ঢাকা,মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ার মাতামহুরী নদী ও ছড়া খাল থেকে বালু উত্তোলন ও পাচার অব্যাহত, হুমকিতে জনবসতি

ফারজানা পারভিন, নিজস্ব প্রতিবেদক ::

চকরিয়া উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহমান মাতামহুরী নদী ও উজেলার বিভিন্ন ছড়া খালে শেলো মেশিন বসিয়ে বালি উত্তোলন ও পাচার করে যাচ্ছে এক শ্রেণীর বালু চোর সিন্ডিকেট। এসব অসাধু বালু ব্যবসায়ীরা সরকার দলীয় নেতাদের নাম ভাঙ্গিয়ে ও প্রশাসনের জারি করা নির্দেশ অমান্য করে বালু উত্তোন এবং পাচার অব্যাহত রেখেছে। এতে নদী ও ছড়া খালের তীর ভেঙ্গে ফসলি জমি, ঘরবাড়ি, শিক্ষা ধর্মীয় প্রতিষ্টান, সড়ক, ব্রীজ, কালবার্ট, সহ সরকারী বেসরকারী নানা স্থাপনা ও মানুষের সহায় সম্পদ নদী গর্ভে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।

ফলে চরম ভাবে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে। অন্যদিকে বর্ষা মওসূমে নদী এবং ছড়া দিয়ে প্রবাহিত বন্যায় ব্যাপক জানমালের ক্ষতির শিকার হচ্ছেন এলাকাবাসী। আর চোরাই ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এ অবস্থার প্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নবাগত ইউএনও’র নির্দেশে পুরো চকরিয়ায় মাইকিং করে বালু উত্তোলন ও পাচার বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হলে মাত্র কয়েকদিন বালু উত্তোলন বন্ধ ছিল। কিন্তু অল্প কয়েকদিন যেতে না যেতে সে নির্দেশ অমান্যকরে আবারো বালু চোর সিন্ডিকেট আরো বেপরোয়া হয়ে প্রতিযোগিতা দিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। ফলে ইউএনও’র নির্দেশ উপেক্ষিত রয়ে গেল।

সরজমিনে দেখাগেছে উপজেলার উত্তর হারবাং ভিলেজার পাড়া এলাকায় বড় বড় সেলু মেশিন বসিয়ে হারবাং ছড়া ও কাট্টলির ছড়া থেকে দিন রাত বালু উত্তোলন করছে ভান্ডারির ডেবা এলাকার মোক্তার আহমদের ছেলে যুবদল নেতা আবদুল খালেক পুতু। খালের পারে বিশাল বালুর স্তুপ করে রেখে পরে সেখান থেকে ট্রাকে করে পাচার করছে চট্টগ্রামে। প্রতি গাড়ি বালু দুই থেকে তিন হাজার টাকা করে বিক্রি করার কথা জানান সে। এ জন্য স্থানীয় মোহাম্মদ আলীকে গুদি বাবৎ দিতে হয় গাড়ি প্রতি আটশত টাকা। ফলে সেখানে কোরবানিয়া ঘোনায় মানুষের যাতায়াতে সরকারী অর্থে অনেক টাকায় সদ্য নির্মিত ব্রীজটি হুমকির মূখে পড়েছে।

একই ভাবে হারবাং ছড়ার লালব্রীজ এলাকা সহ বিভিন্ন পয়েন্টে ও বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। অপরদিকে মাতামহুরী নদীর মাতামহুরীব্রীজ, ঘুনিয়া, দিগরপান খালী, বাটাখালী, করাইয়াঘোনা, শাহারবিল, মাইজঘোনা, রামপুর, চোয়ারফাঁড়ি, নাপিতার তোড়া, তরছঘাট, বেতুয়াবাজার, পহরচাদাঁ মোস্তাকমিয়ার কুম, গোবিন্দপুর ও বাগগুজারা এলাকায় সেলো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন ও পাচার অব্যাহত রেখেছে বালু চোর সিন্ডিকেট চক্র।

এদিকে সরজমিনে দিগরপানখালী এলাকায় গিয়ে দেখা যায় মাতামহুরী নদীর ১ নং গাইড বাধঁ এলাকায় সেলো মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন করছে এলাকার প্রভাবশালী আরিফ উল্লাহ, আজিজ, নির্মল, সমিরণ,আবু শামা গং। তারা প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করে নদী থেকে প্রতিনিয়ত বালু উত্তোলন করে চলছে। এতে হুমকির মূখে পড়েছে পাউবোর ১ নং শহর রক্ষা বাধঁটি। বালু উত্তোলনের ফলে ওই এলাকার ৩০ টির মত বাড়ি ঘর ইতোমধ্যে নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে।

স্থানীয়রা জানান উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর কে একাধিক বার অভিযোগ দেয়ার পর ও বালু উত্তোলন বন্ধ হচ্ছেনা। অপরদিকে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নব নির্মিত বাটাখালী ব্রীজের ও একই অবস্থা। অব্যাহত বালু উত্তোলনের ফলে ব্রীজটি যে কোন মুহুর্তে ধসে যেতে পারে। তাছাড়া প্রশাসনের নির্দেশ না মেনে ফঁসিয়াখালীর কুমারী, ডুলাহাজারা, পাগলরিবিল এবং খুঠাখালীর ছড়া থেকেও বালু উত্তোলন অব্যাহত রেখেছে বালু চোর সিন্ডিকেটরা।

এভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত থাকায় পাগলির বিল ও বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের অস্থিত্ব বিলিন হতে চলেছে। এতে পার্কের জীববৈচিত্র হুমকির মূখে পড়েছে বলে পরিবেশ সচেতন মহলের অভিমত। এ দিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার ভুমির নেতৃত্বে বেশ কয়েক জায়গায় অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। এতে কয়দিন অবৈধভাবে বালু ন উত্তোলণ বন্ধ থাকলেও বর্তমানে প্রশাসনের অর্থপূর্ণ উদারতায় বালু উত্তোলন ও পাহাড় কাটার উৎসব চলছে।

লামার চিরিঙ্গা বায়তুশ শরফ সড়কের বাসিন্দা জসিম উদ্দিন কিশোর জানান, মাতামুহুরী নদীর লামার চিরিঙ্গা এলাকা থেকে প্রতিদিন শতশত ট্রাক বালু উত্তোলন ও পরিবহনের কারণে স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষার্থীরা নিরাপদে চলাফেরা ও করতে পাচ্ছে না। তিনি আরো জানান, মাতামুহুরী নদীর ব্রীজ সংলগ্ন দুটি স্থানসহ ঘুনিয়া বেড়িবাধের আশপাশের এলাকা থেকে বিনাবাধায় বালু উত্তোলণ চলছে।

চকরিয়া পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুক্তিযুদ্ধা ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্লাহ জানান, হালকাকারা মসজিদ সড়ক ও সওদাগর পাড়া সড়ক দিয়ে মাতামুহুরী নদী থেকে আনা বালু ও পাহাড় কাটা মাটি ভর্তি ট্রাক চলাচলের কারণে গ্রামীণ সড়ক গুলো ভেঙ্গে গিয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এছাড়াও কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের ফাসিয়াখালী রেঞ্জের নলবিলা বনবিটের পূর্বপাশের পাহাড় কাকারা,মানিকপুর,ডলাহাজারা রিংভং এর পাহাড় কেটে প্রতিদিন শতশত ট্রাক মাটি বিভিন্ন এলাকায় পাচার করছে। পরিবেশ বাদিদের অভিমত, এভাবে বালু উত্তোলণ ও পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলে নদী ভাঙ্গন ও পাহাড় ধ্বস মারাত্বক আকার ধারণ করতে পারে।

এ ব্যাপারে চকরিয়া উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা নুরুদ্দিন মোহাম্মদ শিবলী নোমান জানান নদী ও খাল থেকে বালু উত্তোলনে কঠোর নিষেদাঞ্জা জারি ও মাইকিং কার হয়েছে। কেউ আদেশ অমান্য করলে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশরাফ জানান পাহাড় কাটা অবৈধ পন্থায় বালু উত্তোলন সহ পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কাজে জড়িতদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে প্রয়োজনে মামলা দায়ের করা হবে।

পাঠকের মতামত: