নিজস্ব প্রতিনিধি, বান্দরবান ::
বান্দরবার জেলার লামা, বান্দরবান সদর, আলীকদম, রোয়াংছড়ি, রুমা এবং থানচি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত মাতামুহুরী ও সাংগু নদীর তীরে তীরে এবং চরে চরে রবিশস্যের আবাদ ক্রমেই বাড়ছে। এক সময় এসব নদীর তীর ও চর এলাকায় তামাকের আবাদ করা হত বেশি।
চাষীরা সর্বনাশী তামাকচাষ কমিয়ে এনে সেইসব জমিতে চাষ করছে রবিশস্যসহ অর্থকরি ফসলের।
জেলার আলীকদম উপজেলার দুর্গম ও নদীপথবেষ্টিত নবগঠিত কুরুকপাতা ইউনিয়নে কৃষিজ আবাদের ক্ষেত্রে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। করুকপাতা এলাকায় মাতামুহুরী নদীর চরে চরে তিকর তামাকের পরিবর্তে রবিশস্য এবং পাহাড়ের ঢালুতে কাঁচামরিচ, আদা, হলুদ, তুলা, রকমারী কচু, ঝাড়শিম, ঢেড়শ, বেগুন, ভুট্টা ও কুমড়ার চাষ হয়েছে চলতি মৌসুমে। কেবল কুরুকপাতা ইউনিয়নের নানাস্থানে উৎপাদিত কৃষিপণ্য বিক্রি করে বছরে আয় করে চাষীরা কমপক্ষে ২কোটি টাকা। এ উপজেলার বাবুপাড়া পয়েন্ট থেকে মাতামুহুরী নদীর দুই তীরজুড়েই মূলত সংরক্ষিত বনাঞ্চল এবং চরও নদীর তীরে তীরে রবিশস্য উৎপাদন উপযোগী জমি। আলীকদম উপজেলা সদর থেকে মাতামুহুরী নদীপথে উজানে যত যাওয়া হয় ততই দেখা যায় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং নদীর চরে চরে অর্থকরি কৃষিপণ্যের আবাদ। এ নদীর দুইতীরে শত শত একর সংরক্ষিত বানঞ্চলে জমিতে রবিশস্যের চাষ হয়েছে। এবার নদীর দুইতীর ও চরে চরে বাদাম চাষ বেশি লক্ষ্য করা গেছে। লামা ও আলীকদম উপজেলায় প্রবাহিত মাতামুহুরী নদীর দুইতীরেই পাহাড়ের সুউচ্চ সারি। পাহাড়জুড়ে ক্রেকবেত ও নলিবাঁশের সারি। দেখা মেলে কিছুটা নানাপ্রজাতির গাছেরও।
এ প্রাকৃতিক বনের ভেতরে রয়েছে ম্রো, ত্রিপুরা, মার্মা, তঞ্চঙ্গ্যাসহ বাঙ্গালি জনগোষ্ঠীর বসবাস।
জেলার রুমা, বান্দরবান সদর,রোয়াংছড়ি, থানচি এবং লামা উপজেলার নানাস্থানে সাংগু নদীর চরে চরে এবারও বিপুল পরিমাণ জমিতে বাদামের আবাদ হয়েছে। বাদাম ছাড়াও রকমারী অর্থকরি ফসলের আবাদ হওয়ায় তামাকচাষ ক্রমেই লুপ্ত হচ্ছে। চাষীরা উপলব্দি করছে পেরেছেন সর্বনাশী তামাকের পরিবর্তে অর্থকরি ফসল আবাদ করে আর্থিকভাবেও অধিকতর লাভবান হওয়া যায়। রোয়াংছড়ি উপজেলার বেতছড়া ও তারাছামুখ এলাকার চাষীরা বলেন, তারা চলতি মৌসুম থেকে তামাকচাষ কমিয়ে এনে জমিতে বাদামসহ অর্থকরি ফসলের আবাদ বাড়িয়েছে। প্রতিবছরই তামাকের পরিবর্তে রবিশস্যের আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে চাষীরা সংঘবদ্ধ হচ্ছেন বলেও তারা জানিয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক মো.আলতাফ হোসেন জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে প্রায় ১০হাজার হেক্টর জমিতে রবিশস্যের আবাদ বেড়েছে। ইতিমধ্যেই উৎপাদিত রবিশস্য ফসল চাষীরা স্থানীয় হাটবাজারে বিক্রি করতে শুরু করেছে। চাষীরা আর্থিকভাবেও বেশি লাভবান হচ্ছেন বাদামসহ রবিশস্যের আবাদ করে। জেলার মাটিও রবিশস্যের আবাদ ও উৎপাদনে বেশি উপযোগী।
পাঠকের মতামত: