ঢাকা,বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুতের জেটিতে ভিড়তে পারবে বড় জাহাজও, এটি প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্র বন্দরের পরিপূরক

matarbari-biddut-prokolpoমহেশখালী প্রতিনিধি :::

মহেশখালীর সোনাদিয়ায় প্রস্তাবিত গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ ‘আপাতত’ সম্ভব না হলেও মহেশখালীর মাতারবাড়ির কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য নির্মিত জেটিই হবে গভীর সমুদ্র বন্দরের পরিপূরক। কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রয়োজনীয় ব্যবহার বাদেও এজেটি গভীর সমুদ্র বন্দরের জাহাজ ভিড়ানোসহ পণ্য আনা নেওয়ায় অভাবের বেশ খানিকটা পুষিয়ে দিতে পারবে বলে মনে করছেন বন্দর সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। বিশেষজ্ঞদের মতে, মাতারবাড়িতে নির্মাণাধীন জেটিতে ১৮ মিটার ড্রাফ্‌ট ও ২২০ মিটার দৈর্ঘ্যের কমপক্ষে ৮০ হাজার মেট্রিকটনের বেশি ওজনের জাহাজ ভিড়তে পারবে। আশা করা যায়, মহেশখালীর মাতারবাড়িতে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রয়োজনে নির্মাণ হতে যাওয়া জেটিতে বন্দরের এই সুবিধা পেতে যাচ্ছে দেশ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মহেশখালীর মাতার বাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ব্যবহারের জন্য নির্মিতব্য মিনি বন্দরের অদলে তৈরি জেটি উপকূল থেকে সাগরের দুই কিলোমিটার দূর থেকে ৫৪ ফুট (১৮মিটার) গভীর ও প্রাথমিকভাবে ৩০০ ফুট চওড়া হলেও পরবর্তীতে ৭৫০ ফুট চওড়া চ্যানেলের মাধ্যমে সহজেই জাহাজ একেবারে চরের ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে।

বর্তমানে মহেশখালী দ্বীপের উপদ্বীপ মাতারবাড়ির সাইরা ডেইল গ্রামের উত্তর দিকের বিশাল চরে ১৮ মিটার ড্রাফ্‌েটর চ্যানেল তৈরি করতে ড্রেজিংয়ের কাজ করছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ৫টি ড্রেজারের একটি ক্যাসিওপিয়া ভি। কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পটি হবে মাতারবাড়ি দ্বীপের দক্ষিণ পাশে । আর উত্তর পাশের বিশালাকার চরের জায়গায় হবে প্রস্তাবিত এ জেটি বা মিনি বন্দর। এব্যাপারে কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (সিপিজিপিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিচালক আবুল কাসেম বলেন, আমাদের ব্যবহারের পর বাকি জায়গা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ টার্মিনালের কাজে ব্যবহার করতে পারবে। এতে দেশ গভীর সমুদ্রবন্দরের সুবিধা পাবে। কারণ এই জেটিতে প্যানামেক্স (৮০ হাজার টনের বেশি ওজন ও ২২০ মিটার দৈর্ঘ্যের বেশি এবং ১২ মিটার ড্রাফটের বেশি জাহাজ) সাইজের ভিড়তে পারবে। এতে দেশের আমদানিরপ্তানি সুবিধা বাড়বে। এছাড়া এই প্রকল্পের আওতায় কিছু রোড নেটওয়ার্কও করা হবে যাতে কন্টেইনার পরিবহন সুবিধাও গড়ে উঠবে। গভীর সমুদ্রবন্দর হিসেবে তা ব্যবহার করতে পারার বিষয়ে কোনো আপত্তি চট্টগ্রাম বন্দরের রয়েছে কিনা জানতে চাইলে আবুল কাসেম বলেন, কোনো আপত্তি নেই। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাথে একটি সমঝোতা চুক্তিও হয়েছে। তাই চাইলেই বন্দর কর্তৃপক্ষ তা ব্যবহার করতে পারবে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের ড্রেজিংয়ের কার্যক্রম দেখার জন্য সম্প্রতি বন্দর কর্তৃপক্ষের দুজন কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। বিদেশ থেকে কোনো জাহাজ এলে কোনো না কোনো বন্দরের আওতায় আসতে হয়। সেই হিসেবে মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৮০ হাজার টনের বাল্ক জাহাজগুলোকে চট্টগ্রাম বন্দরের নামে দেশে প্রবেশ করতে হবে এবং ভিড়তে হবে মাতারবাড়িতে। এ জন্য জেটির নিয়ন্ত্রণ থাকবে চট্টগ্রাম বন্দরের আওতাধীন। আর কয়লা উঠানো ও নামানোর পর ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জেটিতে কনটেইনারবাহী জাহাজও বন্দর কর্তৃপক্ষ চাইলে ভেড়াতে পারবে। আর সেখান থেকে মালামাল লাইটার জাহাজে করে বা সড়কপথে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা যাবে।

উল্লেখ্য, প্রায় ৩৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পে প্রস্তাবিত জেটিসহ প্রকল্পে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) দিচ্ছে ২৯ হাজার কোটি টাকা ও বাংলাদেশ সরকার দিচ্ছে ৭ হাজার কোটি টাকা।

 

পাঠকের মতামত: