চকরিয়া প্রতিনিধি :::
বর্তমান পদ্ধতিতে যেখানে এক একরে ১০০-১২০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন হয় সেখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করলে একর প্রতি সাড়ে ৩ হাজার কেজির বেশি চিংড়ি উৎপাদন করা সম্ভব। কক্সবাজারের খুরুস্কুলে একটি পাইলট প্রকল্পে সফলতার পর এবার দেশের বৃহত্তম মৎস্য প্রজেক্ট এরিয়া চকরিয়ার চিংড়ি জোন খ্যাত রামপুর চিংড়ি জোনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নিরাপদ চিংড়ি চাষের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে পরিদর্শনে এসেছে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদল। গতকাল শনিবার রামপুরের রামপুরের ১০ একর, ১১ একর প্রকল্প ও মৎস্য অধিদপ্তরের প্রদর্শনী চিংড়ি খামারসহ বিভিন্ন প্রজেক্ট পরিদর্শন করেন। ন্যাশনাল স্যানিটেশন ফাউন্ডেশন ও ইন্টারন্যাশনাল ফুড প্লানিং রিসার্স ইনস্টিটিউশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. ক্রেইগ এ মেইজনার এ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। তাদের সাথে ছিলেন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্ট এসোসিয়েশনের সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান, বর্তমান সেক্রেটারি জেনারেল এস এম মোরশেদ জাফর, পরিচালক ও দৌদুল কুমার দত্ত, ১১ একর চিংড়ি চাষ প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুরুল আকবর, ১০ একর চিংড়ি চাষ প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমূখ।
শুধু বেশি চিংড়ি উৎপাদন নয় পাশাপাশি প্রকল্প পাড়ে সবজি বিপ্লব করাও সম্ভব বলে মনে করেন ঘের মালিকরা। এরকম একটি প্রদর্শনী খামার রামপুর ১০ একর প্রকল্পের ৩ নং ফোল্ডারের ৬১ প্লটের একটি চিংড়ি খামারে গিয়ে দেখা যায়, খামারের চারপাশের বেড়িবাঁধে ঢেড়শ, বেগুন, শসা, করলাসহ বিভিন্ন প্রকার সবজি ফলানো হয়েছে। লবণাক্তের মধ্যে এসব সবজি কিভাবে চাষ হয় জানতে চাইলে সেখানকার কর্মচারী আবদুল গফুর জানান, গভীর টিউবঅয়েল বসিয়ে অথবা শুধুমাত্র বৃষ্টির পানিতেই এসব সবজি চাষ করা সম্ভব। সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করলে লবণের কোন প্রভাব সবজি চাষে পড়বেনা বলে তিনি জানান। একটি ১০ একর প্রকল্প পাড়ে সবজি চাষ করলে লাখ টাকার সবজি উৎপাদন হবে বলে মনে করেন তিনি। এভাবে প্রতিটি প্রজেক্টে সবজি চাষ করা হলে মৎস্য বিপ্লবের পাশাপাশি সবজি বিপ্লব হতেও বেশি সময় লাগবেনা বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্ট এসোসিয়েশনের সেক্রেটারি জেনারেল এসএম মোরশেদ জাফর বলেন, কক্সবাজারের খুরুস্কুল এলাকায় ‘পাইলট প্রজেক্ট অন এওয়ারনেস অব সাইন্টেফিক শ্রিম্প ফার্মিং’ প্রকল্পের সফলতার পর আন্তর্জাতিক অর্গনাইজেশনকে দেশের বৃহত্তম ঘের এরিয়া রামপুর চিংড়ি জোনে সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য আহবান জানিয়েছে হিমায়িত মৎস্য রপ্তানিকারকদের চেম্বার অব কমার্স ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্ট এসোসিয়েশন বাংলাদেশ। এরই প্রেক্ষিতে তারা ভিজিট করতে এসেছে। তিনি বলেন, সাধারণ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করলে একর প্রতি যেখানে ১০০ কেজি চিংড়ি উৎপাদন হয় সেখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি একরে সাড়ে ৩ টন অর্থাৎ ৩ হাজার ৫ শত কেজি চিংড়ি মাছ উৎপাদন হবে। আর সেটা দেশের বৃহত্তম চিংড়ি জোনে চালু করতে পারলে শুধু চকরিয়ার উৎপাদিত চিংড়ি দিয়েই দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করে দেশের বাজেট পরিমাণ রাজস্ব আয় সম্ভব। তিনি জানান, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলতে মাছের সুষম খাদ্য, বায়ো সিকিউরিটি, পানিতে অক্সিজেন মিশ্রণ ও পরিমিত লবণাক্ততা নিশ্চিতকরণকে বুঝায়।
প্রতিনিধি দলের প্রধান মি. ক্রেইগ এ মেইজনার জানান, রামপুরের প্রজেক্টগুলোতে কোনপ্রকার সাইন্টেফিক পদ্ধতি নেই। স্বাভাবিক পদ্ধতিতেই চাষ হয়। আর তাই খুব কম চিৎড়ি উৎপাদন হয়। ঘেরগুলোর ক্যানেল, বেড়িবাঁধ, ওয়াটার লেবেল ঠিক করে এখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে বাংলাদেশকে আর পিছনে ফিরে থাকাতে হবে না। এ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারের পূর্ণ সহায়তা এবং পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সাপোর্ট দরকার হবে বলে মনে করেন তিনি।
পাঠকের মতামত: