ঢাকা,মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর ২০২৪

‘বাঁশি কেড়ে নেওয়া যায়, কিন্তু সুর কেড়ে নেওয়া যায় না’

m.r-mahmod,, :::: এম.আর মাহমুদ ::::

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মনোনয়ন বাণিজ্যিক অভিযোগ ছাড়া কোন কথাই বাজারে শোনা যাচ্ছে না। শাসক দলের মনোনয়ন যারা পেয়েছেন, তারা মনে করছেন হযরত নূহ (আঃ) এর কিস্তি উঠেছে। যত বড় প্রলয়ই হোক পানিতে ডুবে মরার সম্ভাবনা নেই। আর মনোনয়ন বঞ্চিতরা কুপোকাত হতে নারাজ। তাদের বক্তব্য বাঁশি কেড়ে নেওয়া গেলেও সুর কেড়ে নেয়া যাবে না। পাবলিক ভোট দিতে পারলে হিসাবটা অন্য রকমেরই হবে। এক সময় ইউনিয়ন পরিষদের ভোট ছিল উৎসব। এখন আর উৎসব নেই। ইতিমধ্যে দুই দফা নির্বাচনে ৩২ জন বনি আদম প্রাণ হারিয়েছে। অসংখ্য মানুষ আহত হয়ে হাসপাতালে কাতরাচ্ছে। ভোট আসলে গ্রামের সাধারণ ভোটারদের কি পরিমাণ কদর বাড়ত তা বলাই মুশকিল। এখন কিন্তু সে অবস্থা নেই। শাসক দলের প্রতীক যারা পেয়েছে তারা বলছে মনোনয়ন নিতে গিয়ে তাদের সর্বস্বই হারাতে হয়েছে। উপজেলা থেকে জেলা, জেলা থেকে কেন্দ্রে সব জায়গাতে খাদেমদের নজরানা দিতে হয়েছে। এখন ভোটারদের দেওয়ার মত তৌফিক তাদের নেই।

জীবনের মূল্যবান সময়টুকু দলের সাথে যুক্ত থেকে নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও জনসেবাসহ দলের তৃণমূলে কাজ করেও এখন টাকা দিতে না পারায় মনোনয়ন জুটেনি দলের বহু ত্যাগী ও পরিচ্ছন্ন নেতাকর্মীদের। ফলে তারা হতাশায় ভুগছে। আবার অনেকে দলের মনোনয়ন না পেলেও দল থেকে বহিষ্কারের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছে। শাসকদলের অনেক দায়িত্বশীল নেতার অভিমত, মাঠ পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মতামত নিয়ে ক্লিন ইমেজের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেয়া হচ্ছে। এখন দল ক্ষমতায়, তাই বেশি সংখ্যক প্রার্থী মনোনয়নের আশায় ভিড় জমাচ্ছে। ছোট কিস্তিতে সব প্রার্থীকে জায়গা দেওয়া কষ্টকর। তাই মনোনয়ন বঞ্চিতরা বাজারে বাস্তবতা বিবর্জিত ও অসংলগ্ন কথাবার্তা বলে বেড়াচ্ছে যা দলের জন্য ক্ষতি হচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীল এক নেতা দুঃখ করে বলেন, মেজবানে মাংস বঞ্চিত কুকুরগুলো ঘেউ ঘেউ করে থাকে। যা শোনে লাভ কি? পাশাপাশি ধানের শীষ নিয়ে প্রার্থী হতে বিএনপি’র অনেক নেতাকর্মী আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে বিএনপি’র নেতাদের অভিমত দল ক্ষমতাহীন শাসক দলের নেতাকর্মীদের হুমকি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ঝামেলা এড়াতে দলের যোগ্য অনেক নেতা-কর্মী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে আগ্রহী হচ্ছে না। প্রবীণদের অভিমত, লাঠি, লাথি ও গণতন্ত্র এক সাথে চলে না। ১৯৭০ সালে এসএসসি পরীক্ষায় যারা অংশ নিয়েছিল, তারাই পাশ করেছিল। অনেকেই বিদ্রুপ করে একথা বলে থাকে। আল্লাহই জানে, জাতি কি ১৯৭০ এর এসএসসি পরীক্ষার মত একটি ইউপি নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে? গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে সাধারণ ভোটারেরা নির্বাচনের প্রতি আস্থা হারিয়েছে। সে আস্থা কি কোনদিন ফিরে আসবে? যারা জীবনে প্রথম ভোট প্রয়োগ করবে তারা যদি ভোট কেন্দ্রে গিয়ে সবক’টি ব্যালট না পায়, নতুন ভোটারদের কাছে কি বার্তা যাবে? আগেও নির্বাচনে কারচুপি হয়নি এমন কথা কেউ বলতে পারবে না। সে সময়ও জাল ভোট ছিল। কিন্তু নির্বাচন পরিচালনা কর্মকর্তাদের সামনে ব্যালট কেড়ে নিয়ে প্রকাশ্যে সীল মেরে বাক্স ভর্তি করতে দেখা যেত না। ভোটারদের প্রত্যাশা শান্তিপূর্ণ ভোট হবে। কিন্তু শাসক দলের কিছু অতি উৎসাহী নেতা কর্মীর আস্ফালনে সাধারণ ভোটারেরা শংকিত হয়ে পড়ছে। তাদের ভাষায় গ্রীষ্মকালে দীর্ঘক্ষণ কষ্ট করে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেয়ার দরকার কি? হঠাৎ করে দলীয় প্রতীকে ইউপি নির্বাচন নাজিল হওয়ায় পাড়ায় পাড়ায় বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে। দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ভেদাভেদ সৃষ্টি হচ্ছে। যা এক সময় দলের জন্য বুমেরাং হওয়ার আশংকা উড়িয়ে দেয়া যায় না। কথায় আছে ঘঁষামাজা করে রূপ চর্চা করা যায় না। ধরে-বেঁধে সংসার হয় না। দলীয় সিদ্ধান্তে ভুলের কারণে খারাপ প্রকৃতির লোকজন জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হলে তার দায় নিতে হবে দলকে। তেঁতুল যতই পুরানো হোক মিষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। গ্রামের লোকজন এখনও ‘ঘি’ বলে ছাগল তাড়ায়। বর্তমানে বাজারে ‘ঘি’ যে ভেজাল হয়েছে তা ছাগল জানে না। জানলে হয়তো ছাগলও খাবার না খেয়ে ক্ষেত থেকে পালাতো না। দলের মনোনয়ন বাণিজ্যের কারণে এক সময় দলে ত্যাগী ও যোগ্য নেতারা ছাগলের মত পালাতে বাধ্য হবে। দুর্দিনে দলের সুবিধাভোগীদের খুঁজে পাওয়া কষ্টকর হবে। কারণ যে নদী গতি হারায়, সে নদীতে কচুরিপানা গজায়। অতি উল্লাস ও দাপট শাসক দলের জন্য ভাল লক্ষণ নয়। এতে সাধারণ মানুষের মনে রেখাপাত করে। যে দেশে চোরকে চোর বলা যায় না, ভোট ডাকাতকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে সম্মান করতে হয়। সে দেশে ভাল প্রতিনিধি নির্বাচিত হবে কেন? এদিকে কক্সবাজার জেলার আলোচিত চকরিয়ার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের মানুষ স্বৈরশাসক ও বিশ্ব বেহায়া উপাধী পাওয়া এরশাদ জমানা থেকে বিগত ৮ম ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে পারেনি। হয় ভোটের দিন সকাল দশটার মধ্যেই ভোট ডাকাতি করে নির্বাচন শেষ করা হয়েছে, না হয় কেন্দ্র দখল করে প্রকাশ্যে ব্যালটে সিল মেরে বাক্সভর্তি করে জনরায় কেড়ে নিয়ে নিজেই স্বঘোষিত চেয়ারম্যান পদটি বাগিয়ে নিয়েছে। এর পরও তাদের দাপটের কাছে অসহায় মানুষ ওইসব ভোট ডাকাতদের জনপ্রতিনিধি হিসেবে মেনে নিয়ে কুর্নিশ (নমষ্কার)। করতে হয়েছে। মদন নগরের একটি গল্প বলে লেখাটি ইতি টানতে চাচ্ছি। দেশের নাম মদন নগর যেখানে গাঁধা ও ঘোড়ার একই দর। স্বর্ণ ও রূপার মূল্য সেখানে সমান হয়। চোর চুরি করতে গিয়ে মালিকের ঘুম ভেঙ্গে গেলে বাড়ি মালিকের ফাঁসি হয়। অতএব, মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন।

এম আর মাহমুদ, মোবাইল-০১৮১২৮০২৭২৭ ও ০১৭১২৮০২৭২৭।

 

পাঠকের মতামত: