মিজবাউল হক, চকরিয়া :
খননের অভাবে নাব্যতা হারাচ্ছে কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরী নদী। অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে শাখা নদীগুলোও। এককালের গহীন খরশ্রোতা মাতামুহুরী নদী এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে। নদীর বিশাল এলাকাজুড়ে অসংখ্য ছোট-ছোট ডুবো চর জেগে উঠেছে। বর্ষা শেষ হওয়ার কয়েক মাস যেতে না যেতেই এ নদীর বুকে নৌ চলাচল, কাঠ ও বাঁশ পরিবহনে দুর্ভোগের অন্ত নেই।
এক সময়ের প্রমত্তা মাতামুহুরীতে পানির প্রবাহ কমে যাওয়া মৎস্য ভান্ডারেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব। ফলে জেলে পরিবারে নেমে এসেছে চরম হতাশা। মাতামুহুরী নদীর নাব্যতা পুনরুদ্ধারে নদী ড্রেজিং করা, সময়ের দাবীতে পরিণত হয়েছে। এতে নদীতে নৌযান চলাচলে চরম বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে।
জানা গেছে, পাহাড়ে গত দেড় দশক ধরে অবাধে বৃক্ষ নিধন, বাঁশ কর্তন, পাহাড়ি জুম চাষ, পাহারে মাটি ক্ষয় হয়ে নদীতে পড়ছে। ফলে নদীর তলদেশ ক্রমশ ভরাট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া পাহাড়ে ব্যাপক বৃক্ষ নিধন ও বারুদের বিস্পোরণ ঘটিয়ে পাথর আহরণের কারণে প্রতিবছর নদীতে পলি জমে এ অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে প্রতিবছরই বর্ষাকালে নদীতে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর দুই তীরে নতুন নতুন এলাকায় ব্যাপক ভাঙ্গনের সৃষ্টি হচ্ছে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা দাবি করেছেন, নদী ভাঙ্গনের ভয়াবহতা ঠেকাতে হলে প্রয়োজন নদী শাসন। চিরিঙ্গা ব্রীজ পয়েন্ট থেকে শুরু করে উজানে মানিকপুর ও নিচে পালাকাটা রাবার ড্যাম পর্যন্ত এলাকায় নতুন করে ড্রেজিং করতে হবে। তা না হলে আগামীতে নদী ভাঙ্গন আরো ভয়াবহ রূপধারণ করবে, একইসাথে পলি জমে আবাদি জমি সংকুচিত হবে। এতে করে নদীর তীর এলাকায় চাষের জমি হারাবে স্থানীয় জমি মালিক ও কৃষকরা।
স্থানীয় জমি মালিক ও কৃষকদের দাবি, নদীর তীর এলাকার ভরাট বালু অপসারণের মাধ্যমে নদীটি ড্রেজিয়ের জন্য কৃষকরা প্রশাসনের কাছে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তবে জমি মালিক ও কৃষকদের দাবি, প্রশাসন নির্দেশ দিলে তাঁরা নিজেদের জমি থেকে জমে থাকা এসব বালু অপসারণ করে ফের আগের মতো জমিতে চাষাবাদ শুরু করতে পারবে। প্রতিবছর চাষের পরিধি বাড়বে।
ইতোমধ্যে মাতামুহুরী নদীর চিরিঙ্গা ব্রীজ এলাকায় ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি থেকে জমি মালিকরা নিজেদের উদ্যোগে জেগে উঠা জমি থেকে বালু অপসারণ করে আগের মতো জমিতে ফেরানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, জানা গেছে, মাতামুহুরী নদীর উজান থেকে নেমে আসা মিঠাপানি আটকিয়ে চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলার হাজার হাজার কৃষক প্রতিবছর সেচ সুবিধা নিয়ে চাষাবাদ করে আসছেন। এখানকার কৃষিপন্য স্থানীয় ভোক্তার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানী করা হচ্ছে। চাষীরা মাতামুহুরী নদীর সুফল নিয়ে প্রতিবছর চাষাবাদের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপুর্ন অবদান রেখে চলছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, পলি জমে ভরাট হয়ে পড়া আবাদি জমিতে ফের চাষাবাদ নিশ্চিত করতে ও ভাঙন রোধে ইতোমধ্যে একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রকল্পের প্রাথমিক পর্যায়ে নাব্যতা সংকট কাটাতে দুই কোটি টাকা ব্যয় আগামী শুস্ক মৌসুমে নদীর তিন কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজিং করা হবে। এরপর বাস্তবায়ন হবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের বিপরীতে মেগা প্রকল্প। প্রকল্পের আওতায় নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে জেগে উঠা ভরাট চরের সম্ভাব্যতা চিহিৃত করতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা সমীক্ষা করেছেন। ##
পাঠকের মতামত: