ঢাকা,বুধবার, ৯ অক্টোবর ২০২৪

ভোট বিক্রির হাট! পরাজিত প্রার্থীরা টাকা উদ্ধারে তৎপর

mr mah

:::: এম.আর মাহমুদ ::::

২০১৬ সালের বিদায়ী জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে বেশিরভাগ সদস্য প্রার্থী প্রাপ্ত ভোট ও ভোটারদের মাঝে বিতরণকৃত টাকার হিসাব মিলাতে পারছে না। এবারের পরোক্ষ ভোটে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সদস্য পদে কয়েকজন প্রার্থী সামান্য ভোটে হারলেও কোন কোন প্রার্থী একটি ভোটও পায়নি, যা নিয়ে সাধারণ মানুষ হাসাহাসি করছে। এক্ষেত্রে শূন্য ভোট ও এক ভোট পাওয়া প্রার্থীরা সইতে পারছে না যাতনা ও ভোটারদের মাঝে মোটা অংকের টাকা বিতরণের বেদনা। অবশ্যই ইতিমধ্যে কিছু কিছু প্রার্থী ভোটারদের মাঝে দেয়া টাকা উদ্ধারে তৎপর হয়েছে। কোন কোন প্রার্থী বিতরণকৃত টাকাও পুনঃ উদ্ধার করে নজির স্থাপন হয়েছে।

এক ভোট পাওয়া প্রার্থীদের মনের ক্ষোভ ও দুঃখ হচ্ছে, মনোনয়ন পত্র দাখিল করতে গিয়ে প্রস্তাব ও সমর্থনকারী ম্যানেজ করতে হয়েছে অর্থের বিনিময়ে। ওই দুইজন ভোট দিলেও মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম। এখন ওই ২ জনের কাছ থেকেও টাকা উদ্ধার করা যাচ্ছে না। দুইজনই বলছে ভোট দিয়েছে, কিন্তু ভোট পেলাম একটি। বাকী একজনের ভোট গেল কোথায়? আবার এ নির্বাচনে যেসব প্রার্থী একটি ভোটও পায়নি, সেসব প্রার্থী বলতে শোনা গেছে, প্রস্তাব ও সমর্থনকারীরা কেউ ভোট দেয়নি। সে ক্ষেত্রে তারা চরম বাটপারী করেছে। যেখানে প্রস্তাব ও সমর্থনকারী ভোট পায়নি, সেখানে অন্য ভোটারদের ভোট পাব কি করে! তবে যে পরিমাণ টাকা ভোটারদের মাঝে বিতরণ করেছি, তার হিসাব কোনভাবে মিলাতে পারছি না।

প্রসঙ্গক্রমে নাছির উদ্দিন হুজ্জার গল্পটি অবতারণা না করলে হয় না। এক সময় নাছির উদ্দিন হুজ্জা বাজার থেকে একসের গরুর মাংস ক্রয় করে বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে বলেন, অনেকদিন গরুর মাংস খেতে পারি নাই, তাই মাংসগুলো ভাল করে রান্না করবে। দুপুরে গরুর মাংস দিয়ে ভাত খাব। হুজ্জার স্ত্রী মাংস রান্না করার পর প্রতিবেশী মহিলারা এসে ভাবী কি রান্না করেছ? খুব ঘ্রাণ বের হচ্ছে। বাড়িতে উপস্থিত বেশিরভাগ মহিলা কয়েক টুকরা করে মাংস খেয়ে স্বাদ নির্ধারণ করতে গিয়ে সব মাংস শেষ। পরে স্বামী হুজ্জা ভাত খেতে বসলে, স্ত্রী মাংস দিতে ব্যর্থ হয়। এ সময় হুজ্জা জানতে চাইল মাংস কোথায়? স্ত্রী জবাব দিলেন, সব মাংস বাড়ির পোষা কালো বিড়াল খেয়ে ফেলেছে। এমন কথা শোনে নাছির উদ্দিন হুজ্জা রাগান্বিত হয়ে বাড়ির কালো বিড়ালটি তল্লাসী করতে লাগল। ভাগ্য ভালো বিড়ালটি পেয়ে গেল, পরে বিড়ালটি ধরে পাল্লায় তুলে ওজন করার পর দেখা গেল ওই বিড়ালের ওজন একসের। তখন দুঃখ ও ক্ষোভে নাছির উদ্দিন হুজ্জা স্ত্রীকে বলল, যদি বিড়াল একসের মাংস খায়, তাহলে ধরলাম পুরোটায় গরুর মাংস। আর বিড়ালের ওজন যদি একসের হয়, তাহলে গরুর মাংস কোথায়? সদ্য সমাপ্ত জেলা পরিষদ নির্বাচন এক ভোট ও শূন্য ভোট পাওয়া প্রার্থীদের অবস্থায় অনেকটা নাছির উদ্দিন হুজ্জা গরুর মাংসের গল্পের মতই।

অপরদিকে আমজনতার বক্তব্য, এবারের জেলা পরিষদের নির্বাচন ছিল বিশেষ করে সদস্য পদে “ভোট বিক্রির হাট”। জনপ্রতিনিধিরা ইচ্ছা মত ভোট বিক্রি করে গত ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনের বিনিয়োগকৃত পুঁজি পুনঃ উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে? জনপ্রতিনিধিরা সব কয়জন সদস্য প্রার্থীর কাছ থেকে সমানে টাকা নিয়েছে। স্থানীয় সরকার পরিষদের তৃণমূলের জনপ্রতিনিধিদের অভিমত, তারা কোন প্রার্থীর কাছ থেকে দরদাম করে টাকা গ্রহণ করেনি, প্রার্থীরা জোর করে টাকা দিয়েছে। টাকা না নিলে সন্দেহ করেছে আমরা ওই প্রার্থীকে ভোট দেব না। তাই ইচ্ছার বিরুদ্ধে টাকা নিতে হয়েছে। এখন যেসব প্রার্থী এক ভোটও পায়নি, তাদেরকে আমরা কোনভাবেই সান্ত্বনা দিতে পারছি না। কোন কোন ক্ষেত্রে বিবেকবান ভোটারেরা টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছে। আবার অনেকে বলছে, আমরা খুঁজে টাকা গ্রহণ করেনি, টাকা ফেরৎ দেব কেন?

প্রবীণ এক রসিক ব্যক্তির অভিমত, ভিক্ষুককে ভিক্ষা দেয়া, আর ধোপাকে কাপড় দেয়া এক জিনিস নয়। ভিক্ষুককে ভিক্ষা দিলে তা ফিরিয়ে নেয়া যায় না। কিন্তু ধোপাকে কাপড় দিলে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে কাপড় ফিরিয়ে নেয়া যায়। তাই যেসব বাটপার ভোটার ভোট দেয়নি, তাদেরকে উপযুক্ত শিক্ষা দিয়ে টাকা আদায় করা যুক্তিসঙ্গত।

আগামী ইউপি নির্বাচনে ভোট বিক্রির দায়ে চিহ্নিত ব্যক্তিরা আমজনতার কাছে ভোট চাইতে গেলে, কেউ কি তাদেরকে মাগনা ভোট দেবে! তখন সাধারণ ভোটারেরা অনায়সে বলবে, আমাদের দেয়া রায় বিক্রি করে যেসসব জনপ্রতিনিধি টাকা কামায় করেছে, তাদেরকে মাগনা মত্ত ভোট দেয়ার প্রশ্নই আসে না।

মূলকথা, এবারের জেলা পরিষদ নির্বাচনে যেসব ভোটার টাকার বিনিময়ে ভোট বিক্রি করেছে, তারাও জনপ্রতিনিধি। এ নির্বাচনে অঢেল কালো টাকা বিলিয়ে এসব জনপ্রতিনিধিদের চরিত্র ধ্বংস করেছে। যে বাঘ নর মাংসের স্বাদ পেয়েছে, সে বাঘ অন্য কিছু খায় না। এবারের নির্বাচনে যেসব জনপ্রতিনিধি প্রতিজন প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছে, তারা সাধারণ পাবলিকের কাছ থেকে জন্ম নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদপত্র, জাতীয় সনদপত্র প্রদান করার সময় টাকা আদায় করতে দ্বিধাবোধ করবে না। গ্রামের এক আঁধা পাগল বাঁশের সাকু পার হচ্ছিল। এমন সময় অপর এক ব্যক্তি সাকুতে উঠার পর ওই পাগলকে বলে বসল, পাগল সাকু নাড়িছ না, আমরা সাকু পার হতে পারব না। এমন সময় পাগলা পাল্টা বলে বসলে, আমার যা স্মরণ ছিল না তা মনে করে দিয়ে ভাল করেছ। তোমরা কিভাবে সাকু পার হও আমি দেখব।

 

পাঠকের মতামত: