ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪

মাতামুহুরী তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রপার কাকারায় বিলিন হওয়া বাঁধ মেরামত না করায় আতংকিত জনগন

Chotan-Chakaria-Pic.WAL-01.03.16নিজস্ব প্রতিবেদক. চকরিয়া ::

ইতিমধ্যে আটমাস পেরিয়ে গেছে গতবছরের একাধিক ভয়াবহ বন্যায় বিধ্বস্ত হওয়া মাতামুহুরী নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের প্রপার কাকারার অংশ। সিমেন্ট কংক্রিট (সিসি) ব্লকসহ বাঁধটি ধসে পড়ায় সড়ক যোগাযোগও ছিল বিচ্ছিন্ন। এরই মধ্যে উপজেলা প্রশাসন ও এলজিইডির দ্রুত তৎপরতায় সড়ক যোগাযোগ চালু হয়েছে। এখন প্রধান সড়কে কার্পেটিংয়ের কাজ চলছে। কিন্তু জরুরীভিত্তিতে বাঁধ মেরামতের কাজ আট মাসেও শুরু হয়নি। এতে সর্বসাধারণের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চারও পরিলক্ষিত হচ্ছে।
জরুরী মেরামতের জন্য সিসি (সিমেন্ট-কংক্রিট) ব্লকের বদলে সিমেন্ট-বালি মিশ্রিত বস্তা দিয়ে কাজের জন্য আগেই দরপত্র চাওয়া হয়েছে। কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে কাজ শুরু করতে পারেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। বর্ষা শুরুর আগমুহূর্তে এসে তড়িঘড়ি কাজ করলে সেটি টেকসই হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে এলাকাবাসীর।
এ প্রসঙ্গে কক্সবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সবিবুর রহমান দৈনিক চকরিয়া নিউজকে বলেন, ‘ঠিকাদার নিয়োগ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী রবিবার (আজ) ওয়ার্ক অর্ডার জমা দিলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করতে পারবে।’
এতো দেরিতে কাজ শুরুর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সিসি ব্লক দিলে কাজ করতে বেশি সময় লাগতো। এখন তো আর এত সময় লাগবে না। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হবে।’
জানা গেছে, ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পানিসম্পদ মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক মাতামুহুরী নদীর গতিপথ পরিবর্তন ঠেকিয়ে ভাঙন থেকে রোধ করতে কাকারা মিনিবাজার স্থান থেকে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। ২০০২ সাল পর্যন্ত মিনিবাজার থেকে প্রপার কাকারায় প্রায় এক কিলোমিটার দীর্ঘ সিসি ব্ল­ক বসিয়ে বাঁধ নির্মাণে খরচ হয় ১২ কোটি টাকা। বাঁধটি পর্যায়ক্রমে চিরিঙ্গা মাতামুহুরী সেতু পর্যন্ত সম্প্রসারণের কথা ছিল। কিন্তু এরপর বাঁধ নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ছোট অর্থ বরাদ্দ দিয়ে ব্লকের ওপর দেয়াল নির্মাণ করে মাতামুহুরীর হিংস্র রূপ থেকে বাঁচার চেষ্টা চলে।
কাকারা ইউপি সদস্য মেহেদী হাসান নুরখান বলেন, ‘ছোট বরাদ্দ দিয়ে আমরা গাইডওয়াল নির্মাণ প্রায় গুছিয়ে এনেছিলাম। কিন্তু কাজ কিছুটা বাকি থাকায় সেই অংশ বিগত বন্যায় তলিয়ে যায়। এতে ৭০ ফুট দীর্ঘ ভাঙন সৃষ্টি হয়। পরিষদের পক্ষে এত বড় বরাদ্দ দেওয়ার সামর্থ্য নেই।’
স্থানীয়রা জানান, গত ১৩ বছরে একাধিকবার ভয়াবহ বন্যায় বাঁধের একাধিক স্থানে ব্যাপক ভাঙন হলেও নির্বিকার ছিল পানি উন্নয়ন বোর্ড। উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি রাজনীতিবিদ ও জনপ্রতিনিধিদের। এ অবস্থায় ২০১৫ সালের প্রলয়ংকরী চার দফা বন্যায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর দৈনিক চকরিয়া নিউজসহ একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এর পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারাসহ সংশ্লিষ্টরা এসে স্থানটি পরিদর্শন করে জরুরী ভিত্তিতে মেরামতের আশ্বাস দেন। তখন এলাকাবাসী বস্তার বদলে সিসি ব্ল­ক দেওয়ার দাবি জানালেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেছিলেন সিসি ব্লক দিলে বড় বাজেট এবং দীর্ঘসময় লাগবে। আর দ্রুত মেরামতের জন্য এর বিকল্প নেই। কিন্তু সেই দ্রুত মেরামত কাজ গত আট মাসেও শুরু হয়নি।
এ বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাজের ধরনই হচ্ছে বর্ষা শুরুর সময় ব্লক তৈরি করে পানিতে ঢেলে দেওয়া। বন্যার সময় নদীতে পানির উচ্চতা বেশি থাকায় ব্ল­ক-বস্তা কম ফেলতে হয়। আর পানির তোড়ে সেগুলো নদীতে ভেসে যায়। ফলে সেগুলো দেখার কেউ থাকে না। সুযোগটি এই কাজের ক্ষেত্রেও নেওয়ার যথেষ্ট আশঙ্কা রয়েছে।’
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধ মেরামতের আশ্বাস পেয়ে কাকারা ইউনিয়নের চলাচলের প্রধান সড়কটি দুই ধাপে ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে কার্পেটিং করার কাজ চলছে। কিন্তু এতদিনে কাজ শুরু করতে না পারায় ক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী। জানা গেছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড কক্সবাজার জেলায় ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে পরবর্তী তিনবছরে ২৫৯ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে। এতে ৬০ কিলোমিটার তীররক্ষা বাঁধ মেরামত, ১৬ কিলোমিটার প্রতিরোধ বাঁধ নির্মাণ করা হবে। সেই প্রকল্পে মাতামুহুরীর প্রপার কাকারার এই অংশ যুক্ত করার দাবি এলাকাবাসীর।

পাঠকের মতামত: