ঢাকা,মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০২৪

মহেশখালীতে ইউপি নির্বাচনে হেভিয়েট প্রার্থীদের নিয়ে দ্বন্দ

up elছালাম কাকলী

মহেশখালী উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের দলীয় প্রার্থী হতে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। তারা এখন মাঠ পর্যায়ে ভোটারদের সাথে আলাপ না করে এখন প্রতীক বরাদ্ধ পেতে স্ব স্ব দলীয় উর্ধ্বতন নেতাদের সাথে লবিং করতে এখন ঢাকা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অবস্থান করছে। সাফ কথা এসব সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক পাচ্ছে কিনা তা নিয়ে টেনশনে রয়েছে। দলের মধ্যে দ্বন্দ থাকার কারণে আওয়ামীলীগ ও বিএনপি প্রতীক থেকে এবার বাদ পড়ার আশংকা করেছে দলের জন্য ত্যাগী বহু নেতা।

 ছোট মহেশখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদে বিএনপি থেকে ধানের শীষের টিকেট নিতে বর্তমান চেয়ারম্যান মোস্তফা, মঈনুল ইসলামসহ কয়েকজন ব্যক্তি। বর্তমানে মোস্তফা উক্ত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান। উক্ত চেয়ারম্যান আগামী ২২ মার্চ অনুষ্ঠিত্য নির্বাচনে বিজয় হবার সম্ভাবনা থাকলেও একটি পক্ষ তাকে বিএনপি থেকে ধানের শীষে প্রার্থী দিতে নারাজ। অপরদিকে উক্ত ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ থেকে সাবেক চেয়ারম্যান আব্দু সামাদ, শাহাদাৎ হোছাইন, ফরিদুল আলম, সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মোহাম্মদ আলীর পুত্র খোকনসহ অনেকের নাম শুনা যাচ্ছে। তবে এদের মধ্যে শাহাদাৎ হোছাইন উচ্চ শিক্ষিত ব্যক্তি। তিনি বর্তমানে চাকুরীর সুবাদে ঢাকায় অবস্থান করলেও মাঝেমধ্যে মহেশখালীতে এসে দলীয় কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত থেকে দলের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। এ ইউনিয়ন থেকে শাহাদাৎ হোছাইনকে নৌকা প্রতীক দিয়ে প্রার্থী ঘোষণা করলে বিজয়ী হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

 কুতুবজোম ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ থেকে সাবেক চেয়ারম্যান ও জাতীয় পার্টির জেলার নেতা হোটেল সী-কুইন এর স্বত্ত্বাধীকারী আলহাজ্ব কবির আহমদের পুত্র মোশাররফ হোসেন খোকন কে দল থেকে একক ভাবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বলে আগাম ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে এ ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান শফিউল আলম বিএনপি নেতা। গেল নির্বাচনে হাড্ডা-হাড্ডি লড়াইয়ে আওয়ামীলীগের ঘোষিত প্রার্থী খোকনের পিতা আলহাজ্ব কবির আহমদকে পরাজিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ ইউনিয়নে প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও আওয়ামীলীগ নেতা নুরুল আমিন একজন এলাকার পরিচিত মুখ। এলাকার সর্বত্রে তাঁর সুনাম রয়েছে। বর্তমান চেয়রম্যান মাওলানা শফিউল আলম এর সাথে নির্বাচন করতে হলে আওয়ামীলীগ থেকে সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন কে প্রার্থী না দিলে এ ইউনিয়নের বিজয়ের মালা আবারও বিএনপির ঘরে যাবে।

 বড় মহেশখালী ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শরীফ বাদশা একজন আওয়ামীলীগ নেতা। এ ইউনিয়ন থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান হবার জন্য মাঠে লড়ছেন বর্তমান চেয়রম্যান শরীফ বাদশা, ব্যাংকার জাকারিয়া, নুরুল আজম সহ কয়েকজন। অপরদিকে বিএনপি থেকে ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করার জন্য মাঠে ময়দানে চষে বেড়াচ্ছেন বর্তমান সংসদ আশেক উল্লাহ রফিকের চাচাত ভাই ও সাবেক সংসদ আলহাজ্ব আলমগীর ফরিদের ভাইপো আলহাজ্ব এনায়েত উল্লাহ বাবুল, মহেশখালী উপজেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি আকতার কামাল চৌধুরী, উক্ত ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলহাজ্ব নুরুল আলম। কিন্তু গেল ইউপি নির্বাচনে সামান্য ভোটে আলহাজ্ব এনায়েত উল্লাহ বাবুল শরীফ বাদশার কাছে পরাজিত হয়। এতে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয় শরীফ বাদশা। কিন্তু আলহাজ্ব এনায়েত উল্লাহ বাবুল এবার ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে উক্ত ইউনিয়নের প্রার্থী হলে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এ ইউনিয়নটি বিএনপির ঘাটি নামে পরিচিত একটি নাম। বিএনপির দুর্গ হিসেবে এ ইউনিয়ন থেকে বার বার ধানের শীষ বিপুল ভোটে বিজয় হয়ে আসছে। কিন্তু আওয়ামীলীগ থেকে শরীফ বাদশাকে প্রার্থী দিলে তার সাথে একমাত্র প্রতিদ্বন্দিতা করতে পারবেন আলহাজ্ব এনায়েত উল্লাহ বাবুল। তবে বিএনপি থেকে দলীয় কোন্দলের কারণে আলহাজ্ব এনায়েত উল্লাহ বাবুল কে প্রার্থী না দিলে এ ইউনিয়নের বিজয় মালা নিশ্চিত চলে যাবে আওয়ামীলীগের ঘরে।

 হোয়ানক ইউনিয়নের বিএনপির প্রার্থী হিসেবে আশা নিয়ে মাঠে বেড়াচ্ছেন বিএনপি নেতা ও সাবেক চেয়ারম্যান আবু তাহের সিকদার, আব্দু রহমান, আব্দুল খালেক ও বর্তমান চেয়ারম্যান এনামসহ অনেকে। অপরদিকে আওয়ামীলীগ থেকে এককভাবে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে সাবেক সংসদ ইছহাক মিয়ার পুত্র গোলাম মোস্তফাকে। আওয়ামীলীগের ঘোষিত প্রার্থী গোলাম মোস্তফার সাথে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়াই করে বিজয় লাভ করতে হলে সাবেক চেয়ারম্যান আবু তাহের সিকদার ছাড়া চিন্তা করার কোন বিকল্প নেই। তবে উপজেলা বিএনপির দায়িত্বরত নেতারা একটি অসমর্থিত সূত্রে জানিয়েছেন, বর্তমান চেয়ারম্যান এনাম কে দল থেকে একক প্রার্থী ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথে হোয়ানক বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। এমনকি সাবেক সংসদ আলহাজ্ব আলমগীর ফরিদ উক্ত ঘোষণা কোন অবস্থাতেই মানতে রাজি নন। তিনি উক্ত ইউনিয়ন থেকে সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আবু তাহের সিকদারকে প্রার্থী দেয়ার জন্য জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট নীতি নির্ধারকদের কাছে।

 কালারমারছড়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য জেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের কাছে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছে সম্ভাব্য প্রার্থীরা। তারা হচ্ছেন আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক চেয়ারম্যান ঘাতকদের হাতে নিহত উচমান গণির পুত্র তারেক শরীফ, সেলিম চৌধুরী ও মোহাম্মদ শরীফ মাতব্বর। উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ থাকার কারণে এক পক্ষ সেলিম চৌধুরী কে প্রার্থী দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অপর পক্ষ তারেক শরীফ কে প্রার্থী দেওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপি থেকে শুনা যাচ্ছে উপজেলা বিএনপি নেতা আলহাজ্ব এখলাছুর রহমান ও বর্তমান চেয়ারম্যান মীর কাশেম চৌধুরী সহ কয়েক জনের নাম। তবে মীর কাশেম চৌধুরী বিএনপি সমর্থিত হলেও বিএনপির সংগঠনের সাথে জড়িত না থাকায় মীর কাশেম চৌধুরীকে দল থেকে প্রার্থী না দেওয়ার জন্য চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলেও উপজেলার এক নেতা তার পক্ষে এখনো অনড়। বিএনপির দুর্দিনে আলহাজ্ব এখলাছুর রহমান দলীয় নেতাকর্মীদের কাছে থেকে দলকে সুসংগঠিত করায় বিভিন্ন সহযোগিতায় এগিয়ে থাকার কারণে সবকিছু চিন্তাভাবনা করে তাকে ধানের শীষ প্রতীক দেয়ার জন্য নীতি নির্ধারক মহল চুড়ান্ত করে ফেলেছে। উক্ত ইউনিয়নের বিএনপির এ প্রার্থীর সাথে লড়াই করে নৌকা প্রতীক বিজয় লাভ করতে হলে তারেক শরীফের বিকল্প নেই। তারেক শরীফ ছাড়া অন্য কাউকে প্রার্থী দিলে বিজয় মালা বিএনপি প্রার্থী এখলাছুর রহমানের ঘরে চলে যাবে।

 ধলঘাটা ইউনিয়ন থেকে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হওয়ার জন্য এখন কোমর বেঁধে নীতি নির্ধারক মহলদের কাছে তদবির চালিয়ে যাচ্ছে বর্তমান চেয়ারম্যান আহছান উল্লাহ বাচ্চু, সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম মোক্তার আহমদ চৌধুরীর পুত্র কামরুল ইসলাম, বখতিয়ার আলম সহ অনেকে। তবে এ ইউনিয়ন থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান আহছান উল্লাহ বাচ্চু কে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দিলে বিএনপির হেভিয়েট প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা মকবুল আহমদ নির্বাচন করবে না। কারণ উভয় পরিবার সামাজিক, পারিপার্শ্বিক, আত্বীয় বন্ধন ও ব্যবসা একই সুত্রে গাঁথা। আওয়মীলীগ থেকে অন্য কাউকে মনোনয়ন দিলে বিএনপির এ সাবেক চেয়ারম্যান মাওলানা মকবুল আহমদ নির্বাচন করতে মাঠে নামবেন। এতে তিনি বিজয় হবার সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে আহছান উল্লাহ বাচ্চুকে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন দিলে বিএনপি দল থেকে তবুও প্রতিদ্বন্দিতা করার জন্য সিরাজ মেম্বার ও সরোয়ার নির্বাচন করার জন্য লবিং চালাচ্ছে। অন্য দিকে নুরুল আলম নামে এক ব্যক্তি স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার জন্য মাঠে ময়দানে এখন চষে বেড়াচ্ছে। সাফ কথা এ ইউনিয়ন থেকে আওয়ামীলীগ প্রার্থী আহছান উল্লাহ বাচ্চু হলে বিজয় মালা নিশ্চিত আওয়ামীলীগের ঘরে যাবে।

 মাতারবাড়ীতে আওয়ামীলীগ থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য এখন দলীয় হাই কমান্ডের কাছে কোমর বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এড. আব্দু রউফ, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ছমি উদ্দিন, ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহ, মহেশখালী উপজেলার তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক মাষ্টার রুহুল আমিন ও বর্তমান চেয়ারম্যান এনামূল হক রুহুল এবং বশির মেম্বার। মাঠে ময়দানে মাষ্টার মোহাম্মদ উল্লাহর নাম ভোটারদের মুখে মুখে থাকলেও দলীয় কোন্দলের কারণে তাকে প্রার্থী না দেয়ার জন্য জেলা পর্যায়ের নেতারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে মাতারবাড়ী ইউনিয়নের মাঠ পর্যায়ের নেতারা তার পক্ষে এখনও মনোনয়ন পেতে লবিং চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ তাকে দলীয় প্রতীক নৌকা বরাদ্ধ দিলে বিজয় হবার সম্ভাবনা যথেষ্ট বিদ্যমান বলে ভোটারদের মুখে মুখে। অন্য দিকে বিএনপি থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে একক প্রার্থী হচ্ছে বিএনপি সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম এম.কম। আওয়ামীলীগ থেকে বর্তমান চেয়ারম্যান এনামূল হক রুহুল কে প্রার্থী ঘোষণা দেয়ার ইঙ্গিত আসার সাথে সাথে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচন করার জন্য আওয়ামী লীগের কয়েক জন মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছে। এ অবস্থা হলে মাতারবাড়ী ইউনিয়নের নির্বাচনী বিজয়মালা বিএনপির ঘরে চলে যাবে বলে ভোটারদের ধারণা

পাঠকের মতামত: