহাম্মদ উল্লাহ, টিউবওয়েল প্রতীকের মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, মোরগ প্রতীকের মো. ইসহাক ও আপেল প্রতীকের মো. শফি।
‘শূণ্য’ ভোট পাওয়া ৭ প্রার্থীর মধ্যে অন্যরা এগিয়ে না এলেও এই ফলাফল নিয়ে লড়াই করতে মাঠে নেমেছেন নূর মোহাম্মদ। তার দাবি, ‘আমি নিজে ভোট দিয়েছি। আমার স্ত্রী ও মা ভোট দিয়েছেন। তাদের পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন ও প্রচুর সাধারণ ভোটার লাঠিম প্রতীকে ভোট দিয়েছেন। ওই ভোট গেল কোথায়?’
নূর মোহাম্মদ দাবি করেন, ভোট গণনার সময় থাকা নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থীর একজন এজেন্ট তাকে জানিয়েছেন, ওনি নিজেই লাঠিম প্রতীকের ভোটের দুইটি বান্ডিল দেখেছেন। কিন্তু নৌকা প্রতীকের রেজাল্ট নিয়ে বের হয়ে যাওয়ায় পরে কী হয়েছে তা তিনি জানেন না।
তবে এ ব্যাপারে ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা সুনীল দত্তের কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
পাঠকের মতামত: